বর্তমানে যানজট ঢাকা শহরের নৈমত্তিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে গুলশান, বনানী থেকে বাংলামোটর, পান্থপথ, কারওয়ান বাজারে সড়ক পথে যেতে প্রায় দুই থেকে তিন ঘন্টা সময় লাগে। গুলশান লেক এবং হাতিরঝিলে নৌযান চালুর মাধ্যমে বারিধারা, বনানী থেকে সোনারগাঁ হোটেলের পেছন পর্যন্ত আধা ঘন্টায় সাশ্রয়ী খরচে পৌঁছানো সম্ভব। পাশাপাশি এর চারপাশে সুন্দর হাঁটার রাস্তা তৈরি করা হলে এটি একটি মনোরম উন্মুক্ত স্থান হিসেবে মানুষের আকর্ষণ স্থানে পরিণত হবে। 28 মার্চ 2016 ১১.০০ টায় বুয়েটের একদল শিক্ষার্থীদের গবেষণার আলোকে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বি. আই.পি), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভি.আই.পি লাউঞ্জে ‘যানজট হ্রাসে নৌযান ও হাঁটার সমন্বয়ে হাতিরঝিল-গুলশান-বনানী লেক উন্নয়নের প্রস্তাব’ শীর্ষক মত বিনিময় সভায় বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
আলোচনার শুরুতে বুয়েটের গবেষক দলের সদস্য সুমাইয়া তাবাসসুম, সাদিয়া চৌধুরী, মাহজাবিন রহমান, কাশফিয়া নেহরিন, আহমেদ জাকারিয়া বলেন, গুলশান-বনানী-হাতিরঝিলকে সংযুক্ত করে অভ্যন্তরীণ নৌরুট তৈরি হলে খুব সহজে, কম সময়ে, কম খরচে যাতায়াতের সুযোগ হবে। এ রুটটির দূরত্ব প্রায় ৩ কি.মি। গবেষণায় আমরা মানুষের চাহিদা এবং আর্থিক সক্ষমতার বিবেচনায় এ দূরত্ব অতিক্রমের জন্য ১৫ টাকা প্রস্তাব করছি। তাছাড়া এর ফলে যাতায়াতের সময় কমে আসবে ২/৩ ঘন্টা থেকে ২০ মিনিটে। গবেষণায় নিকটস্থ বাস স্ট্যান্ড এবং জনসমাগমকে বিবেচনায় রেখে ১৪ টি স্টেশন পয়েন্ট প্রস্তাব করা হয়। এছাড়াও ল্যান্ডিং স্টেশনে পৌছানোর জন্য এবং লেকের চারপাশে হাঁটার জন্য সুন্দর হাঁটার রাস্তা তৈরির প্রস্তাব করা হয় যা সকলের জন্য প্রবেশগম্য হবে এবং পর্যাপ্ত আলো, ছায়ার ব্যবস্থা, বসার ব্যবস্থা এবং গাছ থাকবে।
আলোচনা সভার সভাপতি আবু নাসের খান, চেয়ারম্যান, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) বলেন, আমাদের অদূরদর্শী পরিকল্পনার কারণে আমাদের খাল বিল ধ্বংস হয়ে গেছে। হাতিরঝিল-বনানী-গুলশান লেক সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করা হলে পরিবেশের উন্নয়ন ঘটবে। এটি যেমন যাতায়াতের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে তেমনি সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিণত হতে পারে গণ মানুষের মিলন মেলায়।
আমিনুর রসুল, সদস্য সচিব, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট, বলেন, হাতিরঝিলে নৌরুট চালু হলে মানুষের মূল্যবান শ্রমঘন্টার অপচয় বন্ধ হবে। এটি হাতিরঝিলের মূল পরিকল্পনায় সংযুক্ত হওয়া প্রয়োজন। ল্যান্ডিং স্টেশনগুলো সকলের জন্য প্রবেশগম্য এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ব্যবহার বান্ধব হতে হবে। হাফিজুর রহমান ময়না, সভাপতি, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম, বলেন, এ গবেষণায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ নৌরুটের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছে। কাজেই এ গবেষণা থেকে প্রাপ্ত সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনাগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা প্রয়োজন।
পরিকল্পনাবিদ ফজলে রেজা সুমন, সহসভাপতি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বি.আই.পি) বলেন, সড়কের উপর চাপ কমিয়ে বহুমাধ্যমভিত্তিক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গণমাধ্যমকে এ বিষয়ক প্রচারণার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে হবে। আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন নৌ নেটওয়ার্ক ছাড়া এ শহরকে বাসযোগ্য করে তোলা সম্ভব নয়। আব্দুল্লাহ আল ক্বাফী, সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, বলেন, প্রস্তাবিত অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অন্যান্য পরিবহনের সঙ্গে সমন্বয়ের পাশাপাশি পানির দূর্গন্ধ দূরীকরণ এবং পর্যাপ্ত নৌযানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
মোঃ জাকির হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবশ আন্দোলন (বাপা) বলেন, ঢাকা শহরের বিকেন্দ্রীকরণ অত্যন্ত জরুরি। উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকতে হবে। মারুফ হোসেন, প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট বলেন, গুলশান লেক এবং হাতিরঝিলে যাতায়াতের জন্য নৌযান চালু করে সড়কপথের দুই/তিন ঘন্টার দূরত্ব নৌপথে আধা ঘন্টায় নামিয়ে আনা সম্ভব। সুন্দর হাঁটার রাস্তা থাকলে সেখান থেকে পায়ে হেঁটে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া সম্ভব হবে।
গাউস পিয়ারী, পরিচালক, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট, বলেন, আমাদের পরিকল্পনায় কেবলমাত্র একটি বিশেষ শ্রেণীকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়। ফলে সার্বিক উন্নতি সাধন ব্যহত হয়। দেশের উন্নয়নে ভবিষ্যত প্রজন্মের অংশগ্রহণ সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে সুন্দর পরিবেশ রক্ষায় কাজ করতে উৎসাহিত করে। আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন মহিউদ্দিন আহমেদ, যাত্রী কল্যাণ সমিতি; সাদিয়া শারমিন ঊর্মি, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট; হেলাল আহমেদ, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন; কবি লিলি হকসহ আরো অনেকে।