English | Bangla
এফসিটিসির আর্টিকেল ৫.৩ এর আলোকে কোড অব কন্ডাক্ট বাস্তবায়নের আহবান
জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন ও কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে এফসিটিসির আর্টিকেল ৫.৩ এর আলোকে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলসহ সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের কোড অব কন্ডাক্ট বা অনুসরণীয় নীতিমালা গ্রহণ করা জরুরি। ২৭ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট’র আয়োজনে রায়েরবাজারে সংস্থার নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এফসিটিসি আর্টিকেল ৫.৩ বাস্তবায়নে খসড়া কোড অব কন্ডাক্ট বিষয়ক সভায় (Sharing meeting on draft code of conduct for FCTC Article 5.3 implementation) বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক সংগঠন দি ইউনিয়ন এর কারিগারি পরামর্শক এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম, তামাক বিরোধী নারী জোটের সমন্বয়ক সাঈদা আক্তার, ইপসা’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজমুল হায়দার, এতে খসড়া ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ বিষয়ে আলোকপাত করেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘সমস্বর’ এর নির্বাহী সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সুজন। সভাটি সঞ্চালনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক সৈয়দা অনন্যা রহমান। 
 
প্রবন্ধে আমিনুল ইসলাম সুজন বলেন, তামকের বহুমাত্রিক ক্ষতি কমিয়ে আনতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০০৩ সালে চুড়ান্ত করেছে আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ‘ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল’ (এফসিটিসি)। এর একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল ৫, যেখানে তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য অনুসরণযোগ্য বাধ্যবাধকতা উল্লেখ রয়েছে। এর অধীন অনুচ্ছেদ ৫.৩। এতে বলা হয়েছে, “তামাক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক বা তামাক কোম্পানির স্বার্থের চেয়ে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক নীতিমালা বাস্তবায়নে প্রাধান্য পাবে” অর্থাৎ “তামাক নিয়ন্ত্রণসহ জনস্বাস্থ্য নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে তামাক কোম্পানি ও সংশ্লিষ্টদের প্রভাবমুক্ত রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে”। আর্টিকেল ৫.৩ বাস্তবায়ন বিষয়ক নির্দেশনায় সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তামাক কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্ক এড়িয়ে চলার জন্য নীতি বা কোড অব কন্ডাক্ট প্রণয়ন করার কথা বলা হয়েছে।
 
এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, তামাক কোম্পানির আসলে কোন প্রভাব নেই। কারণ, তারা অপরাধী। অপরাধ ধামাচাপা দেবার জন্য আইন লঙ্ঘণ করে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে তামাকজাত প্রণ্যের ব্রান্ড প্রমোশন করছে। অর্থ দিয়ে যতটা প্রভাব বিস্তার করা যায়, তার চেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করা যায় যদি মানুষের নৈতিক অঙ্গীকার থাকে। এদেশে যখন তামাক নিয়ন্ত্রণে কোন আইন ছিলো না, ১৯৯৯ সালে বিএটির ভয়েজ অব ডিসকভারি, ২০০১ সালে বিএটিবি’র ইয়ুথ স্মোকিং প্রিভেনশন ক্যাম্পেইন ও ২০০৩ সালে টেমস সিগারেটের প্রচারণা বন্ধ করেছিলাম। তামাক কোম্পানির কুট-কোশল প্রয়োগ সত্বেও তামাকজাত পন্যের গায়ে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী এসেছে। কাজেই আমাদের প্রভাব তাদের চাইতে বেশি। এখন আইন হয়েছে। তারপরও ‘ব্যাটল অব মাইন্ড’-এর নামে বিএটিবি ক্যাম্পেইনের আড়ালে তামাকজাত প্রণ্যের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে, যা দু:খজনক।
 
সাঈদা আক্তার বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন দ্রুত হচ্ছে। তামাক নিয়ন্ত্রণে আরো অনেকগুলো আইন রয়েছে, যেমন: যেমন রেলওয়ে আইন, মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ/আইন, সিটি করপোরেশন আইন ইত্যাদি। এগুলো নিয়েও কাজ করা যেতে পারে। এসব আইন বাস্তবায়নে সরকারের কৃষি, শিল্পসহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করা দরকার। এজন্য জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলকে সমন্বয়ের দায়িত্ব নিতে হবে। পাশাপাশি প্রস্তাবিত কোড অব কন্ডাক্ট অনুমোদন পেলে এর বাস্তবায়ন মনিটরিং করা প্রয়োজন। দেশের সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে জর্দ্দা কোম্পানির মালিক কতৃক তামাকজাত পণ্যের বিভ্রান্তকর তথ্য প্রচার নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। 
 
নাজমুল হায়দার বলেন, কোড অব কন্ডাক্ট এর মাধ্যমে তামাক কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এই খসড়া কপিটি অত্যন্ত ভালো মানের এবং এতে প্রয়োজনীয় অনেক বিষয় চলে এসেছে। এটি দ্রুত অনুমোদন এবং বাস্তবায়ন করা হবে বলে আমি আশাবাদী। জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল’র কর্মকর্তাদের জন্য যেসব শর্তাবলী রয়েছে তা প্রসংশনীয়। যারা নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন তারা যেন এটি অনুসরণ করেন।
 
উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন মাল্টি টাস্ক এর নির্বাহী পরিচালক আজাদ মল্লিক, এইড ফাউন্ডেশনের প্রকল্প কর্মকর্তা রেজা আহমেদ, টিসিআরসি’র প্রকল্প কর্মকর্তা ফারহানা জামান লিজা, মানবিক’র তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সুমন শেখ প্রমূখ। এয়াড়া বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিকেশন প্রোগ্রাম, একলাব, বিআরডিএস, স্বপ্নের সিঁড়ি, বাঁচতে শিখ নারী সহ তামাক নিয়ন্ত্রণে কর্মরত বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি এতে অংশগ্রহণ করেন।