English | Bangla
মানসম্মত শিক্ষার অর্থ পেশাজীবি তৈরি নাকি সুনাগরিক তৈরি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক শিক্ষা নিশ্চিতকরতে হবে

বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা পেশাজীবি তৈরিতে বেশি মনযোগী। অথচ শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো ভালো মানুষ তৈরি। অর্থাৎ দেশের জন্যে সুনাগরিক তৈরি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্য তথা ব্যবসায় প্রশাসনের মত বিষয়গুলোতে পড়ার জন্য বেশি উৎসাহিত করছে। ফলে তারা ভালো পেশাজীবি হচ্ছে কিন্তু মানবিক গুণাবলি অর্জন করতে পারছে না। মানসম্মত শিক্ষার অর্থ পেশাজীবি তৈরি নয়, সুনাগরিক তৈরি। সুনাগরিক তৈরি লক্ষ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। আজ ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭, সকাল ১১ টায় ওয়ার্ক ফর এ  বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট ও আইডাব্লিউবি এর যৌথ আয়োজনে  ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের কৈবর্ত সভাকক্ষে ‘এসডিজি’র গোল ৪: শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈচিত্র্যের গুরুত্ব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ দাবী করেন।
 
ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারীর সভাপত্বিতে  আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন হেলথব্রিজ কানাডা এর আঞ্চলিক পরিচালক দেবরা ইফরইমসন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্ন্তজাতিক সর্ম্পক বিভাগের অধ্যাপক আমেনা মহসিন,  আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আহসান হাবীব, হাবীবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সমাজ কল্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইয়াসমিন সুলতানা, বিস্ক্যান সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব।  
 
গাউস পিয়ারী বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল “২০৩০ এজেন্ডা” গৃহীত হয়। সারা বিশ্বের মানুষের শান্তি, সমৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে এটি এমন একটি কর্ম-পরিকল্পনা। যা বিশ্ব শান্তি জোরদার করবে এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যসহ সকল প্রকার বৈষম্যের অবসান ঘটাবে। সমাজের পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠী যেমন নারী, ছিন্নমূল শিশু, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের অন্তর্ভূক্তিমূলক ও সমন্বিত শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত না করা হলে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র অত্যন্ত ভয়াবহ পরিণতির শিকার হবে । 
 
দেবরা ইফরইমসন বলেন,  শিক্ষা মানুষকে প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে সাহায্য করে। বর্তমানে শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থা ক্রমাগত বাণিজ্যিকীকরণের শিকার হওয়ায় এর মূল উদ্দেশ্য ব্যহত হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ সুনাগরিক তৈরির পরিবর্তে পেশাজীবি তৈরির দিকে বেশি মনোযোগী। মানসম্মত শিক্ষার অর্থ পেশাজীবি তৈরি নাকি সুনাগরিক তৈরি এটাই  বিবেচ্য বিষয়। 
আমেনা মহসিন বলেন, শিক্ষিত হবার অন্যতম মাধ্যম হল প্রশ্ন করার ক্ষমতা। তরুনদের প্রশ্ন করার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে এবং শিক্ষকদের প্রশ্নের উত্তর দেবার মানুসিকতা তৈরি থাকতে হবে। 
 
আহসান হাবীব বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিৎ সুনাগরিক তৈরি। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মকর্তা কর্মচারির দক্ষতা বৃদ্ধি ও তাদের উপযোগী কর্মী তৈরি করবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে।  জনগণের করের টাকা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মী তৈরির জন্যে নয়।
সালমা মাহবুব বলেন,  আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কতটা বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক তা নিয়ে অনেক মতপার্থক্য আছে। একটি শক্তিশালী  সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা তৈরিতে পেশাজীবি তৈরির মত শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তে সুনাগরিক তৈরির মত শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রকৌশল শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেও প্রবেশগম্যতার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোন ধারণা দেয়া হয় না। এতে এটাই বুঝা যায় যে, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা মোটেই বৈচিত্র্যপূর্ণ ও অন্তর্ভূক্তমূলক নয়। এ আলোচনা সভায় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন থেকে আগত ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, প্যালেস্টাইন ও বাংলাদেশের ছাত্রীরা তাদের নিজ নিজ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন।
ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, আগে মূল্যবোধ সম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা ছিল। বর্তমানের শিক্ষা ব্যবস্থা অনেকটা যান্ত্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা। বৈচিত্রময় ও অন্তভুক্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থাই  একজন মানুষকে পরিপূণ শিক্ষিত করে তুলতে পারে।
আলোচনা সভায় সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, প্রতিবন্ধী উন্নয়ন কর্মী, বিভিন্ন পেশাজীবিরা এতে অংশ গ্রহণ করেন।