English | Bangla
সঠিকভাবে তামাকের উপর কর আরোপ করে ১০০ বিলিয়ন রাজস্ব বৃদ্ধি ২.০১ মিলিয়ন অকাল মৃত্যু কমিয়ে আনা সম্ভব
বাংলাদেশে তামাকের উপর বর্তমান শুল্ক কাঠামো জটিল ও স্তরভিত্তিক। এই শুল্ককাঠামো সহজ করে একটি শক্তিশালী তামাক শুল্কনীতি প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরী। বিদ্যমান তামাকের কর ব্যাবস্থাকে যদি জনস্বাস্থ্য ও তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যরত সংগঠনগুলোর সুপারিশের আলোকে সংশোধন করা হয়। তবে প্রায় ৬.৪২ মিলিয়ন বর্তমান প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ীদের ধূমপান ছাড়তে উৎসাহিত করবে, দীর্ঘমেয়াদে বর্তমান ধূমপায়ীদের মধ্যে অকালমৃত্যু ২.০১ মিলিয়ন এ কমিয়ে আনবে, অতিরিক্ত রাজস্ব ৭৫ থেকে ১০০ বিলিয়ন পর্যন্ত টাকা বৃদ্ধি পাবে। ২৮ মে, ২০১৮ জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে  “তামাকজনিত রোগ ও মৃত্যু কমাতে কঠোর করনীতি প্রনয়ণে জনপ্রতিনিধিদের নিকট আহবান” শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি প্রস্তাবনায় বক্তারা এ দাবী করেন।
 
ব্যুরো অব ইকোনোমিক রিসার্চ-ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি, বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশন, ডক্টর’স ফর হেলথ এন্ড এনভায়রনমেন্ট, তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ), বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে “তামাকজনিত রোগ ও মৃত্যু কমাতে কঠোর করনীতি প্রনয়ণে জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান” শীর্ষক একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। 
 
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আবু নাসের খান, চেয়ারম্যান, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), অধ্যাপক গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, প্রকল্প পরিচালক, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি, ড. রুমানা হক, ফোকাল পার্সন, ব্যুরো অফ ইকোনোমিক রিসার্চ-ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়,  সাইফুদ্দিন আহমেদ, সমন্বয়কারী, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, ফরিদা আখতার, আহব্বায়ক, তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ), ডা. হেনা খাতুন, সদস্য সচিব, বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশন, এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম, কারিগরি পরামর্শক, দি ইউনিয়ন, অধ্যাপক ওবায়াদুল্লাহ বাকী, সভাপতি বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফাহমিদা ইসলাম, প্রকল্প কর্মকর্তা ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট।
 
আবু নাসের খান বলেন, তামাক ব্যবহারকে মাদক গ্রহনের প্রবেশদ্বার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আমরা যখন আমাদের  দেশে মাদক আর তামাকমুক্ত সমাজের স্বপ্ন দেখছি, তখন তামাক কোম্পানিগুলোর মূল্য লক্ষ্য তরুণ ও কিশোরদের তাদের পণ্য ব্যবহারে উৎসাহী করা। আমাদের জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদগনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা তামাক বিরোধী কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, নাকি তরুণদের তামাক ব্যবহারে উৎসাহী করতে তামাক কোম্পানিগুলোকে সুযোগ করে দিবে? 
 
ড.রুমানা হক বলেন, দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি বা এর উপর কর বৃদ্ধির প্রসঙ্গ এলেই তামাক কোম্পানীগুলো নানা ধরনের কৌশল অবলম্বন করে। যার অন্যতম উদ্দেশ্য তামাকের উপর কর বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্ব ব্যাংকের  গবেষণায় দেখা যায়, গড়ে ১০% মূল্য বৃদ্ধিতে উচ্চ ও নি¤œআয়ের দেশসমূহে ধূমপায়ী এবং ধূমপানজনিত মৃত্যু উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায়। ধোঁয়াযুক্ত তামাকজাত দ্রব্যের পাশাপাশি ধোঁয়াবিহিন তামাকের মূল্যবৃদ্ধিতেও উদ্যোগ গ্রহণ জরুরী। 
 
