সুস্থ থাকার জন্য একজন মানুষকে প্রতিদিন অন্তত এক ঘন্টা শারীরিক পরিশ্রম করতে হয়। বর্তমানে নগরে পর্যাপ্ত উন্মুক্ত স্থান না থাকায় সকলে এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সমাজের সকলের উপর, বিশেষত শিশু-কিশোররা অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রমের অভাব তাদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠাকে বিঘিœত করছে। নগরে পর্যাপ্ত উন্মুক্ত স্থান প্রদান একটি সময় সাপেক্ষ বিষয়। কিন্তু হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াতের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের শারীরিক কার্যক্রমের সুযোগ করে দেয়া সম্ভব। কিন্তু হাঁটার যথাযথ পরিবেশ না থাকায় শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক হেঁটে যাতায়াতে নিরুৎসাহিত হয়। হাঁটার নিরাপদ পরিবেশ না থাকা সত্ত্বেও কোন কোন এলাকায় শিক্ষার্থীরা হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে। শিক্ষার্থীদের স্কুলে নিয়মিত হেঁটে যাতায়াতে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি তারা কিভাবে নিরাপদে হাঁটবে সে বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে গত 17 জানুয়ারি 2017 রাজধানীর ধানমন্ডির রায়েরবাজারের আলিফ আইডিয়াল পাবলিক স্কুলে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর উদ্যোগে হেঁটে যাই বিদ্যালয়, দেহ মন সুস্থ্য রয় শীষর্ক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজিত হয়। প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শেষে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের সামনে স্কুলে নিরাপদে হেঁটে যাতায়াতের পরিবেশ সৃষ্টির দাবিতে একটি মানববন্ধনের আয়োজন করে।
প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আতিকুর রহমান, প্রকল্প কর্মকর্তা, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট। তিনি বলেন, প্রতিদিন ১ ঘন্টা শারীরিক পরিশ্রম করা অত্যন্ত জরুরী। যেহেতু নগর জীবনে আমরা এ সুযোগ পাই না তাই হেঁটে যাতায়াতের মাধ্যমে আমরা আমাদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারি। হেঁটে যাতায়াতের অনুকূল অবকাঠামো তৈরি করা হলে জনগণ হেঁটে যাতায়াতে উৎসাহিত হবে এবং যানজট কমবে ও জ্বালানি চাহিদা হ্রাস পাবে।
প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শেষে আয়োজিত মানববন্ধনে মারুফ হোসেন, প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট বলেন, স্কুলের সময় ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় ঢাকা শহরে যানজট সমস্যা তীব্রতর হয়েছে। রায়েরবাজার এলাকায় বিভিন্ন বিদ্যালয়ে জরিপের মাধ্যমে দেখা গেছে, এলাকার প্রায় ৯৫ শতাংশ হেঁটে স্কুলে যাতায়াত করলেও ব্যক্তিগত গাড়ির অধিক গতির জন্য ৭৭.৩৮ শতাংশ এবং রাস্তায় ময়লা আবর্জনার জন্য ৭৩.২১ শতাংশ শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন সমস্যায় পড়ছে। রায়েরবাজর থেকে শংকর পর্যন্ত গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ, হর্ণ বাজানো বন্ধ করে পথচারীবান্ধব করা হলে অন্যান্য এলাকার জন্য উদাহরণ সৃষ্টি হবে।
জুয়েল হাসান রাজ, প্রধান শিক্ষক, আলিফ আইডিয়াল পাবলিক স্কুল বলেন, নগর পরিকল্পনায় অভিভাবক, শিক্ষার্থী এবং সাধারণ জনগনকে এগিয়ে আসতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ শহর গড়ে তুলতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সরকার যানজট হ্রাসে স্কুলে ভর্তির ব্যাপারে স্থানীয় এলাকায় ৪০ শতাংশ কোটার যে ব্যবস্থা করেছেন তা বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
নাজনীন কবীর, ডেপুটী প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট বলেন, ঢাকা শহরে স্কুলে হেঁটে ৩০ শতাংশ যাতায়াত হয়। অভিভাবকদের পছন্দানুযায়ী স্কুলে সন্তানদের পড়ানোর জন্য দূরত্ব বেশি হওয়ার কারণে গাড়ির উপর নির্ভরশীলতা দেখা যায়। এমনকি অনেক সময় সামাজিক মর্যাদা বাড়ানোর ভ্রান্ত ধারনা থেকে অনেকেই অল্প দুরত্বেও সন্তানদের গাড়ি করে আনা নেওয়া করে থাকেন। তবে হাঁটার পরিবেশ উন্নত না হওয়ার কারণেও অনেকেই গাড়ি অথবা রিকশার উপর নির্ভরশীল।
প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জুয়েল হাসান রাজ। মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান, সহকারি এডভোকেসি অফিসার নাঈমা আকতার, তানজিদা হকসহ সকল কর্মকর্তাবৃন্দ। এছাড়াও আলিফ আইডিয়াল পাবলিক স্কুলের শতাধিক শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী এতে অংশগ্রহণ করে।