“নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিসহ প্রাণঘাতী পণ্যের ব্যবসায়ী ধূর্ত তমাাক কোম্পানিগুলোর নানাবিধ অপচেষ্টা সত্বেও তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক। এ অগ্রগতি স্থায়িত্বশীল ও টেকসই করতে ধারাবাহিক কর্মসূচিসম্বলিত সুনির্দিষ্ট জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।” ১১ এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এবং বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর যৌথ উদ্যোগে “খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি দ্রুত পাশ এবং বাস্তবায়নের দাবীতে কর্মপরিকল্পনা গ্রহন” শীর্ষক অবস্থান কর্মসূচিতে এ পরামর্শ তুলে ধরা হয়।
ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার সৈয়দা অনন্যা রহমান এর সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতি (নাটাব) সেক্রেটারি জেনারেল খায়রুদ্দিন আহমেদ মুকুল, এলআরবি ফাউন্ডেশন’র নির্বাহী পরিচালক রাজিয়া সুলতানা, এইড ফাউন্ডেশন-এর সিনিয়র এডভোকেসি অফিসার কাজী মো. হাসিবুল হক, টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি) এর গবেষনা সহকারী মহিউদ্দিন রাসেল, সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন এর বংশাল থানা সভাপতি কেমেলিয়া চৌধুরী প্রমুখ। কর্মসূচিটি সঞ্চালনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট’র নেটওয়ার্ক কর্মকর্তা শুভ কর্মকার।
খায়রুদ্দিন আহমেদ মুকুল বলেন, বাংলাদেশে এর আগে সুনির্দিষ্ট জাতীয় কর্মপরিকল্পনা (ন্যাশনাল স্ট্রাটেজিক প্ল্যান অব একশান ফর টোব্যাকো কন্ট্রোল ২০০৭-২০১০) বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। কিন্তু ২০১০ এর পর দেশে আর কোন সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়নি। কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা না থাকায় সরকারি বিভিন্ন সংস্থা বিচ্ছিন্নভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল অত্যন্ত সক্রিয় থাকলেও তামাক নিয়ন্ত্রণ কাজের সমন্বয় সাধন ব্যহত হচ্ছে। তাই বর্তমানে বিদ্যমান আইন বাস্তবায়নসহ তামাক নিয়ন্ত্রণের সার্বিক বিষয়বলীকে গুরুত্ব দিয়ে একটি কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।
সৈয়দা অনন্যা রহমান বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট কোন কর্মপরিকল্পনা না থাকায় তামাক কোম্পানিগুলোর অপচেষ্টা প্রতিহত করা সম্ভব হচ্ছে না। নীতিগত অগ্রগতি সত্বেও এসব নীতি বাস্তবায়নসহ তামাক নিয়ন্ত্রণের অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে।একটি সুনির্দিষ্ট ও কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা থাকলে সে অনুযায়ী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কার্যকর বাস্তবায়নসহ দেশকে পর্যায়ক্রমিকভাবে তামাকমুক্ত করতে ধারাবাহিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন সহজ হবে।
বক্তারা বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব অনুধাবন করে এফসিটিসির বাস্তবায়নকে জাতিসংঘের ২০১৬-২০৩০ পর্যন্ত, ১৫ বছরের কর্মপরিকল্পনায় (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস্-এসডিজি) অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। হৃদরোগ, স্ট্রোক, এজমাসহ ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদী রোগ, বিভিন্ন রকম ক্যান্সার ও ডায়বেটিস ইত্যাদি অসংক্রামক রোগের জন্য প্রধানত দায়ী ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার। সর্বশেষ হিসাব মতে, পৃথিবীতে মোট মৃত্যুর ৬৩% অসংক্রামক রোগে মৃত্যুবরণ করছে। তাই অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিও এসডিজিতে অন্তর্ভূক্ত। উপরন্তু, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে ২০২৫ সাল পর্যন্ত যে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, সেখানেও তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এসব বৈশ্বিক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ অঙ্গীকারাবদ্ধ।
বক্তারা আরো বলেন, বৈশ্বিক পরিকল্পনা ও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা অনুযায়ী তামাক নিয়ন্ত্রণে আমাদের লক্ষ্য কীÑতা পরিস্কার। কিন্তু কিভাবে এসব লক্ষ্য অর্জিত হবে, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনসহ বিদ্যমান নীতিসমূহ বাস্তবায়নে কোন ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে Ñ তা সবার কাছে পরিস্কার হওয়া জরুরি। সর্বোপরি, তামাক চাষ-তামাকের ব্যবহার ও তামাক কোম্পানির কার্যক্রম এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা জরুরি। আমরা চাই, সরকার শীঘ্রই সংশ্লিষ্ট সবার মতামতের ভিত্তিতে একটি কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করবে।