খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিধ্বংসী প্রাণঘাতী তামাকের চাষ নিয়ন্ত্রণ জরুরি। এক্ষেত্রে কৃষি মন্ত্রণালয় প্রধান ভূমিকা পালন করতে পারে। দেশে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে কৃষি মন্ত্রণালয় নানা ধরনের কর্মসূচী গ্রহণ করছে। কিন্তু আগামী দিনে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও নানাবিধ কারণে খাদ্য উৎপাদনযোগ্য কৃষি জমির পরিমাণ কমতে থাকায় খাদ্য ঘাটতির আশংকা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে খাদ্য উৎপাদনযোগ্য কৃষি জমিতে তামাক চাষের আগ্রাসন ও ক্রমবর্ধমান হার খাদ্য ঘাটতি তরান্বিত করবে। অথচ, ক্ষতিকর তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা ও সমর্থন আশানুরূপ নুয়। ফলে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং বিলম্বিত হচ্ছে।
তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতার নিশ্চিত করার আহবান জানিয়ে ০১ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় অবস্থান কর্মসূচি আয়োজন করেছে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট।
প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সেক্রেটারী জেনারেল হেলাল আহমেদ এর সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন মাদক ও নেশা বিরোধী কাউন্সিল (মানবিক) এর উপদেষ্টা রফিকুল ইসলাম মিলন, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক সৈয়দা অনন্যা রহমান, এইড ফাউন্ডেশনের প্রকল্প কর্মকর্তা রেজা আহমেদ, ট্যোবাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেল’র সহকারী গবেষক ফারহানা জামান লিজা, প্রদেশের নির্বাহী পরিচালক অনাদী কুমার মন্ডল, বাংলাদেশ দু:স্থ নারী ও শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান আঁখি আক্তার প্রমূখ। অবস্থান কর্মসূচি সঞ্চালনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের সহকারী প্রকল্প কর্মকর্তা আবু রায়হান।
রফিকুল ইসলাম মিলন বলেন, সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণে আইন প্রণয়ন, সংশোধনসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। যা অত্যন্ত ইতিবাচক। বর্তমানে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে হলে সরকারের সুনিদিষ্ট কিছু নীতিমালা প্রয়োজন। আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি যে, তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে অনেক নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও তা বাস্তবায়নে কৃষি মন্ত্রণালয় ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সুনির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা নেই। বাংলাদেশে কৃষি জমিসহ অন্যান্য জমিতে তামাক চাষ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা একটি দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক এবং উদ্বেগজনক।
হেলাল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ জনবহুল ও ছোট রাষ্ট্র হওয়া সত্বেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে শীর্ষ পর্যায়ে অবস্থান করছে। খাদ্য ও কৃষিপণ্য উৎপাদনে এ ধরনের সম্মানজনক অবস্থানের পরও একদল কুচক্রী দেশের এ অর্জনকে ধ্বংশ করতে দেশে তামাক চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করেছে। এ ধরনের অপতৎপরতা দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে মারাত্বক ঝুঁকিতে ফেলছে। আর্ন্তজাতিক অভিজ্ঞতা অনুসারে বলা যায়, কৃষি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে তামাক কোম্পানিগুলোর অবৈধ প্রভাব বিস্তার ও সুযোগ সুবিধা প্রদান এর অন্যতম কারণ। জনস্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিয়ে দেশের স্বার্থে সম্মিলিতভাবে এধরনের অপচেষ্টায় লিপ্তদের প্রতিহত করতে হবে।
সৈয়দা অনন্যা রহমান বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে জনগণকে রক্ষায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করতে হলে তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা এবং চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা দ্রুত প্রণয়ন করতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে মুনাফালোভী তামাক কোম্পানির প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে আর্ন্তজাতিক চুক্তি এফসিটিসি এর আর্টিক্যাল ৫.৩ সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং এবিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর এগিয়ে আসতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, কৃষি বিভাগের অনেক কর্মকর্তা অদৃশ্যকারণে তামাক নিয়ন্ত্রণের বিরোধীতা করছে। তামাক নিয়ন্ত্রণে কৃষি বিভাগের কোন ধরনের জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ না করা এবং তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে সুষ্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা প্রদাণ না করায় সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
কর্মসূচিতে তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ), এলআরবি ফাউন্ডেশনসহ অন্যান্য তামাক বিরোধী সংগঠনসমূহের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।