English | Bangla
তামাক নিয়ন্ত্রণে সারচার্জ ব্যবহার করতে নীতিমালা প্রণয়নের দাবী

সরকার তামাকের উপর ১% স্বাস্থ্য কর আরোপ করেছে, যা ইতিবাচক। কিন্তু এ অর্থ কিভাবে ব্যয় হবে আড়াই বছরেও তা চুড়ান্ত হয়নি, যা দুঃখজনক। তামাক নিয়ন্ত্রণসহ অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে সারচার্জ হিসাবে অর্জিত অর্থ ব্যয় করা দরকার। এজন্য একটি নীতিমালার খসড়া করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য উন্নয়নসহ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিতে দ্রুত এ নীতিমালা পাস করা দরকার।  
 
গত ২৮ জুন, ২০১৬ ডক্টরস ফর হেলথ এন্ড এনভায়রনমেন্ট, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ও আন্তর্জাতিক সংগঠন দি ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে বক্তারা উপরোক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন। ডিএইচইএন এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. নাজমুন নাহার এর সভাপতিত্বে এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. রেজওয়ানুল হক বুলবুল। আলোচনা করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব এ কে এম আমির হোসেন, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. মো: আবু সাঈদ, বাংলাদেশ পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন এর প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী, ডিএইচএন এর সাধারণ সম্পাদক ডা. কাজী রকিবুল ইসলাম, দি ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম প্রমুখ। এতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী। 
 
অধ্যাপক ডা. রেজওয়ানুল হক বুলবুল বলেন, বাংলাদেশে ৫৯% মানুষ হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়বেটিস, ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদী রোগসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগে মারা যায়। অসংক্রামক রোগের প্রধান কারণ নেতিবাচক জীবনাচার, যেমন: তামাক ও বিভিন্ন ক্ষতিকর নেশা, ফাস্ট ফুড-জাঙ্ক ফুড ও কোমল পানীয়-মোড়কজাত কেমিকেল জুসের আধিক্য, অলসতা ও শারীরিক পরিশ্রমের ঘাটতি, মুটিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এসব ভয়াবহ রোগ প্রতিরোধ করতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। এক্ষেত্রে হেলথ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
 
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, দেশের মোট আক্রান্ত রোগীর ৬০ভাগ অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত আর ৪০ ভাগ সংক্রামক রোগে আক্রান্ত। মানুষ শুধু মুনাফার পিছনে ছুটতে গিয়ে পরিবেশ ও প্রকৃতিকে ধ্বংস বা দূষিত করছে। ফলে মানুষ নানাভাবে আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া ডাক্তাররা যে ঔষধ লিখে, তার ৫০ ভাগই অপ্রয়োজনীয়। বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানী দ্বারা প্রলুব্ধ হয়ে এই প্রয়োজনীয় ঔষধ ব্যবহারে রোগীদের বাধ্য করছে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রন দরকার। 
 
গাউস পিয়ারী বলেন, অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে শিশুদের খেলাধুলা ও শাক-সব্জি খাওয়ার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে। পাশাপাশি শিশুরা যেন খেলাধুলার সুযোগ পায়, সেরকম পরিবেশও গড়ে তোলা প্রয়োজন। এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেন বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কাছে জিম্মি না হয়ে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় কাজ করতে পারে, সেটা নিশ্চিত করা দরকার। জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে রোগ প্রতিরোধকে গুরুত্ব দিতে তামাকের সারচার্জ ব্যবহারে দ্রুত নীতিমালা পাস করা দরকার। 
 
অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের অসংক্রামক রোগ প্রসারে পরিবেশ দূষণ, জীবন আচরণ ও খাদ্যাভাস দায়ী। মাত্রাতিরিক্ত ভাত খাবার অভ্যাস ডায়াবেটিস রোগের প্রভাব বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনতে হবে। ভাতের পরিমাণ কমিয়ে শাক সবজির পরিমাণ বাড়াতে হবে। 
 
অধ্যাপক ডা. মো: আবু সাঈদ বলেন, অসংক্রামক রোগ এখন সভ্যতার অভিশাপ। সভ্যতার নামে পরিবেশ দূষিত, খাবার দূষিত করাসহ উন্নয়নের ভুল পথ মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা অপ্রয়োজনে বিদেশিদের অনুকরণ করছি। এ প্রবণতা রোধ করা দরকার। 
অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, সরকার অসংক্রামক রোগের বিস্তারে চিন্তিত। তাই অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু যথাযথ সিদ্ধান্তের অভাবে সরকারের অসংক্রামক রোগের বিস্তার কমানো সম্ভব হচ্ছে না। স্বাস্থ্য বাজেটে রোগ প্রতিরোধকে না প্রাধান্য দিয়ে ক্রয় আর অবকাঠামো তৈরিতে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। আর এই খাতগুলো দূণীর্তির ক্ষেত্র। সরকারের উচিত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় বেশি জোর দেওয়া।
 
এ কে এম আমির হোসেন বলেন, জনসচেনতার ফলে দেশে এখন তামাক ব্যবহারে মানুষ সর্তক হচ্ছে। কিন্তু কোম্পানীগুলো বসে নেই। তারা এখন দূর্গম পাহাড়ি অঞ্চলকে বেছে নিয়েছে। মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর প্রকল্প কর্মকর্তা আতিকুর রহমান প্রমুখ।