English | Bangla
‘তামাক মৃত্যু ঘটায়’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

আগামী ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। দিবসটিকে সামনে রেখে ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ সুনিশ্চিতকরণে টেকসই অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তা (Necessity of Ensuring Sustainable Funding for Tobacco Control)’-কে লক্ষ্য রেখে গত (২৬ মে ২০১৬, বৃহস্পতিবার, সকাল ১১টায়) প্রত্যাশা’ মাদক বিরোধী সংগঠন, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র  টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি), ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ-এর যৌথ উদ্যোগে ‘তামাক মৃত্যু ঘটায়’ শীর্ষক সেমিনার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্ত। 
 
মূল প্রবন্ধে ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, “তামাক শুধু মানুষের শরীরের ক্ষতি করে না, এটি পরিবেশেরও ক্ষতি করে। তামাকজাত দ্রব্যের নানা ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।” এসময় তিনি বিড়ি-সিগারেট, জর্দ্দা-গুলের দোকানকে ‘ক্যান্সার রপ্তানি কেন্দ্র’ হিসেবে আখ্যা দেন এবং তামাক কোম্পানীগুলোর কুটকৌশলে বিভ্রান্ত না হবার আহ্বান জানান। এছাড়া তিনি তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষতিকারক দিক ও তা ত্যাগ করার উপায়সহ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।  
 
শুভেচ্ছা বক্তব্যে হেলাল আহমেদ বলেন, তামাক কোম্পানীগুলো বিভিন্নভাবে প্রতিনিয়ত আইন লঙ্ঘন করছে। তাদের এইসব কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সরকারকে আরো কঠোর হবার আহ্বান জানান তিনি।
 
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, তামাক কোম্পানী গুলো মানুষের জীবনের মূল্য না দিয়ে শুধুমাত্র মুনাফা অজর্নের চিন্তায় মানুষের অতুলনীয় ক্ষতি করে চলছে। তাই তামাকের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র গুটি কয়েক সংগঠনকে লড়লেই হবে না, নতুন প্রজন্মকেও সমান ভুমিকা রাখতে হবে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা হলেন প্রযুক্তির সর্বশ্রেষ্ঠ সময়ের যুব সম্প্রদায়। তাই আপনাদেরকেই সমাজের সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে এবং সবচেয়ে বড় ভুমিকা রাখতে হবে।’  
 
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাষ্টের প্রোগ্রাম ম্যানেজার সৈয়দা অনন্যা রহমান বলেন, তরুণ প্রজন্মকে তামাকের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে তামাক নিয়ন্ত্রণ অতিব জরুরী। সেই সাথে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গঠন করা প্রয়োজন। রোগ প্রতিরোধের উপর গুরুত্ব না দিয়ে সময় এসেছে রোগ নিরাময়ের কাজ করার। 
 
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডীন অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, হতাশার কারণে অনেক শিক্ষার্থীরা তামাক গ্রহণ করেন। কিন্তু এটা কোন সমাধান নয়। তিনি হতাশা থেকে এভাবে তামাক বা মাদক গ্রহণ না করে বরং কেউ হতাশ হলে তাকে ফিরিয়ে আনতে অন্যদের সহযোগিতা করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
 
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাদক্ষ অধ্যাপক মোঃ সেলিম ভূইয়া বলেন, যারা তামাক গ্রহণ করেন, তারা কোন না কোনভাবে অবশ্যই শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হন। কেই আগে, কেউ পরে। তবে কেউ যদি মনে করেন যে, অমুকের তো বিড়ি-সিগারেট খেয়ে কিছু হয়নি, তাহলে আমারো হবে না। এমনটা চিন্তা করা ভুল। তিনি সকল ধূমপায়ীকে ধূমপান হবে বিরত থাকতে আহ্বান জানান এবং যারা আগে কখনো ধূমপান করেননি, তাদেরকেও ভবিষ্যতে ধুমপান না করার আহ্বান জানান।
 
সভাপতির বক্তব্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, “তামাক বিরোধী আন্দোলনে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। আগামী বাজেটে তামাকের উপর কর বৃদ্ধি করার এবং তামাকজাত দ্রব্যের উপর আদায়কৃত সারচার্জের পরিমাণ ১% এর যায়গায় ২% করা উচিত বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। এতে করে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ লব্ধ হবে তা দিয়ে একটি হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গঠন করা যেতে পারে। যার মাধ্যমে ব্যাপক আকারে তামাক বিরোধী সচেতনতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। তামাক বিরোধী আন্দোলনে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে শহরাঞ্চলের মানুষকে একত্রিত করতে হবে।”
 
সেমিনারে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক মোঃ শাহাদাৎ হোসেন-এর সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোঃ আবু জাফর । এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডীন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।