ঢাকা শহরের অন্যতম সমস্যা যানজট। এ সমস্যা সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে স্কুলে যাতায়াতের সময়। এর মূল কারণ একটি শিশুর জন্য একটি গাড়ির ব্যবহার। এর ফলে যেমন যানজট বাড়ছে, তেমনি ব্যক্তিগত গাড়িতে যাতায়াত করায় শিশুরা শারীরিক কার্যক্রমের সুযোগ হারাচ্ছে। বর্তমানে শিশুরা পার্ক ও খেলার মাঠের অপ্রতুলতার কারণে শারীরিক কার্যক্রমের সুযাগ পায় না বললেই চলে। এছাড়া ব্যক্তিগত গাড়িতে একা যাতায়াত করায় তারা সামাজিকীকরণের সুযোগ থেকেও বঞ্চিত। ফলে তাদের সঠিক বিকাশ ব্যহত হচ্ছে। এছাড়া দূষণ, জ্বালানী ব্যয় ইত্যাদি বাড়ছে। বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের মাধ্যমে এ সকল সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট রাজধানীর রায়ের বাজার এলাকায় ৫ টি বিদ্যালয়ে একটি জরিপ কার্যক্রমের মাধ্যমে জানতে পারে যে, এ এলাকার ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে। ভাঙ্গা রাস্তা, গাড়ির অত্যধিক গতি, আবর্জনা, জলাবদ্ধতা, গাড়ির হর্ন ইত্যাদি সমস্যা থাকা স্বত্বেও তারা প্রতিদিন হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে। কিন্তু এ অবস্থা থেকে দ্রুত পরিত্রাণ চায় তারা। হেঁটে যাতায়াতের নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দ বিষয় নিশ্চিতের দাবিতে রায়েরবাজার এলাকার আলী হোসেন বালিকা বিদ্যালয়, ধানমন্ডি কচিকন্ঠ হাই স্কুল, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল এবং আলিফ আইডিয়াল পাবলিক স্কুল, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সহযোগিতায় সপ্তাহ ব্যাপী কর্মসূচি পালন করে। এ কর্মসূচির আওতায় দলবদ্ধভাবে বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াত করে এবং তাদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে।
শিক্ষার্থীরা জানায় তারা হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে, কিন্তু প্রতিদিনই তাদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে তারা বলে, রাস্তা ভাঙ্গাচোরা বলে রাস্তায় হাঁটতে সমস্যা হয়। বর্ষাকালে জলাবদ্ধতার কারণে এ সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করে। রাস্তায় নির্দিষ্ট হাঁটার জায়গা নেই বলে যান্ত্রিক যান, বিশেষ করে ব্যক্তিগত গাড়ির গতির কারণে আমরা রাস্তায় হাঁটতে আকংকিত হই।
অভিভাবকরা জানান, হেঁটে যাতায়াতের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকা স্বত্বেও সন্তানদের আমরা হেঁটে যাতায়াতে উৎসাহিত করি। রাস্তা পারাপারে ক্ষেত্রে সচেতন হতে তাদের শিক্ষা দেই। সরকারের কাছে আমাদের আহ্বান, তারা যেন নিরাপদে হেঁটে যাতায়াতের পরিবেশ নিশ্চিত করেন। গলি রাস্তায় বিশেষত স্কুলের সামনের রাস্তাগুলোতে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করা হলে আমাদের সন্তানদের হেঁটে যাতায়াত নিরাপদ হতো।
আয়োজক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলেন, প্রতিটি এলাকায় সমমানের বিদ্যালয় নিশ্চিত করা হলে অভিভাবকরা দূরের বিদ্যালয়ে সন্তানদের নিয়ে যেতে আগ্রহী হবেন না। এর ফলে যাতায়াত চাহিদা কম হবে এবং ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহারও কমে আসবে। ফলে যানজটও কমে যাবে। সরকার স্থানীয় শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুলে ৪০ শতাংশ কোটা চালু করেছে। এ সংখ্যা আরো বৃদ্ধি হলে স্বল্প দূরত্বে শিক্ষার্থীরা হেঁটে যাতায়াতে উৎসাহী হবে। যারা হেঁটে যাতায়াত করে তাদের হাঁটার সুবিধার্থে নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দময় পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন।
কর্মসূচিতে গাউস পিয়ারী, পরিচালক, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট বলেন, রায়ের বাজার এলাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী হেঁটে যাতায়াত করে। এখানে নিরাপদে ও স্বচ্ছন্দে হাঁটার পরিবেশ তৈরি করা গেলে একটি উদাহরণ সৃষ্টি হবে। যা পরবর্তীতে অন্যান্য এলাকার জন্য অনুসরণীয় হতে পারে। এজন্য স্থানীয় অধিবাসীদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। এছাড়া সিটি কর্পোরেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। শিশুদের নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দে হেঁটে যাতায়াতের জন্য রায়েরবাজার বৈশাখী খেলার মাঠ থেকে ধানমিন্ড শংকর বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত গলি রাস্তায় গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ, হর্ণ না বাজানো, রাস্তায় মার্কিং করা ইত্যাদি উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
সপ্তাহব্যাপী এ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন আলী হোসেন বালিকা বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান, ধানমন্ডি কচিকন্ঠ হাই স্কুল এর প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল এর প্রধান শিক্ষক এমএ মান্নান মনির এবং আলিফ আইডিয়াল পাবলিক স্কুল এর প্রধান শিক্ষক জুয়েল হাসান। এছাড়া উপস্থি ছিলেন আয়োজক চারটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকবৃন্দ এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর ডেপুটী প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজনীন কবির, সহকারি এডভোকেসি কর্মকর্তা নাঈমা আকতার, সামিউল হাসান সজীবসহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।