স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ নীতিমালা দ্রুত চুড়ান্ত জরুরি আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞদের অভিমত
তামাক নিয়ন্ত্রণসহ জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে স্থায়িত্বশীল অর্থায়নে সবরকম তামাকজাত দ্রব্যের উপর ১% সারচার্জ আরোপের সিদ্ধান্ত প্রশংসনীয়। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে এ সারচার্জ আরোপ করা হয়। এ অর্থ তামাক নিয়ন্ত্রণসহ অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে ব্যয় করা দরকার। এতে রোগ প্রতিরোধ ও তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে শক্তিশালী করা সম্ভব হবে। এজন্য সারচার্জ ব্যবহারে প্রক্রিয়াধীন নীতিমালা দ্রুত চুড়ান্ত করা জরুরি।
২২ নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩টায় ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট কৈবর্ত সম্মেলন কক্ষে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট, বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশন ও আন্তর্জাতিক সংগঠন দি ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় এই আহ্বান জানানো হয়। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের মুখপত্র সমস্বর এর নির্বাহী সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সুজন এর সঞ্চালনায় আলোচনা করেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) সহযোগী অধ্যাপক ডা. আসিফ মুজতবা মাহমুদ, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশনের আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক ডা. কাজী সাইফুদ্দিন বেন্নূর, ফ্রান্সভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন দি ইউনিয়ন এর কারিগরি পরামর্শক এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম এবং প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ প্রমুখ। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট-এর পরিচালক গাউস পিয়ারী মুক্তি’র সভাপতিত্বে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার সৈয়দা অনন্যা রহমান।
প্রবন্ধ উপস্থাপক সৈয়দা অনন্যা রহমান বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণগুলো হচ্ছে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়বেটিস, ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদী রোগসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ। এসব রোগের অন্যতম প্রধান তামাক সেবন, ধূমপান ও পরোক্ষ ধূমপান। কার্যকরভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে এসব ভয়াবহ রোগে মৃত্যু অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। সেজন্য তামাক নিয়ন্ত্রণে স্থায়ীত্বশীল আর্থিক যোগান নিশ্চিত করা জরুরি।
চলতি বছরে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক বৈজ্ঞানিক জার্নাল দি লানসেট-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা নিবন্ধের উদ্ধৃতি দিয়ে ডা. আসিফ মুজতবা মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মৃত্যুর প্রথম ৫টি কারণের মধ্যে দুটি ফুসফুসজনিত রোগ, সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাক্টরি পলমনারি ডিজিজ) ও ফুসফুসের শ্বাসনালীর রোগ (এজমা/হাঁপানি ইত্যাদি) রয়েছে। দুটি রোগের জন্য ধূমপান ও পরোক্ষ ধূমপান দায়ী। তাই ধূমপানকে নিরুৎসাহিত ও অধূমপায়ীদের পরোক্ষ ধূমপানের প্রভাব থেকে সুরক্ষায় টেকসই বা কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণ জরুরি। এক্ষেত্রে তামাক নিয়ন্ত্রণে স্থায়ীত্বশীল আর্থিক যোগান ভূমিকা রাখতে পারে।
হেলাল আহমেদ বলেন, সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ ও অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে তামাকজাত দ্রব্যের উপর আরোপিত সারচার্জের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি। এ অর্থ অন্য কোন খাতে যেন ব্যয় না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের সজাগ দৃষ্টি প্রয়োজন। ডা. কাজী সাইফুদ্দিন বেন্নূর বলেন, বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশন ফুসফুসজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে কাজ করে। ফুসফুসজনিত স্বাস্থ্য সমস্যার প্রধান কারণ ধূমপান ও পরোক্ষ ধূমপান। এসব সমস্যা কমিয়ে আনতে তামাক নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার খাত হিসাবে বিবেচনা করতে হবে। আগামী দিনে বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশন তামাক নিয়ন্ত্রণে স্থায়ীত্বশীল আর্থিক যোগান নিশ্চিত করার সামাজিক আন্দোলনে সক্রিয় থাকবে।
এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের উপর সরকার যে ১% সারচার্জ খাতে জমা হওয়া অর্থের পরিমাণ ৩১০ কোটি টাকা। এ অর্থের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনা সম্ভব হবে, যা পর্যায়ক্রমে দেশে হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, সিওপিডি, শ্বাসনালীর অন্যান্য রোগসহ অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে। আশা কথা, সরকার ইতোমধ্যে সারচার্জ ব্যবহার নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন করেছে। এটি যেন তাড়াতাড়ি পাস হয়, সেজন্য বেসরকারি সংগঠন, গণমাধ্যম ও তরুণ প্রজন্মকে সোচ্চার হতে হবে।
গাউস পিয়ারী মুক্তি বলেন, একটি রাষ্ট্রে চিকিৎসা ব্যবস্থা দরকার, কিন্তু তার চাইতে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দেয়া জরুরি। রোগ প্রতিরোধকে গুরুত্ব দিতে তামাক নিয়ন্ত্রণ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যকর খাবার ও জীবন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।