অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের ক্যান্টিনে তৈলাক্ত, চর্বিযুক্ত, মাত্রাতিরিক্ত লবণ/চিনি এবং প্রক্রিয়াজাত অস্বাস্থ্যকর খাবার এর আধিক্য লক্ষনীয়। ফলে বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের মাঝে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ষ্ট্রোক, ক্যান্সার, স্থুলতা ইত্যাদি অসংক্রামক রোগ ক্রমশ বাড়ছে। জনসচেতনতার অভাব, স্বাস্থ্যকর খাবারের সীমিত যোগান, অস্বাস্থ্যকর খাবারের আগ্রাসী প্রচারণা এবং সহজ প্রাপ্য হওয়ায় আমরা এসকল খাবার গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছি। এজন্য বাসাবাড়ির পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ক্যান্টিনগুলোতে অস্বাস্থ্যকর খাবারের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর খাদ্য পরিবেশন করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন।
২৮ অক্টোবর ২০১৭, সকালে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এবং ইনষ্টিটিউট অব ওয়েলবিং এর যৌথ উদ্যোগে সংস্থার রায়েরবাজারস্থ কার্যালয়ের কৈবর্ত্য সভাকক্ষে “সুস্থ শরীর সুস্থ মন; স্বাস্থ্যকর ক্যান্টিনের গুরুত্ব” শীর্ষক একটি সেমিনারে বক্তারা উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট’র পরিচালক গাউস পিয়ারীর সভাপতিত্বে সেমিনারে আলোচনা করেন এলজিইডির ফিল্ড অপারেশন বিভাগের ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর এম কাজী এমদাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য আন্দোলন এর যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদা আখতার, হেলথ ব্রিজ কানাডার আঞ্চলিক পরিচালক দেবরা ইফরইমসন, বাংলাদেশ গার্লস গাইডস্ এসোসিয়েশন এর আঞ্চলিক কমিশনার রওশন আরা ইসলাম। সেমিনারে ‘স্বাস্থ্যকর খাবারের ক্যান্টিন’ বিষয়ে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ফার্মেসী বিভাগের ছাত্র তানজিম খান অনিক।
তানজিম খান অনিক বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যান্টিনগুলোতে ফাস্টফুড, জাঙ্কফুড, কোমল পানীয়, এনার্জি ডিঙ্কসসহ অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। এ খাবারগুলো আমাদের সাময়িক ক্ষুধা নিবারন করলেও শরীরে দীর্ঘমেয়াদি রোগের বীজ বুনে যাচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, অফিস-আদালতগুলোর ক্যান্টিনে যদি স্বাস্থ্যকর খাবারের ব্যবস্থা থাকলে অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যাবে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনগুলোতে যাতে স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করা হয় এ বিষয়েও কাজ করছি। পর্যায়ক্রমে দেশের সকল সরকারি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ, অফিস, হাসপাতলের ক্যান্টিনগুলোতেও এধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
গাউস পিয়ারী বলেন, বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর মোট মৃত্যুও ৬০% কারণ অসংক্রামক রোগ। অসংক্রামক রোগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস। স্বাস্থ্যকর জীবন সম্পর্কে সচেতন হয়ে কিছু আচরণগত কিছু পরিবর্তন আনলে এসব জটিল ও ভয়াবহ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। পাশাপাশি দেশের প্রতি ক্যান্টিনে স্বাস্থ্যকর খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করতে হবে।
এম কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে হাজার হাজার শিক্ষার্থী জ্ঞান আহরনের জন্য নিয়োজিত। এসব অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের ক্যান্টিনগুলোতে স্বাস্থ্যকর খাবার সহজপ্রাপ্য নয়। বরং বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর আগ্রাসনী বিজ্ঞাপন ও তাদের বাজার প্রসারের ফলে আমাদের দেশীয় অনেক ফল-মুল, শাক সব্জী বর্তমান প্রজন্মের প্রতিনিধিরা চেনেন না। এই জন্য তিনি প্রত্যেক পরিবার ও প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার প্রতি সুদৃষ্টি দিতে বলেন।
দেবরা ইফরইমসন বলেন, সুস্থ্য শরীর ও মন আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে আরো আনন্দদায়ক করতে পারে। স্বাস্থ্যকর জীবন সম্পর্কে সচেতনতা এবং কিছু আচরণগত পরিবর্তন আনলে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এজন্য সর্বপ্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, অফিসগুলোতে যে সমস্ত ক্যান্টিন আছে তা স্বাস্থ্যকর খাবারের অব্যাহত যোগান নিশ্চিত করতে হবে। অস্বাস্থ্যকর খাবার বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার বিজ্ঞাপন বিভিন্ন গণমাধ্যমে জন্য গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।
ফরিদা আখতার বলেন, স্বাস্থ্যকর খাবার সু-স্বাস্থ্যের নিয়ামক। কর্মব্যস্ততার অজুহাতে আমরা প্রতিনিয়ত অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছি। প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্টফুড, জাঙ্কফুড, কোমলপানীয় আমাদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যাচ্ছে। আসলে, জীবন ধারনের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণের বিকল্প কিছু নেই।
রওশন আরা ইসলাম বলেন, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কোলেস্টরল ও উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন প্রাণঘাতি ব্যাধি থেকে রক্ষা পেতে ফাস্টফুডের মতো অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার করা জরুরী। অসংক্রামক রোগের বিষয়ে এখনই সচেতন হতে হবে। চিকিৎসার চেয়ে রোগ প্রতিরোধকেই প্রাধান্য দিতে অস্বাস্থ্যকর খাদ্য সরবরাহ কমিয়ে আনতে হবে।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট’র এর প্রকল্প কর্মকর্তা শারমীন আক্তার রিনি এর সঞ্চালনায় সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন নাট্যকার তুষার চন্দন , মর্ডাণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসনাত এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, আশা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়, পিপলস বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ।