English | Bangla
নগর উন্নয়ন পরিকল্পনায় অংশীদারিত্ব ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান
আধুনিক নগর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গৃহায়ন, পরিবহন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও নগরশাসন প্রক্রিয়া অন্তর্ভূক্তিমূলক হওয়া জরুরি। উন্নয়ন প্রকল্পের প্রত্যেকটি ধাপে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের চিহ্নিত করে তাদের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করা হলে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে। নগরে গৃহায়ন সমস্যা সমাধানে জমি ব্যবহারের যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে সকলের জন্য বাসস্থান নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে কম খরচের গৃহ নির্মাণের উপর জোর না দিয়ে স্বল্প আয়ের মানুষের কথা বিবেচনায় নিতে হবে। পাশাপাশি নগর যাতায়াত ব্যবস্থায় ব্যক্তিগত গাড়িবান্ধব প্রকল্প (ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) থেকে বের হয়ে অযান্ত্রিকযান, পথচারীদের প্রাধান্য দেয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি নগরে যেকোন ধরনের দূর্যোগ মোকাবেলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। সর্বপরি এই সকল নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুষ্ঠু নগরশাসন নিশ্চিত করতে হবে। যেখানে জবাবদিহিতা থাকতে হবে।
 
দুই দিনব্যাপী (২৪ ও ২৫ শে নভেম্বর ২০১৭) আরবান থিংকার্স ক্যাম্পাস (ইউটিসি) উপলক্ষে আয়োজিত Road Map for Implementation of New Urban Agenda (NUA): Involvement of Multi-Stakeholders in Development Process অনুষ্ঠানের ২য় দিনের আলোচনায় বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।  
 
বুয়েটের আইটিএন সেন্টারে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে উন্নয়ন প্রকল্পে স্টেকহোল্ডার এনালাইসিস বিষয়ক প্রবন্ধে বুয়েটের অধ্যাপক ড. সারওয়ার জাহান বলেন, যে কোন প্রকল্পের জন্য স্টেকহোল্ডার এনালাইসিস করতে হবে। এক্ষেত্রে স্টেকহোল্ডার চিহ্নিত করণ, তাদের মূল্যায়ন এবং প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্টতা বিবেচনায় প্রাধান্য দিতে হবে। উন্নয়ন প্রকল্পের সফলতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীদারদের প্রকল্প সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা আবশ্যক। নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর এর পরিচালক ড. কে জেড এইচ তৌফিক বলেন, ২০৫০ সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন হবে শহরের। নিউ আরবান এজেন্ডার মূল ভিশন হল নগর হবে সকলের জন্য। এবং সেখানে প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী যেমন: নারী ও কিশোরীদের ক্ষমতায়ন প্রয়োজন। 
 
এলজিইডি এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (নগর ব্যবস্থাপনা) মো: শফিকুল ইসলাম আকন্দ বলেন, এলজিইডি মূলত প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করে। তৃণমূল পর্যায়ে উন্নয়নের জন্য পৌরসভাগুলোর সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে। বেলা’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পে এলাকাবাসীকে সম্পৃক্ত করতে হবে এবং প্রাকৃতিক সম্পদকে নষ্ট করে কোন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না। সোনাইমুরি পৌরসভার মেয়র মোতাহার হোসেন বলেন, নগরশাসন নিশ্চিত করতে হলে ভালো রাজনীতিবীদ দরকার। ৩২৯ টি পৌরসভা আছে। এদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ইউএনডিপি এর আরবান প্রোগ্রাম বিশেষজ্ঞ আশেকুর রহমান বলেন, আমাদের নগরে কোন ভিশন নেই। সর্ব প্রথম নগরের ভিশন ঠিক করতে হবে। নীতিমালা প্রণয়নে তৃণমল পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের প্রাধান্য দিতে হবে। 
 
ডিটিসিএ এর ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ার আনিসুর রহমান বলেন, এমআরটি ও বিআরটির সফল হওয়ার ক্ষেত্রে যেসকল প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তারমধ্যে অন্যতম হল স্টেশনের জন্য জায়গার স্বল্পতা, দক্ষ জনবলের অভাব এবং অর্থায়ন। এমআরটি ও বিআরটির ফিডার রোড যদি না থাকে তাহলে যানজট নিরসনে বিআরটি ব্যর্থ হবে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, ঢাকার যাতায়াত ব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। যেখানে গণপরিবহনকে প্রাধান্য দিয়ে বাসের জন্য পৃথক লেনের কথা ছিল। কিন্তু আমরা সেগুলোকে পাশ কাটিয়ে ফ্লাইওভার এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দিকে গিয়েছি। যা আমাদের যানজট সমস্যা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হোসেন বলেন, আমাদের নগরে পথচারীদের প্রাধান্য দিয়ে যাতায়াত পরিকল্পনা করা হয়নি। তাদের জন্য সুবিধাদি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কিন্তু আমরা ব্যক্তিগত গাড়িকে প্রাধান্য দিচ্ছি। বর্তমানে মানিক মিয়া এভিনিউতে প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। এ ধরণের উদ্যোগ আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, এই শহরকে আমরা শুধু ধনীদের শহরে রূপান্তর করেছি। গৃহায়ন পরিকল্পনায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে উপেক্ষা করা হয়েছে। যাতায়াত পরিকল্পনায় এসটিপি এবং আরএসটিপি এর মধ্যে ৩৪ বার পথচারীর কথা বলা হলেও এবং গণপরিবহন ব্যবস্থার কথা থাকলেও তার বাস্তবায়ন নেই। উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রতিটি ক্ষেত্রে সার্বজনিন এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না হলে সুফল পাওয়া যাবে না। দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এর উপ-সচিব নায়লা আহমেদ বলেন, আমরা আগে শুধু ত্রাণ নিয়ে কাজ করতাম। এখন দূযোর্গ ব্যবস্থা নিয়েও আমরা কাজ করছি। পাশাপাশি আমাদের দূর্যোগের সংজ্ঞায়ও অনেক কিছু যোগ হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস এর জন্য বিভিন্ন উপকরণ ইতিমধ্যে আমরা ক্রয় করেছি। দূর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ইতিমধ্যে একশন প্ল্যান করেছি এবং রোড ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। 
 
নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রফেসর ইশরাত ইসলাম এর সঞ্চালনায় দুই দিনব্যাপি এই আয়োজনে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ অর্জন ও নিউ আরবান এজেন্ডা বাস্তবায়নের পথ নকশা প্রনয়নে উল্লেখযোগ্য দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়কারী জনাব মোঃ আবুল কালাম আজাদ। ইউটিসি-বুয়েট, ঢাকা-২০১৭ এর ঢাকা ঘোষনার মাধ্যমে দুই দিনব্যাপী এই আয়োজনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।