বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে ৩০ মে ২০১৬, সকাল ১১টায় ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের আয়োজনে “তামাক নিয়ন্ত্রণে অর্জন ও চ্যালেঞ্জসমূহ” শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় বক্তারা বলেন জনস্বার্থ রক্ষায় সরকার আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত দেশ হিসেবে ঘোষনা করার লক্ষ্যে কাজ করলেও তামাক কোম্পানীগুলো তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ভঙ্গ করে নানা কৌশলে তামাকের বিজ্ঞাপন প্রচারের পাশাপাশি কর ফাঁকি দিয়ে সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের সাফল্য ব্যাহত করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদের সভাপত্বিতে সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতির সভাপতি মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, দি ইউনিয়নের কারিগরি উপদেষ্টা সৈয়দ মাহবুবুল আলম, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সেক্রেটারি হেলাল আহমেদ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভাসিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিও ভাইস চেয়ারম্যান ব্যরিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মানবিকের কারিগরি পরামর্শ রফিকুল ইসলাম মিলন।
সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, তামাক কোম্পানীগুলো জানে যে তামাকের প্যাকেটে সচিত্র সর্তকবানী দিলে তামাকসেবীর সংখ্যা কমে যাবে। একারণে তারা তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র সর্তকবানী প্রদানে প্রথম থেকেই নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরির চেষ্টা করেছে। যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্য মন্ত্রী, স্পিকারসহ দেশে সর্বস্তরের জনগণ তামাকের নিয়ন্ত্রের পক্ষে সমর্থন দিচ্ছে। সেখানে কয়েকজন জনপ্রতিনিধির পক্ষ থেকে জনস্বার্থরক্ষায় তাদের প্রতিজ্ঞার কথা ভুলে তামাকের দাম বৃদ্ধির বিপক্ষে ডিও লেটার পাঠানো আমাদের শংকিত করে। আমরা জনপ্রতিনিধিদের আহবান করছি জনস্বার্থ রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা অনুযায় ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করুন।
মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন আমাদের প্রয়োজন হলেও দেশের জনগণের স্বাস্থ্য, অথনীতি, পরিবেশ সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে তামাকের মত ক্ষতিকর পন্য উৎপাদনের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার জন্য আমাদের বিশ্ব মানবতার কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে। তামাক কোম্পানীগুলো দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়। তারা নানাভাবে সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা তৈরীর চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণের বাংলাদেশের অর্জন কম নয়। এ সফলতাকে ধরে রাখতে হবে। কোনভাবেই তামাক কোম্পানীর প্ররোচনায় জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলা যাবে না। তামাক নিয়ন্ত্রণে দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রন নীতি, তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতি এবং সারচার্জ ব্যবস্থাপনা নীতি প্রণয়ন প্রয়োজন। সেইসাথে জনস্বার্থে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বেগবান করতে এক্ষেত্রে অব্যহত আর্থিক যোগান নিশ্চিতে উদ্যোগ নিতে হবে।
শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রন আইন তৃতীয় বিশ্বেও অনেক দেশের চেয়ে অধিক শক্তিশালী। কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দূর্বলতা রয়েছে। তামাক পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করা প্রয়োজন এবং খুচরা তামাক পন্য বিক্রয় বন্ধ করা জরুরী।
রফিকুল ইসলাম মিলন বলেন, মাননীয় অর্থমন্ত্রী বর্তমান বাজেট থেকে তামাকের স্তর ভিক্তিক জটিল কর প্রথা সহজীকরণের উদ্যোগ নেবেন। কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ড পূর্বের ন্যায় এবারও মন্ত্রণালয়ে বাজেটে আগের মত স্তর ভিক্তিক কর প্রথা বলবৎ রেখেছে। এধরনের কর প্রথা দেশে তামাকসেবির সংখ্যা বৃদ্ধি করবে।
হেলাল আহমেদ বলেন, কোম্পানীগুলো দেশের জনস্বাস্থ্য ধ্বংসের পাশাপাশি পাবর্ত্য এলাকায় তামাক চাষের মাধ্যমে পরিবেশ ধ্বংস করছে। পাবর্ত্য এলাকায় তাদের তামাক চাষের কারণে ইতিমধ্যে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। যা সরকারের ক্ষুদামুক্ত বাংলাদেশে গড়ার কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্থ করছে। সরকার যখন জনস্বার্থে প্রাধান্য দিয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে চেষ্টা করছে। তখন কোম্পানীগুলো বেপরোয়া ভাবে আইন ভঙ্গের প্রতিযোগীতায় লিপ্ত। প্রয়োজনে রাষ্ট্রের কল্যাণে প্রণীত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন মানতে আরো কঠোর তদারকীর মাধ্যমে জনস্বার্থে কোম্পানীকের বাধ্য করতে হবে । সভার পূর্বে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটভুক্ত সংস্থাগুলো জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একটি অবস্থান কর্মসূচীর আয়োজন করে।