English | Bangla
স্থায়ীত্বশীল তামাক নিয়ন্ত্রণে সারচার্জের অর্থে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী গ্রহণ করা জরুরী
বাংলাদেশ ৪৩.৩% (৪১.৩ মিলিয়ন) প্রাপ্ত বয়স্ক লোক তামাক ব্যবহার করে। এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে তামাকের ভয়াবহ প্রভাব হতে মুক্ত রাখতে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।  ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, সকাল ১১টা,কনফারেন্স লাউঞ্জ, জাতীয় প্রেসক্লাব,ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্টের আয়োজনের “দীর্ঘস্থায়ী তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ এবং করনীয়” শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
 
জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতি (নাটাব) এর সভাপতি ও বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের উপদেষ্টা মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু’র সভাপত্বিতে  সেমিনারে বক্তব্য রাখেন মো: মুজিবুল হক, প্রতিমন্ত্রী, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, খন্দকার রাকিবুর রহমান, মহাপরিচালক, এনজিও বিষয়ক ব্যুরো, মুহাম্মদ রূহুল কুদ্দুস সমস্বয়কারী, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল। গাউস পিয়ারী পরিচালক ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট,  আবু নাসের খান চেয়ারম্যান পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলন ও উপদেষ্টা বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট,  সৈয়দ মাহবুবুল আলম কারিগরি উপদেষ্টা দ্যা ইউনিয়ন। সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন সৈয়দা অনন্যা রহমান, কর্মসূচি ব্যবস্থাপক, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট, সঞ্চালনা করেন মারুফ হোসেন, কর্মসূচি ব্যবস্থাপক, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট। 
 
মো: মুজিবুল হক বলেন, মানুষ এখন তামাকের কুফল সর্ম্পকে আগের চেয়ে অনেক সচেতন। তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি মানুষকে তামাক সেবনে আরো অধিক নিরুৎসাহিত করবে। তিনি নির্বাচনে বিড়ি, সিগারেটের ব্যবহার বন্ধে নির্বাচন কমিশনার ও প্রার্থীদের এগিয়ে আসার আহবান জানান। তিনি আরো বলেন, স্থায়ীত্বশীল তামাক নিয়ন্ত্রণে সারচার্জের অর্থে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী গ্রহণ করা জরুরী এবং সারচার্জ ব্যবস্থাপনা নীতিটি চুড়ান্তকরনে আমার সমর্থন থাকবে। 
 
মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু বলেন, সরকার ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে  তামাকমুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তবে স্থায়ীত্বশীল তামাক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এখনো রয়েছে অনেক চ্যালেঞ্জ। এসকল চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে প্রয়োজন সমন্বিত কার্যক্রম ও যথাযথ উদ্যোগ। ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে সরকার সকল তামাকজাত দ্রব্যের উপর ১% সারচার্জ আরোপ করেছে। কিন্তু  দীর্ঘসময় অতিবাহিত হলেও নীতিটি এখনো চুড়ান্ত হয়নি। এ বিষয়ে অবিলম্বে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরী।  
 
সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, বাংলাদেশের ৬১% মৃত্যুর কারন অসংক্রামক রোগ। তামাক কোম্পানীগুলোর কুটকৌশলের কারণে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশের যে সুনাম রয়েছে তা অক্ষুন্ন রাখতে হলে তামাক নিয়ন্ত্রণের প্রতিবন্ধকতাগুলো অতিক্রমে উদ্যোগী হবে। এ ক্ষেত্রে এফসিটিসির আর্টিক্যাল ৫.৩ অনুসারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী। 
 
আবু নাসের খান বলেন, তামাক চাষ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি সরূপ। তাই  কৃষি জমিতে তামাক চাষ নিষিদ্ধ করতে হবে। জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি, তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতি, সারচার্জ ব্যবস্থাপনা নীতি প্রণয়নের যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে তা দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন। 
 
মুহাম্মদ রূহুল কুদ্দুস বলেন, সরকারী ও বেসরকারী সংগঠনগুলোর সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে এগিয়ে নেবার প্রচেষ্টা অব্যহত রয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি, তামাক চাষ নীতি এবং জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী প্রণয়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নেতৃর্ত্বে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল আন্তঃ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করছে। 
 
খন্দকার রাকিবুর রহমান বলেন, শুধুমাত্র আইন প্রয়োগের মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে আসতে হবে সকলকে। এক্ষেত্রে জনসচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী সংস্থাগুলোও এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে।
 
গাউস পিয়ারী বলেন, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, তামাক কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী প্রচারণা এবং উদ্ধুদ্ধকরণ কার্যক্রমের প্রেক্ষিতে মানুষের মাঝে তামাক ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা দীর্ঘস্থায়ী তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য উৎকন্ঠার বিষয়। কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণে তামাকজাত দ্রব্যকে একক কর কাঠামোতে আনা প্রয়োজন। পাশাপাশি খোলা ও খুচরা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধ করতে হবে। 
 
সেমিনারে প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোশিয়েশন, আধূনিক, বুড়িগঙ্গা বাচাঁও আন্দোলন, বাংলাদেশ গালস গাইড এসোসিয়েশন, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ, ঢাকা আইডিয়াল স্কুল, আলিফ আইডিয়াল স্কুল, একলাব, ব্র্যাক, কারিতাস, সুশীলন, ঘাসফুল, ডাস বাংলাদেশ, নবনীতা, বিএনপিএস, প্রদেশ, উদ্যোগ বাংলাদেশ ইয়ূথ ফাস্ট কর্নসার্ণ, গ্রীণ মাইন্ড সোসাইটি, মাস্তুল, হিমু পরিবরন, পাবলি হেলথ ফাউন্ডেশন, মর্ডাণ ক্লাব, বীনা সংস্থা, ইউসেফ বাংলাদেশ, গ্রামীণ শিক্ষা, আল ইমরান ফাউন্ডেশন, মানবাধিকার সংস্থা, সম্প্রীতি পরিবার এবং এইড ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।