গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনার মাধ্যমে পরিবেশ, স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। এজন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহরে বিভিন্ন সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখে স্থানীয় এলাকাবাসীর জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়। ঢাকা শহরে খেলাধুলার জায়গার অভাবে শিশু কিশোরদের বিকাশ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। ফলে শিশুরা টিভিতে কাটুন অথবা গেইমস এ আসক্ত হয়ে পড়ছে। বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিগণের সময় কাটানোর কোন জায়গা না থাকায় বেশিরভাগ সময় বাসায় বন্দি থাকছেন। এলাকার অভ্যন্তরে কম ব্যস্ত সড়কে প্রতিদিন নির্দ্দিষ্ট সময় গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখে বা নিয়ন্ত্রণ করে শিশুদের খেলাধুলা ও বয়োজ্যেষ্ঠদের আড্ডা ইত্যাদির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
৯ ডিসেম্বর, ২০১৭, শনিবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রাম এবং ইউএনডিপিসহ নগর সংশ্লিষ্ট অংশীদারগণের উদ্যোগে সপ্তাহব্যাপী “স্মার্ট সিটি ক্যাম্পেইন” উপলক্ষ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এর ৩৩ নং ওয়ার্ড এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এর অঞ্চল-৫ কার্যালয়ের সহযোগীতায় মোহাম্মদী আবাসিক কল্যাণ সমিতি এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাষ্ট এর যৌথ উদ্যোগে দুপুর ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত মোহাম্মদপুর এর মোহাম্মদী হাউজিং সোসাইটি ৩নং সড়ক গাড়িমুক্ত কর্মসূচি অনুষ্ঠানে বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক প্রতিটি ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নিজ এলাকায় পথচারীবান্ধব গাড়িমুক্ত সড়ক গড়ে তুলতে সেগুলো চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী ডিএনসিসির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদপুর হাউজিং সোসাইটির ৩ নম্বর সড়ক এবং ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের রাজিয়া সুলতানা সড়ক দুটি ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর তত্ত্বাবধানে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় গবেষণার মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করা হয়েছিল। আজ মোহাম্মদপুর হাউজিং সোসাইটির ৩ নম্বর সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে শিশুদের জন্য উন্মুক্ত করা হল। মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে এক মিনিট নিরবতা পালনের মাধ্যমে গাড়িমুক্ত সড়ক কর্মসূচির কার্যক্রম শুরু করা হয়। এ সময় রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ করে শিশুদের জন্য নানা রকম খেলাধুলা, নারী ও বয়োজ্যেষ্ঠদের আড্ডার ব্যবস্থা করা হয়।
গাড়িমুক্ত কর্মসূচি অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্যে ইউএনডিপি এর কর্মসূচি উন্নয়ন পরামর্শক মারুফ হোসেন বলেন, আধুনিক শহর বিনির্মাণে সম্মিলিত প্রয়াসকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে শুরু হওয়া ‘স্মার্ট সিটি ক্যাম্পেইন’ এর অংশ হিসেবে আজকে এই আয়োজন। তিনি বলেন, গণপরিসর নগরবাসীর সামাজিকীকরণ, বিনোদন, খেলাধুলা, মানসিক প্রশান্তি এবং শরীরচর্চার ক্ষেত্র সৃষ্টি করে। কিন্তু আমাদের এই শহরে গণপরিসরের অভাব রয়েছে। এই ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা গণপরিসরের চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণ করতে পারবো।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এর ৩৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জনাব তারেকুজ্জামান রাজিব। তিনি বলেন, রাজধানীতে উঁচু উঁচু ভবনের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে খোলা জায়গা। মাটির স্পর্শ ছাড়াই বড় হচ্ছে নগরীর শিশুরা। এতে করে আমাদের সন্তানেরা শারীরিক সক্ষমতা ও সামাজিক দক্ষতা ছাড়াই বেড়ে উঠছে। কাজেই এই ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা শিশু, নারী এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের জন্য বিনোদনের সুয়োগ তৈরি করতে পারবো। বিশেষ অতিথি হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এর অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা, এস. এম. অজিয়র রহমান বলেন, বাসযোগ্য শহর গড়ে তুলতে মেয়র আনিসুল হকের গৃহিত উদ্যোগগুলো তাঁকে চিরকাল আমাদের মাঝে বাঁচিয়ে রাখবে। আজকে তার একটি উদ্যোগ আমরা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। এজন্য আমরা খুঁশি। আমরা তাঁর গৃহিত কার্যক্রমগুলোর ধারাবাহিকতা বজায় রাখব। হেলথ ব্রীজ-কানাডার আঞ্চলিক পরিচালক দেবরা ইফরঈমসন বলেন, বর্তমান শিশুরা প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করছে। শহরে তাদের বিনোদনের সুযোগ নেই। কাজেই এই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে শিশুদের জন্য বাসযোগ্য শহর গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, যে রাস্তায় গাড়ির জন্য চলতে সমস্যা হত। আজ সেই সড়কে শিশুরা স্বাধীনভাবে খেলছে। বয়স্করা বাসার সামনে বসে গল্প করছে। আমাদের ছোট শহরে জায়গার স্বল্পতা রয়েছে। কাজেই এভাবে গাড়ি চলাচল বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করে সামাজিকীকরণ এর ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত আলোচনা অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজনীন কবীর এবং সৈয়দা অনন্যা রহমান প্রমুখ।