‘তামাক চাষ পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকারক। এছাড়া তামাক চাষের ফলে কৃষি জমির উর্বরতা কমে যায়। তামাক চাষে জমির পরিমাণ বৃদ্ধির অর্থ খাদ্য উৎপাদনে জমির পরিমাণ কমে যাওয়া। এসব বিবেচনায় সরকার তামাক চাষে কোন সহযোগিতা করছে না। উপরন্তু তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে’।
০৪ আগষ্ট, ২০১৬ দুপুরে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে নিজ দপ্তরে মতবিনিময় কালে এ কথা বলেন কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। এ সময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের উপদেষ্টা ও জাতীয় যক্ষা নিরোধী সমিতি (নাটাব) এর জেষ্ঠ্য সহ-সভাপতি মোজাফফর হোসেন পল্টু প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সংগঠন দি ইউনিয়ন এর কারিগরি পরামর্শক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, মাদকদ্রব্য ও নেশা বিরোধী কাউন্সিল (মানবিক) এর উপদেষ্টা রফিকুল ইসলাম মিলন, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের মূখপত্র ‘সমস্বর’ এর নির্বাহী সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সুজন, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর কর্মসূচি ব্যবস্থাপক সৈয়দা অনন্যা রহমান প্রমুখ।
কৃষি মন্ত্রী আরো বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকার আন্তরিক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কঠোর মনোভাব পোষণ করেন। তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও আন্তরিকভাবে কাজ করছেন। তবু তামাক কোম্পানিগুলো তামাক চাষ ও তামাকের ব্যবহার বাড়ানোর পায়তারা করছে। তামাক কোম্পানির প্রতারণামূলক কার্যক্রম সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।
মোজাফফর হোসেন পল্টু বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারের অবস্থান প্রশংসনীয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বিধিমালা করেছেন, নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। তবু ধূর্ত তামাক কোম্পানিগুলো দরিদ্র ও স্বল্পশিক্ষিত কৃষকদের প্রলুব্ধ করার মাধ্যমে তামাক চাষের দিকে ধাবিত করছে, যা কৃষি জমির উর্বরতা ধ্বংস করছে, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও কৃষি জমির উর্বরতা রক্ষায় তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে কঠোর হওয়া দরকার। কৃষিক্ষেত্রে যুগান্তকারী উন্নয়নের জন্য কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান মোজাফফর হোসেন পল্টু।
এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, ‘সরকার তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা করতে যাচ্ছে। এতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সক্রিয় সহযোগিতা ও নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। পাশাপাশি কৃষি মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্ত প্রতিষ্ঠানের কোন কর্মকর্তা যেন তামাক কোম্পানির কোন কর্মসূচিতে অংশ না নেয়, সে বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান’।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, তামাক চাষ ক্ষতিকর বিধায় তামাক চাষের পরিমাণ কমাতে কৃষি মন্ত্রণালয় সক্রিয়। এছাড়া আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) এর আর্টিকেল ৫.৩ এর নির্দেশনা অনুযায়ী কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তামাক কোম্পানির সঙ্গে কোন আলোচনায় অংশ নেয় না।
এ প্রসঙ্গে আমিনুল ইসলাম সুজন বলেন, তামাক চাষে জমির পরিমাণ সঠিকভাবে আসছে না। এমন জেলা ও উপজেলায় তামাক চাষ হয়, যা পরিসংখ্যান ব্যুরো কিংবা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যে উঠে আসছে না। হতে পারে, সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি কিংবা তামাক কোম্পানির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা তামাক চাষে জমির পরিমাণ কম উল্লেখ করেন।
বিষয়টি নিয়ে পরিসংখ্যান ব্যুরো’র সঙ্গে আলোচনা এবং তামাক চাষ ও তামাকের ক্ষতিকর বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পরামর্শ দেন কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। পাশাপাশি তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণসহ তামাক বিরোধী সামাজিক আন্দোলনে কৃষি মন্ত্রণালয়ের নৈতিক সমর্থন ব্যক্ত করেন কৃষি মন্ত্রী।