আমাদের দৈনন্দিন ব্যস্ত জীবনযাত্রায় ব্যায়াম বা খেলাধুলার মত শারীরিক শ্রমের জন্য সময় বের করা অত্যন্ত কঠিন। শিশুরাও এর ব্যতিক্রম নয়। ফলে প্রয়োজনীয় শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে শিশুরা অতিরিক্ত ওজন, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, নিদ্রাহীনতাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং তাদের মধ্যে নেতিবাচক মানসিকতার প্রকাশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নগরে খেলার মাঠ না থাকা এবং বাসা বাড়িতে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় শিশুদের প্রয়োজনীয় শারীরিক পরিশ্রম হয় না। প্রতিদিন হেঁটে যাতায়াতের মাধ্যমে শিশুরা প্রয়োজনীয় শারীরিক পরিশ্রম পেতে পারে। এছাড়া ঢাকা শহরের অন্যতম সমস্যা যানজট, যা বিদ্যালয়ে যাওয়া এবং আসার সময়টাতে মারাত্মক আকার ধারণ করে, স্কুলে হেঁটে যাতায়াতের মাধ্যমে হ্রাস করা সম্ভব। অর্থাৎ বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতাাতের ফলে যেমন শিশুর স্বাস্থ্য ভাল থাকবে তেমনি পরিবেশ দূষণ কমবে এবং যাতায়াত খরচও সাশ্রয় হবে। শিক্ষার্থীদের স্কুলে নিয়মিত হেঁটে যাতায়াতে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি তারা কিভাবে নিরাপদে হাঁটবে সে বিষয়ে গত 04 আগস্ট 2016 সচেতনতা বৃদ্ধিতে রাজধানীর ধানমন্ডির রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে আয়োজিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে বক্তারা এ কথা বলেন।
রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয় এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে “হেঁটে যাই বিদ্যালয়, দেহ-মন সুস্থ রয়” শ্লোগানে ”সুস্থতায় স্কুলে হেঁটে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ চাই” কর্মসূচির অংশ হিসেবে রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণীর প্রায় তিনশত শিক্ষার্থী এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে। প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার সময় জানা যায়, ৯৯% শিক্ষার্থী হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে। তাদের অধিকাংশই বিদ্যালয় থেকে পাঁচ মিনিটের দূরত্বে বসবাস করে। শিক্ষার্থীরা আরো জানায়, তাদেরকে হাঁটাপথে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মূখীন হতে হয়। এর মধ্যে বেপরোয়া গাড়ি চালানো, গাড়ির হর্ণ, বৃষ্টির দিনে গাড়ির চাকা থেকে কাদা ছিটকে কাপড় ময়লা হওয়া, সরু রাস্তায় গাড়ি দেওয়ালের দিকে ঘেষে চলা, যানজট অন্যতম। শিক্ষার্থীরা চিঠি লেখা, ওয়াকিং ক্লাব গঠনের মাধ্যমে হাঁটার জন্য নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দময় পরিবেশ তৈরির জন্য কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে।
প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা মো আতিকুর রহমান বলেন, প্রতিদিন ১ ঘন্টা শরিীরিক পরিশ্রম করা অত্যন্ত জরুরী। যেহেতু নগর জীবনে আমরা এ সুযোগ পাই না তাই হেঁটে যাতায়াতের মাধ্যমে আমরা আমাদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারি। তিনি বিভিন্ন দেশের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, বিদেশে পথচারীদের প্রাধান্য দিয়ে অবকাঠামো তৈরি করা হয়। আমাদের দেশেও যদি হেঁটে যাতায়াতের অনুকূল অবকাঠামো তৈরি করা হয় তবে জনগণ হেঁটে যাতায়াতে উৎসাহিত হবে এবং যানজট কমবে ও জ্বালানি চাহিদা হ্রাস পাবে। এ লক্ষ্যে তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লিখে তারাও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সহকারি এডভোকেসি কর্মকর্তা নাঈমা আকতার বলেন, রায়েরবাজার এলাকায় অধিকাংশ শিশুরা নিকটবর্তী স্কুলে পড়ালেখা করে থাকে। এখানে নিরাপদে ও স্বচ্ছন্দে হাঁটার পরিবেশ তৈরি করা গেলে একটি উদাহরণ সৃষ্টি হবে। যা পরবর্তীতে অন্যান্য এলাকার জন্য অনুসরণীয় হতে পারে। এজন্য স্থানীয় অধিবাসীদের এগিয়ে আসতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে। এছাড়া কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করা প্রয়োজন।
রায়ের বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মেহেরুন্নেসা বলেন, প্রতিটি কমিউনিটিতে সমমানের স্কুল থাকা এবং স্থানীয় স্কুলে শিশুদের পড়ালেখা বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। যাতে করে অল্প দূরত্বে শিশুরা হেঁটে স্কুলে যেতে পারে। সম্প্রতি সরকার এ বিষয়টি বিবেচনা করে স্থানীয়দের জন্য স্কুলে ৪০ শতাংশ কোটা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিশুদের অল্প দূরত্বের মধ্যে হেঁটে স্কুলে যাতায়াতের পথকে সুগম করা যায়।
প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহেরুন্নেসা। প্রশিক্ষণ প্রদান করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ট্রাস্ট) এর প্রকল্প কর্মকর্তা মো আতিকুর রহমান। কর্মসূচিতে আরো উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সহকারি এডভোকেসি কর্মকর্তা তানজিদা হক, রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ প্রমুখ।