ঢাকা শহরে স্কুল সময়ে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহারের কারণে অধিকাংশ রাস্তায় যানজট সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। অথচ স্কুলগুলো হেঁটে আসা যাওয়ার মাধ্যমে যানজট হ্রাস করা সম্ভব। পাশাপাশি হেঁটে যাতায়াতের মাধ্যমে শিশুর স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে। প্রতিদিন স্কুলে হেঁটে যাতায়াতের মাধ্যমে শিশুদের শারীরিক পরিশ্রমের অভাব পূরণ করা সম্ভব। পাশাপাশি যাতায়াতের ক্ষেত্রে যানবাহনের ব্যবহার কমে গেলে পরিবেশ দূষণ কমবে এবং যাতায়াত খরচও সাশ্রয় হবে। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, মোহাম্মদপুর মনসুরাবাদে অবস্থিত সুইটবার্ড স্কুল এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে ‘নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দে হেঁটে স্কুলে যাতায়াতের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে “আমার বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথ” অঙ্কন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা উপরোক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন। অঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিদ্যালয়ের প্রায় ১৫০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। অঙ্কন প্রতিযোগিতা শেষে শিক্ষার্থীরা নিরাপদে হেঁটে স্কুলে যাতায়াতের পরিবেশ তৈরির দাবিতে একটি মানববন্ধনে অংশ নেয়।
চিত্রাংকন কর্মসূচির উদ্বোধনে প্রকল্প কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বলেন, হাঁটার পরিবেশ ভালো না হওয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ হাঁটতে নিরুৎসাহিত হন এবং যারা হেঁটে যাতায়াত করেন তারা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন। এজন্য শিক্ষার্থীদের স্কুলে নিয়মিত হেঁটে যাতায়াতে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি হেঁটে যাতায়াতের পরিবেশ তৈরিতে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
মানববন্ধনে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হোসেন বলেন, একটি শিশুর জন্য একটি গাড়ি ব্যবহারের ফলে যানজট যেমন সৃষ্টি হচ্ছে পাশাপাশি হেঁটে চলাচলকারী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদেরও সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সরকারের প্রত্যেক স্কুলে ৪০ শতাংশ কোটা চালুর গৃহিত পদক্ষেপের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দময় হাঁটার পরিবেশ তৈরির কোন বিকল্প নেই। এজন্য প্রতিটি কমিউনিটিতে সমমানের স্কুল থাকা এবং স্থানীয় স্কুলে শিশুদের পড়ালেখা বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। যাতে করে অল্প দূরত্বে শিশুরা হেঁটে স্কুলে যেতে পারে।
সুইট বার্ড স্কুলের প্রধান শিক্ষক জেসমিন নাহার বলেন, অভিভাবকদের পছন্দানুযায়ী স্কুলে সন্তানদের পড়ানোর জন্য দূরত্ব বেশি হওয়ার কারণে গাড়ির উপর নির্ভরশীলতা দেখা যায়। এমনকি অনেক সময় সামাজিক মর্যাদা বাড়ানোর ভ্রান্ত ধারনা থেকে অনেকেই অল্প দুরত্বেও সন্তানদের গাড়ি করে আনা নেওয়া করে থাকেন। অভিভাবকেরা যদি কমিউনিটি স্কুলে সন্তানদের পাঠান তবে যানজট হ্রাস পাবে।
সুইট বার্ড স্কুলের প্রায় সকল শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াত করে। এখানে নিরাপদে ও স্বচ্ছন্দে হাঁটার পরিবেশ তৈরি করা গেলে একটি উদাহরণ সৃষ্টি হবে। এজন্য স্থানীয় অধিবাসীদের এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। বক্তারা শিশুদের নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দে হেঁটে যাতায়াতের জন্য রাস্তায় গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ, হর্ণ না বাজানো, রাস্তায় মার্কিং করা, শিক্ষার্থী-অভিভাবক-স্থানীয়দের সচেতন করার সুপারিশ করেন।
মানবন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রজেক্ট অফিসার জিয়াউর রহমান লিটু, সহকারি এডভোকেসি কর্মকর্তা নাঈমা আকতার, তানজিদা হক, সুইট বার্ড স্কুলের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীবৃন্দ।