সারা বিশ্বে প্রতিবছর তামাক সেবনের কারণে প্রায় ৬ লাখ লোক অকালে মৃত্যুবরণ করে। যার ৭০ শতাংশই বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশসমূহে। এ অনাকাঙ্খিত অকাল মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে সারাবিশ্ব সোচ্চার। তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকার জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন, সংশ্লিস্ট নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অথচ তামাক কোম্পানীগুলো নানাভাবে আইন লংঘনের পাশাপাশি বাজার সম্প্রসারণের কৌশল হিসাবে আয়োজন করছে ব্যাটল অব মাইন্ডস নামক কর্মসূচী। বাজার সম্প্রসারনের পাশাপাশি এসকল কর্মসূচী নীতিনির্ধারকদের প্রভাবিত করার একধরনের অপকৌশল।
১৪ জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে “জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে বিএটি’র প্রতারনামূলক কর্মসূচি Battle of Mind বন্ধ করার দাবীতে” বাংলাদেশ তামাক বিরোধ জোট আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে উপরোক্ত বিষয় তুলে ধরেন তামাক বিরোধী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন- প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল হেলাল আহমেদ, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক সৈয়দা অনন্যা রহমান, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষণা সহকারি ফারহানা জামান লিজা, গ্রীনমাইন্ড সোসাইটি’র সভাপতি আমির হাসান, এইড ফাউন্ডেশন এর প্রকল্প কর্মকর্তা তৌহিদ উদ দৌলা রেজা, টিসিআরসির প্রকল্প কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন, প্রদেশের এর নির্বাহী পরিচালিক অনাদি কুমার মন্ডল, স্বপ্নের সিঁড়ি সংস্থা’র সাধারন সম্পাদক উম্মে সালমা, নবনীতা মহিলা কল্যান সমিতির নির্বাহী পরিচালক আতিকা হোসেন, বাঁচতে শিখ নারী’র নির্বাহী পরিচালক ফিরোজা বেগম, মাধবিকা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম রাজ্জাক, এলআরবি ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক সুলতানা রাজিয়া।
বক্তারা বলেন, দেশের প্রতিভাবান, তরুণ, মেধাবী শিক্ষার্থীদের তামাকের মত এমন স্বাস্থ্যহানীকর পন্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে উচ্চ বেতনে চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে এ কার্যক্রম চালিয়ে আসছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো। দেশের মেধাবী ও সম্ভাবনাময় তরুণ সমাজকে ক্ষতিকর তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদনকারী কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হবার প্রলোভন দেখানো কতটা নৈতিক তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। এছাড়া প্রতিবছর উল্লেখিত প্রতিটি কর্মসূচীতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুসারে বিগত ১২ বছরের (২০০৪-২০১৫) হিসাব অনুসারে বিএটি কর্মসংস্থানের নামে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে চাকুরী দিয়েছে মাত্র ১০০ জনকে । এ থেকেই বিএটির এই কার্যক্রমের মূল ঊদ্দেশ্য বোঝা যায়। উল্লেখ্য, বিদ্যমান ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (সংশোধনী ২০১৩) এর ৫(গ) ধারায় তামাক কোম্পানির নাম, সাইন, ট্রেডমার্ক, প্রতীক ব্যবহার করে এ ধরনের কোন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের ব্যয়ভার বহন ও পুরষ্কার প্রদান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি এই ধারা লঙ্ঘন করলে অনধিক একলক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা অনুর্ধ্ব তিন মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড বা উভয়দন্ডের বিধান বলবৎ আছে। আইনকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ব্যান্ড প্রমোশনের আড়ালে মৃত্যুবিপননকারী তামাক কোম্পানীটির প্রতারণামূলক এ কর্মসূচী বন্ধ করা প্রয়োজন।
বক্তারা আরো বলেন, আর্ন্তজাতিক অভিজ্ঞতা অনুসারে, সারাবিশ্বে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ করতে কোম্পানীগুলো নানাভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় লিপ্ত থাকে। তামাক কোম্পানীগুলোর এধরনের প্রভাব প্রতিহত করতে আর্ন্তজাতিক চুক্তি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) এর আর্টিক্যাল ৫.৩ তে তামাক নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন ছাড়া তামাক কোম্পানীগুলোর সাথে সকল যোগাযোগ এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মীরা নীতি নির্ধারকদের তামাক কোম্পানীর প্রচারনামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান। কর্মসূচিতে তামাক বিরোধী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সাংবাদিক ও অন্যান্য শ্রেনী পেশার মানুষের ব্যাপক সাড়া পাওয়া যায়।