English | Bangla
সারচার্জ ব্যবস্থাপনা নীতিসহ সকল তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে ধূর্ত তামাক কোম্পানীর প্রভাবমুক্ত রাখার আহবান

“সবার আগে আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি স্বাক্ষর ও অনুস্বাক্ষর করার পরও তামাক নিয়ন্ত্রণে দক্ষিণ এশিয়ান দেশগুলোতে তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। মূলত নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিসহ প্রাণঘাতী পণ্যের ব্যবসায়ী ধূর্ত তমাাক কোম্পানিগুলোর নানাবিধ অপচেষ্টার কারণেই বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণে পিছিয়ে রয়েছে। তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় সকল ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের উপর ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ আরোপ করা হয় কিন্তু এই আরোপকৃত অর্থ ব্যবহারের জন্য কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকার কারনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ১৮ জুলাই, ২০১৭ সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট’র উদ্যোগে সারচার্জ ব্যবস্থাপনা নীতিসহ সকল তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম তামাক কোম্পানীর প্রভাবমুক্ত রাখার দাবিতে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে এ বক্তব্য তুলে ধরা হয়। 
 
ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার সৈয়দা অনন্যা রহমান এর সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন এর সাধারন সম্পাদক হেলাল আহমেদ, এইড ফাউন্ডেশন-এর সিনিয়র এডভোকেসি অফিসার কাজী মো. হাসিবুল হক, টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি) এর গবেষনা সহকারী ফারহানা জামান লিজা, প্রদেশ এর নির্বাহী পরিচালক অনাদি কুমার মন্ডল, বাঁচতে শিখ নারী’র নির্বাহী পরিচালক ফিরোজা বেগম, ইয়ূথ সান এর সভাপতি মাকিবুল হাসান বাপ্পি। কর্মসূচিটি সঞ্চালনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট’র নেটওয়ার্ক কর্মকর্তা শুভ কর্মকার। এসময় তরুণ নেতৃত্ব বাংলাদেশ, নবনীতা নারী কল্যান সংস্থাসহ তামাক বিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন ।
 
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে হেলাল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের কারণে ১২ লক্ষ মানুষ হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়বেটিস, ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদী রোগসহ প্রাণঘাতী অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়। প্রতিবছর দেশে তামাক ব্যবহারজনিত কারণে ৫৭ হাজার মানুষ অকালে প্রাণ হারায় এবং  ৩,৮২,০০০ জন পঙ্গুত্ব বরণ করে। তামাকের ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে। 
 
সৈয়দা অনন্যা রহমান বলেন, বর্তমানে আমদানি ও বাংলাদেশে উৎপাদিত সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্য থেকে ১% হারে সারচার্জ আদায় হচ্ছে। কোন নীতি না থাকায় আদায়কৃত অর্থ তামাক নিয়ন্ত্রণে ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল গতবছর স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ব্যবস্থাপনা নীতি, ২০১৬ প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত নীতি প্রণয়ন সম্পন্ন হয়নি। এ নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়া দ্রুত করার দাবি জানাই। 
 
কাজী মো. হাসিবুল হক বলেন, তামাক কোম্পানীগুলো তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস, আইন সংশোধন, তামাকজাত দ্রব্যের কর বৃদ্ধি ও মোড়কে ছবিসহ স্বাস্থ্য সর্তকবানী প্রদান এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ করতে বিভিন্ন ধরনের কুটকৌশল অবলম্বন করে আসছে। সম্প্রতি তামাক কোম্পানীগুলো সারচার্জ ব্যবস্থাপনা নীতি প্রণয়ন কার্যক্রমকে বাধাঁগ্রস্থ করতে চেষ্টা করছে। তামাক কোম্পানীসমুহের এধরনের অপচেষ্টা প্রতিহত করা জরুরী।
 
ফারহানা জামান লিজা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তামাক কোম্পানীগুলো তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করতে নীতি নির্ধারকদের প্রভাবিত করার অপচেষ্টা ও কুটকৌশলের আশ্রয় নেয়। আর্ন্তজাতিক চুক্তি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) এর আর্টিক্যাল ৫.৩ অনুসারে তামাক কোম্পানীর এধরনের প্রভাব থেকে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে সহায়ক নীতিসমুহ সুরক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী। 
 
বক্তারা আরো বলেন, বৈশ্বিক পরিকল্পনা ও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা অনুযায়ী তামাক নিয়ন্ত্রণে আমাদের লক্ষ্য কী তা পরিস্কার। কিন্তু কিভাবে এসব লক্ষ্য অর্জিত হবে, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনসহ বিদ্যমান নীতিসমূহ বাস্তবায়নে কোন ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে তা সবার কাছে পরিস্কার হওয়া জরুরি।