English | Bangla
“সড়ক পথের ’গণহত্যা’ বন্ধ কর! সারা দেশে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত কর!”
ল্যাব’০২, নিরাপদ সড়ক চাই, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন(বাপা), পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন(পবা), গ্রীন ভয়েস, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট, তরুপল্লব, বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশন ও বাংলাদেশ সাইক্লিস্ট ফেডারেশন এর যৌথ উদ্যোগে ১৪ জুলাই ২০১৭, শুক্রবার, সকাল ১০.০০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে “সড়ক পথের ’গণহত্যা’ বন্ধ কর! সারা দেশে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত কর!” দাবীতে এক নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও বাপা’র যুগ্মসম্পাদক মোঃ শাহজাহান মৃধা-র সভাপতিত্বে এবং ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হোসেন এর পরিচালনায় এতে বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম.হামিদ, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, বিশিষ্ট আইন বিশেষজ্ঞ সাইফুল আলম, বাপা’র যুগ্মসম্পাদক মিহির বিশ^াস ও শরীফ জামিল, পবা’র সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সোবহান, ল্যাব’০২ এর শিকদার মারুফ ইয়াজদানি ও মোঃ নাজিমউদ্দীন আহমেদ, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ এর সভাপতি লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল এজেএফ, আদি ঢাকাবাসী ফোরামের সদস্য সচিব জাবেদ জাহান, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আজাদ, তরুপল্লবের সাধারণ সম্পাদক মোকাররম হোসেন প্রমূুখ। এছাড়াও সমাবেশে বাপা’র যুগ্মসম্পাদক মোঃ আলমগীর কবির, গ্রীনভয়েস এর সহসমন্বয়ক হুমায়ন কবির সুমন, আয়োজক সংগঠনসমূহের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও গোলাপবাগ মাঠ রক্ষা আন্দোলন, ঢাকা যুব ফাউন্ডেশন, ঢাকা ইয়ুথ ক্লাবের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠনের অন্যান্য প্রতিনিধিগন অংশ গ্রহন করেন। কর্মসূচীর সাথে সংহতি জানান বিশিষ্ট লেখক-বুদ্ধিজীবি সৈয়দ আবুল মকসুদ, পরিবেশবিজ্ঞানী দ্বিজেন শর্মা, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মঞ্জরুল আহসান বুলবুল, এভারেস্ট জয়ী এম এ মুহিত ও নিশাত মজুমদার।
 
সভাপতির বক্তব্যে মোঃ শাহজাহান মৃধা বলেন, সড়ক দূর্ঘটনা রোধে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। দ্রুতগতির গাড়ী চালানোসহ সামান্য স্বার্থপরতার কারণে সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলছে। এ থেকে পরিত্রানের জন্য এবং নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে বিপ্লব তৈরী করতে হবে। আমরা সকলে সচেতন হলে ও আইন মেনে চললে সড়ক দূর্ঘটনা অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব।
 
ম. হামিদ বলেন, গত ১ জুলাই সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ জুলাই মুত্যূবরণ করেন বিটিভির নির্বাহী প্রযোজক হারুন অর রশিদ। হারুন অর রশিদ যে চালকের কবলে পরে মৃত্যুবরণ করেন ঐ চালক ছিল একজন শিক্ষানবীশ। একজন শিক্ষানবীসের হাতে এভাবে গাড়ী ছেড়ে দিয়ে দেশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এই কর্মকর্তার মৃত্যুর কারণে আজ পুরো পরিবারটি ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। আমরা আশা করছি, এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচারসহ নিহত পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এধরণের দূর্ঘটনারোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহনের দাবী জানান তিনি।  পাশাপাশি পথচারীদের সচেতন হওয়া, ফুটপাথ দখলমুক্ত করা ও সহনশীলতা তৈরীর আহবান জানান।
 
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে আন্দোলন করে আসছি। সড়ক দূর্ঘটনার অনেক কারণের মধ্যে আইনকে না মানা একটি অন্যতম কারণ। আমরা লক্ষ্য করছি, আইন প্রনেতা কর্তাব্যক্তি, আইন প্রয়োগকারীসংস্থার অনেক উর্ধ্বতন ব্যক্তিগনও আইন মানছে না। তারা অনেক সময় উল্টোপথে গাড়ী চালাচ্ছে এবং এতে দূর্ঘটনাও ঘটছে, যা খুবই দুঃখজনক। আমরা চাই সকলে আইন মেনে রাস্তায় গাড়ী চালাবে। আইন সকলের জন্য সমানভাবে প্রয়োগ করতে হবে। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সাথে সকলকে আরো সম্পৃক্ত হওয়া ও ২২ অক্টোবর নিরাপদ সড়ক দিবস পালনের আহবান জানান তিনি। তিনি বলেন পথচারীসহ সকলকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে আমরা সকলে আইন মেনে রাস্তায় চলবো। 
 
শরীফ জামিল বলেন, বাংলাদেশ অনেক উন্নয়ন কার্যক্রম হচ্ছে এবং মধ্যম আয়ের দেশে উন্নতি হয়েছে বলে দাবী করা হচ্ছে। সড়ক পথেরও অনেক উন্নয়ন করা হচ্ছে, তবে পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার অভাবে সড়ক দূর্ঘটনা রোধ করা যাচ্ছে না। আমরা চাই যেনতেন ভাবে সড়ক উন্নয়ন নয়, এজন্য একটি পরিকল্পিত সড়ক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সড়ক পথের অব্যবস্থাপনাগুলো দুর করতে  আইনের সঠিক বাস্তবায়ন ও মনিটরিং ব্যবস্থা গ্রহন করার আহবান জানান তিনি। 
 
