English | Bangla
ঢাকা শহরে ৪৪ শতাংশ জায়গায় ফুটপাত নেই নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দে পথচারীবান্ধব হাঁটার পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান

ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি ৪৯ লক্ষ ট্রিপ হয়। যার মধ্যে হাঁটার মাধ্যমে যাতায়াত হয় ১৭.৭২ শতাংশ এবং ব্যক্তিগত গাড়িতে ৭.২২ শতাংশ। নগরীতে অধিকাংশ মানুষ হেঁটে যাতায়াত করলেও পরিকল্পনায় হাঁটাকে প্রাধান্য না দিয়ে ব্যক্তিগত গাড়িকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে যানজট, জ্বালানী দূষণ এবং দূর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে প্রতিদিন পথচারীদের ফুটপাতে হাঁটতে গিয়ে নানা রকম বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। ঢাকা শহরে মিরপুর, উত্তরা, গাজীপুর, পুরাতন ঢাকাসহ মোট ৬ টি এলাকায় গবেষণা করে দেখা গেছে ৪৪ শতাংশ জায়গায় কোন ফুটপাত নেই। পকিল্পনায় গাড়িকে প্রাধান্য দেয়ায় ঢাকা শহর আজ যানজটের শহরে রূপ নিয়েছে। 29 মার্চ  2016 সকাল ১১ টায় রাজধানীর ধানমন্ডির বিলিয়া সেন্টারে ‘নগরে নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দে হেঁটে যাতায়াতের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টিতে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
 
মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট- এর প্রকল্প কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বলেন, যাতায়াতের মূল উদ্দেশ্য গাড়ি নয়, মানুষ এবং মালামাল একস্থান হতে অন্যস্থানে পরিবহন করা। কিন্তু পরিকল্পনায় গাড়িকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে আমাদের শহরকে অনিরাপদ করে ফেলছি। এছাড়া ক্র্যাচ, সাদাছড়ি এবং হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী ব্যক্তিরাও যাতায়াত ব্যবস্থার পরিকল্পানায় উপেক্ষিত। তিনি গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে বলেন, জরিপকৃত ৬ টি এলাকায় যে পরিমাণ ফুটপাত আছে তার ৮২ শতাংশের অবস্থা খারাপ এবং জনমত জরিপে দেখা গেছে প্রায় ৭৯ শতাংশ মানুষ যানবাহনের গতিকে বিপদজনক মনে করেন। পথচারীর নিরাপদে ও স্বচ্ছন্দে হাঁর পরিবেশ তৈরিতে ফুটপাতকে প্রাধান্য দিয়ে রাস্তা নির্মাণ, ফুটপাত থেকে সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে প্রশস্ত ফুটপাত, রাতের বেলায় বাতি, বর্জ্য ব্যস্থাপনা এবং টয়লেট এর ব্যবস্থা করার কথা বলেন। 
 
কালের কন্ঠের সিনিয়র সাংবাদিক নিখিল চন্দ্র ভদ্র বলেন, রাজধানীর ফুটপাত হাঁটার উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। রাজধানীর রাস্তায় ফুটপাতের অবস্থা ভাল নয়। এগুলো জনগণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ব্যবহার অনুপযোগী। পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাহিদা এবং প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  
 
মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট- এর পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, হেঁটে যাতায়াতে পরিবেশ তৈরিতে ফুটপাতে হকারদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় আনতে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। হকার ফুটপাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। যে ফুটপাতে হকার নেই সেখানে মানুষ হাঁটে না। তাই তাদের উচ্ছেদ না করে ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা করতে হবে। নগর পরিকল্পনায় গণ মানুষের চাহিদাকে বিবেচনা রাখতে হবে। রতন বালো, জোষ্ঠ প্রতিবেদক, বাংলামেইল২৪.কম বলেন, হাঁটার সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টিতে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। মিডিয়া কর্মীদেরও প্রচারণার ক্ষেত্রে সক্রিয় হতে হবে। মিজানুর রহমান, নিজস্ব প্রতিবেদক, মানবকন্ঠ বলেন, হাঁটার পরিবেশ উন্নয়নের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। সিটি কর্পোরেশনকে নাগরিক চাহিদা বিবেচনা করে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এ জরিপ প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। 
 
নাগরিক টেলিভিশন এর রাজু হামিদ বলেন, ফুটপাত থেকে দখল উচ্ছেদের নামে হকারদের অপসারণ করা হয়। কিন্তু তারা থাকে বলে নানা অসামাজিক কার্যক্রম কম হয়। ফুটপাতে অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং করে রাখার ফলে মানুষ বিড়ম্বনার শিকার হয়। হকারদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনা এবং ফুটপাত থেকে অবৈধ পার্কিং উচ্ছেদের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন। শাহজাহান মোল্লা, বাংলানিউজ২৪.কম বলেন, হাঁটার সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ভাল উদ্যোগ নষ্ট হয়ে যায় রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে। 
 
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট- এর সহকারি এডভোকেসি কর্মকর্তা নাঈমা আকতারের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন জিএম মুজিবুর, বাংলানিউজ২৪.কম, খাদেমুল ইসলাম, শাকিলা রুমা, নিউজগার্ডেনবিডি.কম; আবু খালিদ, বাংলানিউজ২৪.কম; মাসুমবিল্লাহ, বিডিনিউজ২৪.কম; খোরশেদ আলম রিংকু, সকালের খবর প্রমূখ।