বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২ কোটি ৪৫ লক্ষ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছে। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা ১৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যার প্রায় ৮০ ভাগ লোক বসবাস করে। বিশাল এই জনগোষ্ঠীর কথা চিন্তা করেই সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস- এ অন্তর্ভুক্তিকরণ বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে নগর পরিকল্পনা ও নকশায় অন্তর্ভুক্তিকরণ বিষয়টিকে এখনই চিন্তা করা প্রয়োজন। পরিকল্পনায় অন্তর্ভূক্তিকরণ বিষয়টিকে প্রাধান্য দিলে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ মানুষ উপকৃত হবে। কারণ সার্বজনীন এই পরিকল্পনা ও নকশা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পাশাপাশি প্রবীণ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে। এর যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সকল স্থানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ১৬ আগস্ট ২০১৬, সকাল ১১.০০ টায় রায়েরবাজার ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর কৈবর্ত সভাকক্ষে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর উদ্যোগে আয়োজিত Universally Accessible Design শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ আর্কিটেক্টস (ইউআইএ) এর পরিচালক জোসেফ কোয়ান। তিনি বলেন, নগর পরিকল্পনা ও নকশায় অন্তর্ভুক্তিকরণ বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে আলাদা কোন আইন, নীতিমালা প্রণয়নের প্রয়োজন নেই। ইতিপূর্বে প্রণীত সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলসসহ অন্যান্য পরিকল্পনায় বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুরক্ষার জন্য ইউএন কর্তৃক প্রনীত কনভেনশনে স্বাক্ষর এবং অনুমোদন করেছে। কিন্তু বাস্তবে তার কোন প্রয়োগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ২০২৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশে প্রতি ১০ জনে একজন হবেন প্রবীণ ব্যক্তি এবং ২০৫০ সাল নাগাদ তা হবে প্রতি ৫ জনে একজন। কাজেই সকলের জন্য বাসযোগ্য শহর গড়ে তুলতে পরিকল্পনা ও নকশায় অন্তর্ভুক্তিকরণ বিষয়টিকে এখনই প্রাধান্য দেয়া প্রয়োজন। শিক্ষা, কর্মসংস্থান, আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা, যাতায়াত, অন্যান্য সেবা এবং সর্বপরি বিনোদনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই সার্বজননীন প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। সরকারি এবং বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস- এর মত সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস- এ সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হবে।
স্থপতি সৈয়দা সুলতানা এ্যানি বলেন, সমাজে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয়তার কথা উপেক্ষিত। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কথা চিন্তা করে সার্বজননীন প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করতে সকল অংশীদারদের সমন্বয়ে একটি পরিকল্পনা করে ধাপে ধাপে তার বাস্তবায়ন করতে হবে। যেখানে স্থপতিদের বড় একটি ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন। সিআরপি এর এডভোকেসি এন্ড নেটওয়ার্কিং অফিসার মাসুদ রানা বলেন, প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। ভবিষ্যত পরিকল্পনা বা আগামীর জন্য বসে না থেকে এখন থেকেই কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থাগুলো নিজস্ব স্থাপনাগুলোতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করতে পারে।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, বাংলাদেশে জনসেবার খাতগুলোর মধ্যে সকলের প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কেননা বিশাল এই জনগোষ্ঠীকে যদি সুযোগ দেয়া যায় তাহলে দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভ’মিকা রাখতে পারবে। এজন্য সুনির্দিষ্ট একটি কর্ম পরিকল্পনা থাকতে হবে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাবেক সাধারন সম্পাদক মহিদুল হক খান বলেন, সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস- এ যে অন্তর্ভুক্তকরণের বিষয়টি বলা হয়েছে, তা বাস্তবায়নে সরকার এবং বেসরকারি সংস্থাকে একযোগে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে কিভাবে সমাজের সকল শ্রেণীকে পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা যায় সে বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারন করতে হবে।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রকল্প সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম সুজন বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যক্রমে সার্বজননীন প্রবেশগম্যতা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সহকারি প্রকল্প কর্মকর্তা তালুকদার রিফাত পাশা বলেন, সার্বজনীন পরিকল্পনার কথা বলা হলে আমাদের অনেকেই অর্থকে প্রধান সমস্যা মনে করেন। বিশ্বের অন্যান্য শহরের সার্বজনীন প্রবেশগম্যতার যে চিত্র পরিলক্ষিত হয়, সেখানে অর্থকে প্রাধান্য না দিয়ে সার্বজনীন প্রবেশগম্যতাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। সার্বজনীন প্রবেশগম্যতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে দৃষ্টিভঙ্গি, মানসিকতা এবং সদ্বিচ্ছা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
হেলথ্ ব্রিজের আঞ্চলিক পরিচালক দেবরা ইফরইমসন এর সঞ্চালনায় সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন, এভান্ট গার্ডস এর প্রধান স্থপতি শাহজাবিন কবীর, ইনস্টিটিউট অফ ওয়েল বিং এর পরিচালক মীর শাফি, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সহকারি প্রকল্প কর্মকর্তা শামীমজাহান এবং পিএনএসপি এর বাপ্পী প্রমুখ।