তামাক কোম্পানীগুলো মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে প্রণীত নীতিসমুহ প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে থাকে। তামাক নিয়ন্ত্রণ ও তামাক কোম্পানিসমূহের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন ছাড়া তামাক কোম্পানির সাথে পক্ষপাতমূলক আচরণ ও সবরকম যোগাযোগ এড়িয়ে চলতে হবে। যদি আলোচনার প্রয়োজন হয় তবে তার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাক মুক্ত করতে তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সকল নীতি সুরক্ষায় আর্টিকেল ৫.৩ বাস্তবায়ন জরুরী।
১৪ এপ্রিল ২০১৮ সকাল সাড়ে ১০টায় বিএমএ মিলায়তনে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের যৌথ উদ্যোগে “তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সকল নীতি সুরক্ষায় এফসিটিসির আর্টিকেল ৫.৩ বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা” শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তরা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
আলোচনা সভায় জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল’র সমন্বয়কারী খায়রুল আলম সেখ এর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এর কান্ট্রি এডভাইজার শফিকুল ইসলাম, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. অরুনা বিশ্বাস, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট’র নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ, এইড ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বকুল প্রমূখ। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দ্যা ইউনিয়ন এর কারিগরি উপদেষ্টা এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম ও সঞ্চালনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট’র কর্মসূচি ব্যবস্থাপক সৈয়দা অনন্যা রহমান।
প্রবন্ধে এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর তামাকজাত পন্যর প্রসারে কোম্পানীগুলো সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পৃষ্ঠপোষকতা আড়ালে নানা ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ ও মানুষকে বিভ্রান্ত করার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে। এ সকল কোম্পানিগুলোকে সহযোগিতা প্রদান থেকে বিরত থাকতে হবে। এফসিটিসি আর্টিকেল ৫.৩-তে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে তামাক কোম্পানির প্রভাবমুক্ত রাখার বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সম্পর্কে জনগণ এবং সরকারের সকল শাখায় কর্মরতদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তামাক কোম্পানীর পৃষ্ঠপোষকতায় তামাক নিয়ন্ত্রনে উদ্যোগ গ্রহন, সে¦চ্ছাসেবকদের আচরন বিধি প্রনয়ণ, নীতিমালা তৈরি ও বাস্তবায়নে তামাক কোম্পানির সঙ্গে সব ধরনের অংশীদারিত্বমূলক ও অপ্রয়োগযোগ্য কার্যকলাপ বর্জন করতে হবে।
খায়রুল আলম সেখ বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে সফলতা অর্জনে তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। সারাদেশব্যাপী টাস্কফোর্সগুলোকে তামাক নিয়ন্ত্রণে আরো সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে তামাক মুক্ত করা সম্ভব। তামাক নিয়ন্ত্রনের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা তামাক কোম্পানী। আইন ভঙ্গ করে তাদের আগ্রাসনী প্রচারনা তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে বাধাগ্রাস্থ করে। তামাক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য বাস্তবায়ন ও ধারাবাহিক সাফল্য ধরে রাখার জন্য তামাক কোম্পানীগুলোকে কঠোর নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
শফিকুল ইসলাম বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তামাক কোম্পানী পাহাড়ী এলাকাগুলোতে তামাক চাষ বিস্তৃণ করছে। এটি পরিবেশের জন্য হুমকি সরূপ। বন বিভাগকে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় পাহাড়ী এলাকায় তামাক চাষ বন্ধে কাজ করতে হবে।
অরুনা বিশ্বাস বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় খুবই আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সংগঠনের সাথে মিলে শিক্ষার্থীদের তামাকের কুফল সর্ম্পকে সচেতন করতে কাজ করে যাচ্ছে।
আমিনুল ইসলাম বকুল বলেন, স্বার্থের সংঘর্ষ এড়াতে সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তামাক কোম্পানিকর্তৃক প্রদানকৃত তামাক উৎপাদন, বিক্রয়, রাজনৈতিক অনুদান, তদবির ইত্যাদি বিষয়ে সরকারকে তথ্য দেয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও সত্যতা নিশ্চিত করণে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তামাক কোম্পানির আয়োজিত “সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি” প্রমানের অপকৌশল ও অপচেষ্টাকে প্রতিহত ও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অন্যান্য তামাক কোম্পানিকে যেভাবে আইনগতভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তামাক কোম্পানিকেও একইভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
এছাড়াও আলোচনা সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট এর প্রতিনিধিবৃন্দ আলোচনা করেন। বেসরকারী সংগঠনের পক্ষে ঢাকা আহসানিয়া মিশন, উবিনীগ, সিটিএফকে, প্রজ্ঞা, টিসিআরসি, সুপ্র, বাঁচতে শিখ নারী, হীলসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।