ঢাকা বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহরগুলোর মধ্যে একটি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে ঢাকা শহরে নানাবিধ সমস্যা বেড়ে চলেছে। বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি, যানজট এবং সড়ক দুর্ঘটনা এর মধ্যে অন্যতম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মৃত্যুবরন করে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে এ ধরণের মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। বেইজিং ও দিল্লীতে বায়ুদূষণের ভয়াবহতা আমাদের জানা আছে। ঢাকা বর্তমান বায়ুর মান যে অবস্থা পৌঁছেছে তা নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ না নিলে ঢাকার বায়ুদূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। 23 আগস্ট সকাল ১১টায় ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর সভা কক্ষে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ. বুয়েট, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
সেমিনারের মুলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, ইউএসএ এর এনভারমেন্ট সিস্টেম এনালিস্ট জোসেফ ম্যাকেনটায়ার এবং কানাডা এর টক্সিেেকালজিষ্ট ড. স্টিভেন জোনস। তারা বলেন মিরপুর ১০ নং গোলচত্বরে বায়ুদূষণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি, প্রতি ঘন মিটারে ১৭২ মাইক্রোগ্রাম। বাংলাদেশে বায়ুদূষণের মানদন্ড অনুযায়ী প্রতি ঘন মিটার বাতাসে পার্টিকুলেট ম্যাটার ২.৫ এর উপস্থিতি ৬৫ মাইক্রোগ্রাম। মিরপুর ১০ এ মূলত যান্ত্রিক যানবাহন, বিশেষত ব্যক্তিগত গাড়ির আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। এ কারণে এখানে বায়ুদূষণের মাত্রা মানদন্ডের থেকে প্রায় ৩ গুণ অধিক। অন্যদিকে, লালবাগের বি সি দাশ সড়কে মূলত অযান্ত্রিক যান চলাচল করে এবং বায়ুদূষণের মাত্রা কম, প্রতি ঘন মিটার বাতাসে পার্টিকুলেট ম্যাটার ২.৫ এর উপস্থিতি ৪০ মাইক্রোগ্রাম। নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ. বুয়েট, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর উদ্যোগে ঢাকা শহরের ১২ স্থানে বায়ূর মান যাচাই, যানবাহন গণনা এবং পর্যবেক্ষণ করে গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, যান্ত্রিক যানের আধিক্য বায়ুদূষণের জন্য দায়ী এটি সহজেই অনুমেয়। যান্ত্রিক যান, বিশেষ করে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।
স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি এর পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ঢাকা শহর বসবাস যোগ্যতা হারানোর জন্য বায়ুদূষণ অনেকাংশে দায়ী। আমরা হাঁটা, গণপরিবহন এবং অযান্ত্রিক যানকে উপেক্ষা করে যাতায়াত পরিকল্পনা করায় বায়ুদূষন ক্রমেই বেড়ে চলেছে। গবেষণাটি বর্ষাকালে সম্পাদিত হয়েছে। এ সময় বায়ুদূষণের পরিমাণ কম হয়। এ সময়েই তা মানদন্ডের থেকে অধিক। শীতকালে যখন দূষণ বেশি হয়, তখনকার ভয়াবহতা সহজেই অনুমেয়। বুয়েট এর নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন হাসান বলেন, ঢাকায় যানবাহনজনিত বায়ূদূষণ নিয়ন্ত্রণে ভূমির মিশ্র ব্যবহার এর উপর গুরুত্বারোপ করেন। সেই সঙ্গে তিনি ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ এবং গণপরিবণ, হেঁটে ও সাইকেলে যাতায়াতের সুবিধা বৃদ্ধির সুপারিশ করেন।
পরিবেশ অধিদপ্তর এর পরিচালক (আইটি এবং প্রচার) ফরিদ আহমেদ বলেন, বায়ুদূষণ প্রতিরোধ পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সরকারি পর্যায় থেকে আরো কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন। নগরে যান্ত্রিক যান বৃদ্ধির ফলে বায়ুদূষণ এবং শব্দদূষণ দুটিই অত্যন্ত ভয়াবহ মাত্রা ধারণ করেছে। যান্ত্রিক যানবাহনের আধিক্য বিশেষ করে এর হর্ন শব্দদূষণের অন্যতম কারণ। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদপ্তর কাজ করছে এবং এর সঙ্গে সকলকে যুক্ত হতে হবে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, দূষণমুক্ত পরিবেশ আমাদের অন্যতম চাহিদা। প্রত্যেকে যদি বায়ুদূষণের ভয়াবহতা চিন্তা করে যান্ত্রিক যান ব্যবহারে সচেতন হয় তাহলে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। বায়ুদূষণ নিয়ে আরো গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর উপদেষ্টা সেমিনারের সভাপতির বক্তব্যে দেবরা ইফরইমসন বলেন, আমাদের যাতায়াত ব্যস্থায় যান্ত্রিক যানকে প্রাধান্য দেয়ার ফলে দূষণ এবং যানজট দুটিই বেশি। বিশ্বের যেসব শহর বসবাস যোগ্যতাকে প্রাধান্য দেয়, তারা যান্ত্রিক যানের পরিবর্তে হাঁটা এবং সাইকেলিংকে প্রাধান্য দিচ্ছে। রাস্তা বাড়ানোর দিকে জোর না দিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করলে সমস্যার সমাধান সম্ভব।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হোসেন সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন। আরো বক্তব্য রাখেন, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট এর সদস্য সচিব আমিনুর রসুল; বিসিএইচআরডি এর নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল হক, সিপিডিপি এর প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর আফসানা আজাদ; ইনস্টিটিউট অফ ওয়েলবিইং এর মাসুম বিল্লাহ ভূইয়া, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর সহকারি প্রকল্প কর্মকর্তা তালুকদার রিফাত পাশা; মডার্ণ ক্লাব এর সভাপতি আবুল হাসনাত এবং স্পেস এর সোলায়মান কবির।