English | Bangla
শিশুদের হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াত সুনিশ্চিতে প্রতিটি এলাকায় সমমানের স্কুল নিশ্চিত করার আহ্বান
ঢাকা শহরের হাঁটার পরিবেশ উন্নয়ন এবং প্রতিটি এলাকায় সমমান এবং সমসুবিধার স্কুল নিশ্চিত করা হলে যাতায়াত চাহিদা কমে যাবে এবং শিশুরা হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াতে সমর্থ হবে।  ১৬ মার্চ ২০১৭, সকাল ১১.০০ টায়, জাতীয় প্রেসক্লাবের ভি.আই.পি লাউঞ্জে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘শিক্ষার্থীদের নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দে হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াতের পরিবেশ সৃষ্টিতে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। ঢাকা শহরে বিদ্যালয় শুরু এবং শেষের সময়টিতে যানজট সবচেয়ে তীব্র আকার ধারণ করে। অথচ ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট স্টাডি অনুযায়ী, মাত্র ৪ শতাংশ স্কুল ট্রিপ হয় ব্যক্তিগত গাড়ির মাধ্যমে। এ সংখ্যা যদি বৃদ্ধি পায়, তবে যানজট সমস্যা আরো তীব্র হবে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে শিশুদের হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াত একটি সমাধান হতে পারে। শিক্ষার্থীদের হেঁটে যাতায়াতের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি এবং তারা যেন নিরাপদে হেঁটে স্কুলে যেতে পারে সে প্রক্রিয়ার সঙ্গে এলাকাবাসীর সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মত ব্যক্ত করেন বক্তারা। 
 
মতবিনিময় সভার প্রধান অতিথি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি’র সভাপতি জনাব মোঃ মোতাহার হোসেন, এম.পি. বলেন, কেবলমাত্র সরকার নয়, শিশুদের হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াতে উৎসাহী করতে অভিভাবকদের সচেতন করতে হবে। বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের আন্দোলনটি স্কুল থেকেই শুরু করতে হবে। সকল স্কুলকে সমমানসম্পন্ন করার ব্যাপারে সরকার সচেষ্ট, কিন্তু এক্ষেত্রে বেশি প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন। 
 
সভায় মূলপ্রবন্ধে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট’র সহকারি এডভোকেসি কর্মকর্তা নাঈমা আকতার বলেন, রাজধানীর রায়েরবাজার এবং মনসুরাবাদ এলাকায় ৬টি স্কুলে জরিপ চালিয়ে দেখা যায়, ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী হেঁটে যাতায়াত করে। অপরপক্ষে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় একটি স্কুলে জরিপ করে দেখা যায় ৭১.৭% শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত গাড়িতে যাতায়াত করে। অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো মুসলেহ উদ্দিন হাসান বলেন, হেঁটে যাতায়াতের মাধ্যমে সামাজিকীকরণের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং একে অন্যের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠবে। ফলে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। 
 
এস এম অজিয়র রহমান, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা, অঞ্চল-৫, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন বলেন, শিশুদের হেঁটে যাতায়াত নিরাপদ করার জন্য প্রতিটি রাস্তায় ফুটপাত প্রয়োজন। যেখানে ফুটপাত সৃষ্টির স্থান সংকুলান সম্ভব নয়, সেখানে কিভাবে সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে, সে বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদদের পরামর্শ প্রয়োজন। 
 
ড. আকতার মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বি.আই.পি) বলেন, ১৯৩০ সালে নগরায়নের ক্ষেত্রে বলা হয়, একটি এলাকা ততটুকু হবে, যতটুকু হলে সেখানকার সব শিক্ষার্থীরা একটি স্কুলে পড়তে সক্ষম হয়। এ সংজ্ঞা যদি অনুসরণ করা হয়, তবে শিশুদের হেঁটে স্কুলে যাতায়াত সহজ হবে। 
 
অধ্যাপক ড. ইনামুল হক সিদ্দিকী, সদস্য, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলেন, নগরায়নের সাথে সাথে আমাদের হাঁটার অভ্যাস ক্রমান্বয়ে কমে গেছে। শিক্ষাক্রমে শারীরিক শিক্ষা বই এর মাধ্যমে হাঁটা বিষয়ে উৎসাহিত করার প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে। কিন্তু তা কেবলমাত্র বিদ্যালয়ের ফলাফলের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে।
 
মতবিনিময় সভার সভাপতি সাইফুদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট বলেন, হেঁটে যাতায়াতের প্রতিবন্ধকতা মানবসৃষ্ট। কাজেই আমাদেরকেই এর সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। আগামী প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য নগরী গড়ে তুলতে আমাদের উদ্যোগী হতে হবে। 
 
মতবিনিময় সভায় সঞ্চালনা করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হোসেন। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন এন্ড রিসার্চ এর এসোসিয়েট ডিরেক্টর কামরানুল বাসেত, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট এর সদস্য সচিব আমিনুর রসুল, বাংলাদেশ এনভায়রনসেন্ট নেটওয়ার্ক এর অস্ট্রেলিয়ান চ্যাপ্টারের সমন্বয়ক কামরুল আহসান খান, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহিদুল হক খান, আলী হোসেন বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান, নাসফের প্রচার সম্পাদক ক্যামেলিয়া চৌধুরীসহ প্রমূখ।