একটি শিশু যে শহরে নিরাপদ, সে শহরে নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধীব্যক্তিসহ সকলে নিরাপদ। ঢাকায় শিশুরা নিরাপদে হাঁটতে পারে না। তাদের খেলাধূলার জন্য যথেষ্ট পার্ক ও খেলার মাঠ নেই। যে সকল পার্ক ও খেলার মাঠ আছে সেগুলোতে ৫-১০ বছর বয়সী শিশু-কিশোরবান্ধব কোন অবকাঠামো নেই। ঢাকা শহরের শিশুরা খেলাধূলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তারা শারীরিক চর্চা ও সামাজিকীকরণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে তারা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে বেড়ে উঠছে। একে অপরের প্রতি সহযোগিতার মানসিকতা তাদের তৈরি হচ্ছে না। তাদের যথাযথ শারিরীক ও মানসিক বিকাশ এর লক্ষ্যে পার্ক ও খেলার মাঠসমূহ সংরক্ষণ এবং এ সকল স্থানে শিশু-কিশোরসহ সকলের খেলার পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আজ ০১ মার্চ ২০১৮, সকাল ১১.০০ টায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর আয়োজনে প্রতিষ্ঠানের কৈবর্ত সভাকক্ষে আয়োজিত ‘শিশু-কিশোরবান্ধব পার্ক ও খেলার মাঠের গুরুত্ব’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন।
সেমিনারে মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. আকতার মাহমুদ, অধ্যাপক, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি বলেন, বাসার ড্রইং রুম যেমন বাসার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে তেমনি পার্ক, খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত স্থান একটি শহরের ড্রইং রুমের মত। ড্রইং রুম যেমন ছবির মতো গুছিয়ে রাখা হয়, তেমনিভাবে পার্ক ও খেলার মাঠও রক্ষণাবেক্ষণ করা প্রয়োজন। এজন্য এলাকাবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের পার্ক ও খেলার মাঠের জন্য সরকারের কাছে দাবি করতে হবে। প্রত্যেকে যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতনভাবে দায়িত্ব পালন করে, তবে পার্ক ও খেলার মাঠ অবৈধভাবে কেউ দখল বা ভরাট করতে পারবে না।
দেবরা ইফরইমসন, আঞ্চলিক পরিচালক, হেলথব্রিজ-কানাডা বলেন, শিশুরা খেলতে চায়। তাদের জন্য সে সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। তারা কি ধরণের খেলা খেলতে আগ্রহী এবং কি ধরণের উপকরণ দিয়ে তারা খেলতে চায় তাদের কাছ থেকে সে মতামত নিতে হবে। পরিকল্পনায় তাদের চাহিদার প্রতিফলন থাকতে হবে।
মারুফ হোসেন, প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট বলেন, শিশু- কিশোরদের চাহিদা ভিন্ন। পার্ক ও খেলার মাঠে শিশু-কিশোর-প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সকলের প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন এবং সকলের জন্য ব্যবহার উপযোগী উপকরণ থাকা প্রয়োজন। শিশু- কিশোরদের চাহিদার প্রতিফলন ঘটিয়ে পার্ক-খেলার মাঠ তৈরিতে আমরা সকলে একত্রে কাজ করবো।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, একটি ব্যবহার উপযোগী পার্ক বা খেলার মাঠ সমগ্র এলাকাবাসীকে উপকৃত করে। শিশুদের শারিরীক ও মানসিক বিকাশে পার্ক-খেলার মাঠ অপরিসীম ভূমিকা রাখে। সকলে সামাজিকীকরণ, শারীরিক চর্চার সুযোগ পায়। সকলের প্রবেশগম্যতা নিশ্চিতের পাশাপাশি এ সকল স্থানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। যাতে সকলে নির্বিঘেœ পার্ক ও খেলার মাঠে বেড়াতে যেতে পারে। পাশাপাশি অভিভাবকদের সন্তানকে খেলাধূলায় উৎসাহী করে তুরতে হবে।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজনীন কবীর, সহকারি প্রকল্প কর্মকর্তা তালুকদার রিফাত পাশা, রায়েরবাজার হাই স্কুলের সহকারি শিক্ষক তাহাজ্জুত ইসলাম, ধানমন্ডি কচিকন্ঠ হাই স্কুলের শিক্ষক মাধুরী দেবনাথসহ আরো অনেকে। সেমিনারে রায়ের বাজার হাই স্কুল, ধানমন্ডি কচিকন্ঠ হাই স্কুল, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল, আলিফ আইডিয়াল পাবলিক স্কুল এবং আলী হোসেন বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলো।