তরুণ প্রজন্মকে ধূমপান ও তামাকের নেশায় ধাবিত করার মাধ্যমে সামাজিক সংকট সৃষ্টির জন্য দায়ী ধূর্ত তামাক কোম্পানিগুলো। কারণ, একদিকে তামাকজনিত মৃত্যু ও ভয়াবহতা কমিয়ে আনতে সরকার ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন প্রণয়ন ও সংশোধনসহ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, অন্যদিকে আইন ও সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আইন লঙ্ঘণ করে যাচ্ছে তামাক কোম্পানীগুলো।০সে
০৫ সেপ্টেম্বর সকালে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট্রের কৈবর্ত্য কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত এক সভায় বক্তারা উপরোক্ত অভিযোগ করেন। সারাদেশে গত তিন বছরে তামাক নিয়ন্ত্রণে কর্মরত সংগঠনগুলোর জরিপের তথ্য সমন্বিতভাবে তুলে ধরার লক্ষ্যে আয়োজিত ১০টি সংগঠন তাদের তথ্য তুলে ধরেন। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ। সভায় প্রধান আলোচক হিসাবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল (এনটিসিসি) এর সমন্বয়কারী ও এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস। আলোচনা করেন দি ইউনিয়ন এর কারিগরি পরামর্শক এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম, হেলথব্রিজ এর আঞ্চলিক পরিচালক দেবরা ইফরমসন ও এইড ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বকুল। সভা সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের মূখপত্র সমস্বর এর নির্বাহী সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সুজন।
মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) এর আর্টিকেল ৫.৩ সম্পর্কে সাধারণ মানুষ ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে সম্পৃক্ত সরকারি কর্মকর্তাদের ধারণার অভাব জরিপে উঠে এসেছে। এই আর্টিকেল সম্পর্কে প্রচারণা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি যে ১০টি আলাদা জরিপ হয়েছে, সেগুলোর সুপারিশ সমন্বিত করা হলে করণীয় নির্ধারণ সহায়ক হবে। জাতীয়ভাবে গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস) এর দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু হয়েছে। আশা করি, এ বছরের শেষনাগাদ আমরা নতুন জাতীয় তথ্য পাব, যা আগামী দিনের তামাক নিয়ন্ত্রণে দিক নির্দেশনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
দেবরা ইফরমসন বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো অত্যন্ত সফলভাবে কাজ করছে। এ সফলতা অন্যান্য ক্ষতিকর পণ্য নিয়ন্ত্রণে কাজে লাগানো দরকার।
এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী ছবিসহ সতর্কবাণী প্রদান না করা ও তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়কেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্থানে বিজ্ঞাপন প্রদানের মাধ্যমে আইন লঙ্গণ করছে তামাক কোম্পানিগুলো, যা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার জরিপে উঠে এসেছে। কিন্তু এ সম্পর্কে গণমাধ্যম ও সংস্থাগুলোর আলোচনা কম। বরং ধূমপানের প্রসঙ্গটি বেশি আলোচনা হয়। ধূর্ত তামাক কোম্পানিগুলো একদিকে আগ্রাসী প্রচারণা চালায়, অন্যদিকে নীতিনির্ধারকদের নজর অন্যদিকে সরাতে জনসমাগমস্থলে ধূমপানের বিষয়টি বেশি তুলে ধরে। এ সম্পর্কে আমাদের সচেতন হতে হবে।
সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা, যেখানে সব বেসরকারি সংস্থার তথ্য একসঙ্গে বিনিময় করা হচ্ছে। আইন অনুযায়ী সচিত্র সতর্কবাণী প্রদান ও জনসমাগমস্থল ধূমপানমুক্ত রাখতে সাইনবোর্ড স্থাপনের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার চিত্র উঠে এসেছে। তবে আইন হওয়ার পর অনেক ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের আরও বেশি কাজ করতে হবে। জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলকে শক্তিশালী করতে হবে।
তামাক নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্স কমিটির সদস্যদের একটি অংশ মনে করেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘণে তামাক কোম্পানির প্রত্যক্ষ সম্পুক্ততা রয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য ৫৯% এফসিটিসি আর্টিকেল ৫.৩ সম্পর্কে কিছুই জানে না। জরিপের উল্লেখযোগ্য তথ্যের মধ্যে জানা যায়, ৯৮ ভাগ জর্দ্দা, গুল কারখানায় সাইনবোর্ড নাই।
আমিনুল ইসলাম বকুল বলেন, সারা দেশে বিভিন্ন সংগঠন তামাক নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন বিষয়ে জরিপ কার্য পরিচালনা করছে। জাতীয় পর্যায় জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল এর পক্ষ থেকে আইন বাস্তবায়নে অগ্রগতির উপর জরিপ পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন।
সভায় জরিপের তথ্য উপস্থাপন করেন তাবিনাজের সমন্বয়কারী সাঈদা আখতার, এইড ফাউন্ডেশন প্রকল্প কর্মকর্তা হাসিবুল হক, একলাবের প্রকল্প সমন্বয়কারী আব্দুল কাদের, প্রজ্ঞার মিডিয়া ক্যাম্পেইনার মেহেদী হাসান, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন রিসার্চ ফেলো ডাঃ শামীম জুবায়ের, সিমান্তিক এর প্রোগ্রাম অফিসার তানিয়া নাজমুন নাহার, ইপসার কর্মসূচী ব্যবস্থাপক নাজমুল হায়দার, টিসিআরসি এর প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ বজলুর রহমান পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তাদের জরিপের তথ্যগুলো তুলে ধরেন। এসিডি তাদের একটি পেপারের মাধ্যমে তাদের তথ্য প্রদাণ করেন।