English | Bangla
তামাক নিয়ন্ত্রণে স্থায়ীত্বশীল অর্থনৈতিক যোগান নিশ্চিত করা জরুরী
তামাক সেবনের কারণে প্রতিদিন ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাকসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, তামাকের মাধ্যমে মুখ, গলায় ও ফুসফুসে ক্যান্সার, হাঁপানি, পেটে ঘা, হৃদরোগ, প্যারালাইসিস, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে যক্ষ্মা, বিবর্ণ ক্ষয়প্রাপ্ত দাঁত বা মাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, সময়ের আগে শিশুর জন্ম দেয়া বা কম ওজন সম্পন্ন শিশু জন্ম দেয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস)-এর প্রতিবেন অনুসারে, বাংলাদেশে ধূমপান ও মাদক সেবনের ফলে প্রতি বছর মোট ১২ লাখ মানুষ ৮টি রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, যার মধ্যে চিকিৎসা সুবিধা পাওয়ার পর মারা যায় ৫৭ হাজার এবং স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করে ৩ লাখ ৮২ হাজার মানুষ। অর্থনীতিতে তামাক খাত থেকে আয় ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। সে হিসাবে নিট ক্ষতি ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
 
৮ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গ্রীন মাইন্ড সোসাইটি, ডাব্লিউবিবি ট্রাষ্ট, জনস্বার্থ ফাউন্ডেশন, সুবন্ধন সংগঠন এর যৌথ উদ্যেগে ক্ষতিকর তামাক থেকে পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য এবং অর্থনীতি রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করতে ”তামাক নিয়ন্ত্রণে স্থায়ীত্বশীল অর্থনৈতিক যোগান নিশ্চিত করার দাবীতে  অবস্থান কর্মসূচী পালন করা হয়।
 
গ্রীন মাইন্ড সোসাইটির সভাপতি আমির হাসান মাসুদ এর সভাপতিত্বে কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন সুবন্ধন সংগঠন এর সভাপতি হাবিবুর রহমান, জনস্বার্থ ফাউন্ডেশন এর সভাপতি ডি.এম সাকলাইন, ডাব্লিউবিবি ট্রাষ্ট এর প্রগ্রাম ম্যানেজার সৈয়দা অনন্যা রহমান, সহকারি নেটওয়ার্ক অফিসার শুভ কর্মকার, গ্রীন মাইন্ড সোসাইটির সাধারন সম্পাদক ফারুক হোসেন, নতুন ধারা বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান মোমিন মেহেদী, মানবাধিকার কর্মী আনোয়ার হোসেন, স্বপ্নের সিড়ির নির্বাহী সদস্য লায়লা ফেরদৌসী প্রমুখ।
 
বক্তারা বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের ভুমিকা বিশ্ব পরিমন্ডলে প্রশংসিত হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে এবং তামাক নিয়ন্তণে অর্থায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তামাক নিয়ন্তণে সরকারের কোন ফান্ড না থাকায় সরকারী সংস্থা জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে দাতা সংস্থার অর্থে। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে তামাকজাত দ্রব্যের উপর ১% সারচার্জ আরোপ করে, যা তামাক নিয়ন্তণে অর্থায়নের বিশাল সুযোগ। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, তামাক কোম্পানীগুলো বেশ কৌশলী। তারা জনগণের শুভাকাঙ্খীরুপ ধারণ করে বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি, পানি প্রবাহ, হেলথ্ ক্যাম্পের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে। এসব কর্মসূচির আড়ালে তারা তামাকের বাজার ও বিক্রয় বাড়ানোর জন্য কাজ করে থাকে। সামাজিক দায়বদ্ধতার নামে কোম্পানীগুলোর এসব কর্মসূচি প্রতিহত করা গেলে তামাকবিরোধী আন্দোলন সুফল বয়ে আনবে।
 
বক্তারা আরো বলেন, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষমাত্রায় বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের পর টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা-২০৩০ এ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অন্যান্য বিষয়সহ স্বাস্থ্য খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় ২০৪০ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ থেকে তামাক শতভাগ নির্মূল করার আশা ব্যক্ত করা হয়েছে। যা বাস্তবায়ন করতে এ খাতে প্রচুর অর্থায়ন জরুরী আর এই  জোগান হতে পারে তামাকজাত দ্রব্যের উপর সারচার্জ বৃদ্ধির মাধ্যমে।