যুব সমাজকে নেশা থেকে দূরে রাখতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করুন প্রত্যাশা ও ডাব্লিউবিবি’র সভায় যুব সমাজের আহবান তরুণ প্রজন্মকে নেশায় ধাবিত করতে তামাক কোম্পানিগুলোর প্রতারণামূলক প্রচারণা বন্ধে তামাক নিয়ন্ত্রণকে শক্তিশালী করতে হবে। দ্রুত সংসদে এ আইন পাস করার দাবি জানিয়েছে দেশের যুব সমাজ। ১১ ডিসেম্বর ২০১২ সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত “তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন: জনমত সৃষ্টিতে যুব সমাজের করণীয়” শীর্ষক সভায় বক্তারা উপরোক্ত দাবি জানান।
প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ এর সভাপতিত্বে এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর প্রকল্প সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম সুজন এর সঞ্চালনায় সভায় আলোচনা করেন একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা, সাউথ এশিয়ান ইযুথ এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্ক (সায়েন) এর সংগঠক বিধান চন্দ্র পাল, সিরাক বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক ও তরুণ আইনজীবী এস এম সৈকত, সংগঠক ও সাংবাদিক মশিউর রহমান রুবেল প্রমুখ। সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর ন্যাশনাল এডভোকেসি কর্মকর্তা সৈয়দা অনন্যা রহমান।
লিখিত বক্তব্যে সৈয়দা অনন্যা রহমান বলেন, বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে তামাক কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত কিশোর-তরুণ প্রজন্মকে ধূমপানে আকৃষ্ট করতে নানা প্রতারণা চালিয়ে আসছে। বিদ্যমান আইনে তামাক কোম্পানিগুলোকে শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া বিজ্ঞাপন প্রচার, পোস্টার প্রদর্শন ও প্রচারে তামাক কোম্পানির সরাসরি দায় না থাকায় তামাক কোম্পানিগুলো আইন ভঙ্গ করে চলেছে। এজন্য তামাক কোম্পানিগুলোকে শাস্তির আওতায় আনতে দ্রুত আইন সংশোধন করা দরকার।
অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী বলেন, তরুণ প্রজন্মকে নেশাগ্রস্ত করতে নানারকম ষড়যন্ত্র চলছে। এ প্রজন্মকে নিস্ক্রিয় রাখতে পারলে অনেক অপকর্ম/অনিয়ম সহজে করা যায়। তাই তরুণ প্রজন্মকে নেশামুক্ত রাখতে ধূমপান ও তামাককে নিরুৎসাহিত করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শতভাগ ধূমপানমুক্ত করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেউ ধূমপান করলে সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানকেও শাস্তির আওতায় আনা দরকার। তবেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শতভাগ ধূমপানমুক্ত করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি নাটক-সিনেমায় ধূমপানের দৃশ্য প্রচার নিষিদ্ধ ও কেউ যদি নাটক বা সিনেমায় ধূমপানের দৃশ্য প্রচার/প্রদর্শন করে তবে তাদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রাখা দরকার।
হেলাল আহমেদ বলেন, সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। দেশের নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে সচেতন করতে সব তামাকের মোড়কে ছবিসহ সতর্কবাণী প্রদান, সাদাপাতা-জর্দা-গুল ইত্যাদি চর্বনযোগ্য তামাককে আইনে অন্তর্ভূক্ত করা করে, দ্রুত এ সংসদেই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ইবনুল সাঈদ রানা বলেন, তামাক চাষ খাদ্য নিরাপত্তায় মারাত্মক হুমকি। তাই খাদ্যের জমিতে তামাক চাষ বন্ধ করতে হবে। বিধান চন্দ্র পাল বলেন, তামাক আমাদের অর্থনীতি পরিবেশ, স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, দারিদ্রÑসব ক্ষেত্রেই নেতিবাচক বিধায় তামাক নিয়ন্ত্রণ জাতীয় ও যুব গুরুত্বপুর্ণ একটি বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা প্রয়োজন। তাই যুব সমাজকে সকল নেশা থেকে দূরে রাখতে প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রচারণা বাড়াতে হবে। যুব সমাজকে তামাক কোম্পানিগুলো যাতে বিভ্রান্ত না করতে পারে সেদিকেও সজাগ থাকতে হবে। মশিউর রহমান রুবেল বলেন, তামাকের কারণে মানুষ মারা যাচ্ছে, ক্যান্সারসহ নানা রোগ হচ্ছে এসব ক্ষতিকর বিষয়ে প্রচারণা বাড়াতে হবে। এস এম সৈকত বলেন, তামাক কোম্পানীর মানবতা বিরোধী অপরাধ বন্ধ করতে যে সকল তরুণ নীতিনির্ধারক রয়েছে তাদের উদ্যোগী হতে হবে। আমিনুল ইসলাম সুজন বলেন, বাংলাদেশে সবচেয়ে কম দামে বিড়ি-সিগারেটসহ তামাকজাত দ্রব্য পাওয়া যায়। পৃথিবীর কোন দেশেই এত কম দামে তামাকজাত দ্রব্য পাওয়া যায় না। তাই আইন কঠোর করার পাশাপাশি তামাকজাত দ্রব্যের উপর উচ্চহারে কর আরোপ ও মূল্য বৃদ্ধি করতে হবে।
মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় তরুণ সংঘ’র সভাপতি আলহাজ্ব ফজলুল হক, সিয়াম এর নির্বাহী পরিচালক মাসুম বিল্লাহ, স্বদেশ এর নির্বাহী পরিচালক মাজেদুল হক মানিক, বডি বিল্ডিংএ বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন মিস্টার বাংলাদেশখ্যাত মামুনুর রশিদ জয়, ভয়েস অব ডেভেলপমেন্ট অব বাংলাদেশ এর সংগঠক আফসানা বেগম ও আহমেদ তসলিম প্রমুখ। সভায় সুবাহ-মেহেরপুর, সাড়ডা-নরসিংদী, বউকস-রাজশাহী, এসইআরসি-পটুয়াখালী, সমন্বিত প্রমিলা মুক্তি প্রচেষ্টা-বালিয়াকান্দি. শার্প-রাজবাড়ী, নারীকল্যাণ সংস্থা-নারায়নগঞ্জ, সারাদেশের যুব সম্প্রদায় ও যুব সংগঠকবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।