ফরিদা আখতার বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো শুধু আমাদের যুব সমাজের জন্যই হুমকি স্বরুপ নয়, তাদের কার্যক্রম আমাদের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণের অঙ্গীকারকে চ্যালেঞ্জ করছে। বাংলাদেশ সরকার ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করতে তামাকের বর্তমান শুল্ক কাঠামো সহজ করে একটি শক্তিশালী তামাক শুল্ক নীতি গ্রহণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তামাক কোম্পানিগুলোর দাবি অনুসারে কর বৃদ্ধির উদার নীতি বা নমনীয়নীতি গ্রহণ করে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়।
 
সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো যখন রাজস্বের যুক্তি দিয়ে কর বৃদ্ধির বিরোধীতা করছে, ঠিক তখন বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগের কারনে (হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়বেটিস) মৃত্যু ৬৭% এ এসে দাড়িয়েছে। ২০১০ সালে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় দেখা যায়, ৯৮.৭% জনগনের মধ্যে অন্তত একটি অসংক্রামক রোগের (হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়বেটিস) ঝুঁকি,৭৭.৪% জনগনের এর মধ্যে অন্তত দুটি ঝুঁকি এবং ২৮.৩% জনগনের এর মধ্যে অন্তত তিনটি ঝুঁকি রয়েছে। 
 
এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, তামাক হতে বিপুল পরিমানে রাজস্ব আসে এই যুক্তি দিয়ে তামাক কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরে তামাকজাত দ্রব্যের কর বৃদ্ধির বিরোধীতা করে আসছে। বাংলাদেশে এখনও স্বল্পমূল্যে তামাক পাওয়া যায়। প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্যের মূল্য বাড়লেও সে অনুপাতে বাড়েনি তামাকজাত দ্রব্যের দাম। বাংলাদেশে এখনো পৃথিবীর সবচেয়ে কম মূল্যে চর্বণযোগ্য তামাক পাওয়া যায়। 
 
তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রস্তাবনায় বক্তারা সিগারেটের ক্ষেত্রে: নিম্নস্তরের দেশীয় এবং বহুজাতিক ব্র্যান্ডের সিগারেটের ভিন্ন কর ব্যবস্থা তুলে নেওয়া,উচ্চ এবং মধ্যম স্তর একত্রিত করা, নিম্নস্তরের সিগারেটের সর্বনিম্ন দাম প্রতি ১০ শলাকার সিগারেটের প্যাকেটের জন্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করা, নিম্নস্তরে এড-ভেলোরেম কর ৬০% এ বৃদ্ধি করা,  উচ্চস্তরের সিগারেটের সর্বনিম্ন দাম প্রতি ১০ শলাকার সিগারেটের প্যাকেটের জন্য ১০০ টাকা নির্ধারণ করা, উচ্চস্তরে এড-ভেলোরেম কর ৬৫% এ বহাল রাখা (যেটি বর্তমানে মধ্যম স্তরের ব্র্যান্ডে বৃদ্ধি হয়েছে), প্রতি দশ শলাকায় সিগারেটের প্যাকেটে ৫ টাকা হারে নির্দিষ্ট (স্পেসিফিক) কর আরোপ করা। বিড়ির ক্ষেত্রে: ফিল্টারড এবং নন-ফিল্টারড বিড়ির মধ্যকার পার্থক্য বাদ দেওয়া, প্রতি ২৫ শলাকার বিড়ির প্যাকেটের দাম সর্বনিম্ন ৩০ টাকা নির্ধারন করা,এড-ভেলোরেম কর ৪৫% এ বৃদ্ধি করা, প্রতি ২৫ শলাকার প্যাকেটে ৬ টাকা হারে নির্দিষ্ট (স্পেসিফিক) কর আরোপ করা। ধোঁয়াবিহীন তামাকের ক্ষেত্রে: কর এর ভিত্তি পরিবর্তন করে খুচরা মূল্যে নির্ধারণ করা, সর্বনি¤œ প্রতি ২০ গ্রাম এর জন্য ৫০ টাকা খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা, এড-ভেলোরেম কর ৪৫% এ বৃদ্ধি করা, প্রতি ২০ গ্রাম এর জন্য ১০ টাকা হারে নির্দিষ্ট (স্পেসিফিক) কর আরোপ করা। উল্লেখ যে বিদ্যমান আইন অনুসারে ১৫% ভ্যাট এবং ১ % হেলথ ডেভলাপমেন্ট সারচার্জ সকল তামাকজাত পণ্যের উপর বলবৎ থাকবে।