তামাকজাত দ্রব্যের কর বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় কোম্পানীর হস্তক্ষেপ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে
বাংলাদেশ ৪৩.৩% (৪১.৩ মিলিয়ন) প্রাপ্তবয়স্ক লোক তামাক ব্যবহার করে। তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে সকল প্রকার তামাকজাত দ্রব্যে অধিকহারে কর আরোপ করতে হবে। পাশাপাশি কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণে তামাকজাত দ্রব্যকে একক কর কাঠামোতে আনা প্রয়োজন। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএআরএস কনফারেন্স হলে দ্যা ইউনিয়নের সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যুরো অব ইকোনোমিক রির্সাচ (বিইআর) ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্টের আয়োজনে “বাংলাদেশে তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জ এবং করনীয়” শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যুরো অব ইকোনোমিক রির্সাচ এর পরিচালক প্রফেসর ড. শফিক উজ জামান এর সভাপত্বিতে সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী ড. এ এম পারভেজ রহিম, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ, ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এর কান্ট্রি এডভাইজার শফিকুল ইসলাম, ন্যাশনাল প্রফেসনাল অফিসার (টিসি এন্ড এনসিডি) বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ডা মাহফুজুল হক, তামাক বিরোধী নারী জোটের আহবায়ক ফরিদা আখতার। সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক, ড. রুমানা হক এবং দ্যা ইউনিয়ন এর কারিগরি উপদেষ্টা সৈয়দ মাহবুবুল আলম। সভা সঞ্চালনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট’র কর্মসূচি ব্যবস্থাপক সৈয়দা অনন্যা রহমান।
প্রফেসর ড. শফিক উজ জামান বলেন, শুধুমাত্র আইন প্রয়োগের মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে আসতে হবে সকলকে। এক্ষেত্রে জনসচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী সংস্থাগুলোও এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে।
সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে সর্বাধিক কার্যকর পদ্ধতি তামাকের মূল্য ও কর বৃদ্ধি। কিন্তু বাংলাদেশে তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির প্রক্রিয়াটি খুবই দূর্বল। তাছাড়া কোম্পানীর হস্তক্ষেপের কারণে তামাকজাত দ্রব্যের উপর আশানুরুপ কর বৃদ্ধি পাচ্ছে না। ফলে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
ড. এ এম পারভেজ রহিম বলেন, সরকার ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারী ও বেসরকারী সংগঠনগুলোর সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে এগিয়ে নেবার প্রচেষ্টা অব্যহত রয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি, তামাক চাষ নীতি এবং জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী প্রণয়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল আন্তঃ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করছে।
শফিকুল ইসলাম বলেন, পৃথিবীর যেসকল দেশের মধ্যে তামাক পণ্য সস্তা তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তামাক কোন মৌলিক প্রয়োজনীয় দ্রব্য নয় বরং স্বাস্থ্যহানীকর বিলাসবহুল পণ্য এবং এটি একটি বৈধ পণ্য যা তার ভোক্তার মৃত্যু ডেকে আনে। কাজেই এধরনের পণ্য ব্যবহারে নিরুৎসাহিতকরণ এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে এর উপর উচ্চ হারে কর আরোপ করা জরুরী।
ডা মাহফুজুল হক বলেন, উচ্চহারে করারোপ তামাকের ব্যবহার কমাতে কার্যকর একটি পদ্ধতি। বাংলাদেশে তামাকের উপর বর্তমান শুল্ক কাঠামো জটিল ও স্তর ভিত্তিক। বর্তমান এই শুল্ক কাঠামো সহজ করে একটি শক্তিশালী তামাক শুল্ক নীতি প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরী। পুরো কর ব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণ করা প্রয়োজন। কর আরোপের পাশাপাশি কর আদায়ের ক্ষেত্রেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি বা এর উপর কর বৃদ্ধির প্রসঙ্গ এলেই তামাক কোম্পানীগুলো নানাধরনের কৌশল অবলম্বন করে। কোম্পানীগুলোর কুটকৌশলের কারণে তামাকজাতদ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির প্রক্রিয়া নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে। স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশের যে সুনাম রয়েছে তা অক্ষুন্ন রাখতে হলে তামাক কোম্পানীর প্রতিবন্ধকতাগুলো অতিক্রমে উদ্যোগী হবে।
ড. রুমানা হক বলেন, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, তামাক কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী প্রচারণা এবং উদ্ধুদ্ধকরণ কার্যক্রমের প্রেক্ষিতে মানুষের মাঝে তামাক ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা দীর্ঘস্থায়ী তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য উৎকন্ঠার বিষয়। কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণে তামাকজাত দ্রব্যকে একক কর কাঠামোতে আনা প্রয়োজন। তামাকজাতদ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধির প্রক্রিয়া তামাক কোম্পানীর সকল প্রকার হস্তক্ষেপ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রন করতে হবে।
ফরিদা আক্তার বলেন, ধোঁয়াযুক্ত তামাকজাত দ্রব্যের পাশাপাশি ধোঁয়াবিহিন তামাকের মূল্যবৃদ্ধিতেও উদ্যোগ গ্রহণ জরুরী। তামাক চাষ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি সরূপ। তাই কৃষি জমিতে তামাক চাষ নিষিদ্ধ করতে হবে।
সেমিনারে প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন, এইড ফাউন্ডেশন, টিসিআরসি, সুপ্র, ইপসা, বিসিসিপি, আইআরডি বাংলাদেশ, বাঁচতে শিখ নারী, নবনীতা, প্রদেশ, ঢাকা সিভিল সার্জন কার্যালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ গালস গাইড এসোসিয়েশন এবং বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।