নারীদের পাবলিক বাসে নিরাপত্তা এবং অধিকার নিশ্চিত না হওয়ায় বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডে তারা ভূমিকা রাখতে পারছেন না। ১৩ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির ভয়ে পাবলিক বাস এড়িয়ে চলেন। নারীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে পাবলিক বাসের পর্যাপ্ততা, প্রবেশগম্যতা, স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরী। 31 মার্চ 2016 ১১ টায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স এর সভাকক্ষে পপুলেশন সার্ভিস এন্ড ট্রেনিং সেন্টার, একশন এইড বাংলাদেশ ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট’র সম্মিলিত উদ্যোগে “গণপরিবহনে নারীদের নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দে যাতায়াত নিশ্চিত করতে করণীয়” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা একথা বলেন।
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় ওয়াক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হোসেন বলেন, গবেষণায় দেখা যায়, নারীদের মধ্যে ২০.৭% পাবলিক বাসে যাতায়াত করেন। দূর্ভোগ, যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের আশঙ্কায় পাবলিক বাস এড়িয়ে চলেন। পাবলিক বাসে ৪১% নারী যৌন হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। বিদ্যমান আইন ও নীতিমালার বাস্তবায়ন সাপেক্ষে নারীদের নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দে পাবলিক বাস ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরী।
সভায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী স্বাগত বক্তব্যে বলেন, একজন নারীকে গণপরিবহনে যাতায়াতের প্রতিটি ক্ষেত্রেই হয়রানির শিকার হতে হয়। সিট না পাওয়া, সময় মত বাস না পাওয়া এবং সেই সাথে অনাকাঙ্খিত ঘটনাবলী ঘটে থাকে তার সাথে। সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি একটি সহনশীল পর্যায়ে আসবে এটিই আমাদের প্রত্যাশা।
ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস এন্ড ডাইভার্সিটি প্রোগ্রাম এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার তাহমিনা ইয়াসমিন বলেন, বাংলাদেশের ৫১ শতাংশ নারী। এখানে নারীদের সুরক্ষার জন্য কেবল মাত্র আইন প্রণয়ন যথেষ্ট নয়। আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বাসে মাত্র ৯ টি সিট বর্তমান প্রেক্ষাপটে নারীদের জন্য অপ্রতুল। এ সংখ্যা বাড়াতে সরকারের উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন।
আবু নাসের খান, চেয়ারম্যান, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) বলেন, উন্নয়ন কর্মকান্ডে সমানভাবে অংশ নিতে নারীদের যাতায়াত চাহিদা নিশ্চিত হওয়া অত্যন্ত জরুরি। এজন্য নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে এবং বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে হয়রানি/নির্যাতন বন্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের সচিব শওকত আলী বলেন, সকলের নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দ যাতায়াত নিশ্চিত করতে বিআরটিএ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে চলেছে। ১৯৯০ সালে ঢাকায় নারীদের জন্য ২টি বাস চালু করা হয়। বাসে ৬টি, ৯টি ও ১৩টি আসন সংরক্ষিত আছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সকল জেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করা হচ্ছে, যেখানে এ বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত থাকবে।
সংসদ সদস্য এডভোকেট ফজিলাতুননেসা বাপ্পি বলেন, নারীদের যথাযথ উন্নয়ন ছাড়া দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। প্রয়োজনে গণপরিবহনে বিভিন্ন প্রযুিক্তর ব্যবহার করা যেতে পারে। নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে পুরুষদের দ্বারা। কাজেই তাদের আচরণগত পরিবর্তন আনা অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরও নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দ যাতায়াত নিশ্চিত করতে হবে।
মতবিনিময় সভার সভাপতি এ্যাকশন এইড বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর বলেন, ৪৮% নারীর চালক এবং ভাড়া আদায়কারীর নিকট থেকে অপমানজনক ভাষা শোনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ মানুষগুলো নিজেরাই সুবিধা বঞ্চিত এবং অন্যদের দ্বারা নির্যতিত হয়ে থাকে। কাজেই তাদের মনস্তাত্ত্বিক দিক চিন্তা করে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া কর্তৃপক্ষের প্রয়োজন।
পপুলেশন সার্ভিস এন্ড ট্রেনিং সেন্টার এর কম্পোনেন্ট ম্যানেজার (জেন্ডার এন্ড গভর্নেন্স) কানিজ গোফরানী কোরায়শী এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন শাহানাজ আরেফিন, পরিচালক (প্রোগ্রাম পলিসি ক্যাম্পেইন), একশন এইড বাংলাদেশ, আকলিমা খাতুন, পরিচালক, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, এডভোকেট সেলিনা আকতার, সিনিয়র কো অর্ডিনেটর, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, সানজিদা আকতার, রেডিও ধ্বনি, মোখলেছুর রহমান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশন, আকতার-উজ-জামান, বাংলাদেশ আরবান ফোরাম, আমিনুর রসুল, সদস্য সচিব, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট, মাহবুবুল হাকিম, ইউএন ওমেনসহ আরো অনেকে।