আব্দুস সোবহান, সড়ক দূর্ঘটনা রোধে বিআরটিএ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে যথাযথ দায়িত্ব পালনের আহবান জানান। যেখানে সেখানে যাত্রী উঠানামা বন্ধ করতে হবে। বিদ্যমান আইন প্রয়োগের পাশাপাশি যুগোপযোগী আইন প্রণয়নের দাবী জানান তিনি। 
 
সাইফুল আলম বলেন, গাড়ী চালাতে গিয়ে তাড়াহুড়া না করে সঠিক নিয়ম মেনে গাড়ী চালালে দূর্ঘটনা অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব। এজন্য চালকদের সচেতনতা হওয়া খুবই জরুরী। পাশাপাশি রাস্তায় দায়িত্ব পালনকারীগনকে আরো সতর্ক হওয়ার আহবান জানান।
 
লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল এজেএফ বলেন, সড়ক দূর্ঘটনা রোধে যার যার অবস্থানে থেকে আরো সচেতন হওয়ার আহবান জানান। পাশাপাশি সকলকে আইন মেনে গাড়ী চালানোরও আহবান জানান।
 
মোঃ নাজিম উদ্দীন আহমেদ জানান, গত কয়েকদিন পূর্বে শেরাটন হোটেলের সামনে উল্টোপথ দিয়ে আসা একটি গাড়ীর ধাক্কায় মারাত্মকভাবে আহত হন তার একজন সহপাঠী। ঐ গাড়ীর চাকার নিচে পড়ে শরীরের অনেক হাড় ভেঙ্গে যায় এবং যার কারণে ঐ মেধাবী শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতও আজ চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে। 
 
বক্তাগন আরো বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে লক্ষ মানুষ সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যূবরণ করেছেন! অগণিত মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে অবর্ণনীয় কষ্ট পোহাচ্ছে। যা অজ¯্র পরিবারের কান্না। রাষ্ট্রের জন্যও এই সম্পদ ও জীবন হানি  উন্নয়নের অন্তরায়। বিদ্যমান আইন প্রয়োগে শিথিলতা, আইন সংস্কারের মাধ্যমে যুগপোযোগী না করা, 
 
 
সড়ক পথ সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে এর পরিচালনা ও মেরামতের সঠিক পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ না থাকা, নির্বিচারে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান, ক্রটিযুক্ত যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ না করা, ক্রটিপূর্ণ সড়ক নির্মাণ, দূর্ঘটনার জন্য দায়ীদের শাস্তি না হওয়া, দক্ষ ও প্রশিক্ষিত চালক তৈরির জন্য পর্যাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা না থাকা, সড়কে দক্ষ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা না থাকা, সড়কে প্রয়োজনীয় সংকেত ও নির্দেশনা সম্বলিত সাইন না থাকা, বিশেষ করে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোÑ ইত্যাদি নানা কারণে সড়ক দূর্ঘটনা ক্রমশ বেড়েই চলছে। এজন্য সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে দূরদর্শীতার সঙ্গে বিদ্যমান সড়ক নেটওয়ার্কের মধ্যে নিরাপদ যাতায়াতের জন্য একটি সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
 
কর্মসূচী থেকে নিন্মোক্ত সুপারিশ ও দাবীসমূহ উত্থাপন করা হয়ঃ
 
(১) মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর যুগোপযোগী সংশোধনী আনয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে;  (২) পথচারী ও অযান্ত্রিক যানে নিরাপদে চলাচলের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে হবে; (৩) উল্টোপথে গাড়ি চালানো বন্ধ করতে হবে; (৪) যথাযথভাবে বিদ্যমান সড়ক পথ পরিচালনা ও মেরামত করতে হবে; (৫) ভূয়া লাইসেন্সধারী চালকদের নিষিদ্ধ ও শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে; (৬) পরিবহন মালিকদের জবাবদিহীতার আওতায় আনা এবং অপরাধের ভিত্তিতে শাস্তির বিধান চালু করতে হবে; (৭) ত্রুটিযুক্ত গাড়ি বাতিল করতে হবে; (৮) গাড়ি চালকদের ট্রিপ এর পরিবর্তে মাসিক বেতনে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে; (৯) সড়ক ব্যবহারকারী সকলের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে; (১০) যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে; (১১). বিআরটিএ’ কে স্বচ্ছ ও কার্যকর করতে হবে; (১২). রেল ও নৌ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণ করা এবং সড়ক নির্ভরতা কমাতে হবে; (১৩) প্রশিক্ষিত, দক্ষ ড্রাইভার তৈরি করতে প্রতিটি জেলায় প্রশিক্ষণ একাডেমী চালু করতে হবে; (১৪) যাত্রী, যানবাহনের মালিক, চালক, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সকলের সহযোগিতায় সড়ক দূর্ঘটনা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; (১৫) পেশাদার চালকের ক্ষেত্রে সুনির্দ্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে মালিকপক্ষ থেকে নিয়োগপত্র প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।