আসন্ন বাজেটে সকল তামাকপণ্যে উচ্চহারে করারোপের দাবিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সামনে তামাকবিরোধী সংগঠনসমূহের মানববন্ধন এবং স্মারকলিপি প্রদান
আসন্ন বাজেটে সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সকল তামাকজাত দ্রব্যের উপর উচ্চহারে করারোপের দাবিতে তামাক বিরোধী সংগঠনসমুহের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, তামাক বিরোধী সংস্থা ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, এসিডি, ইপসা, সীমান্তিক, উবিনীগ, ইসি বাংলাদেশ, ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন, নাটাব, এইড ফাউন্ডেশন, একলাব, টিসিআরসি এবং প্রজ্ঞা গত ২৪ এপ্রিল রবিবার সকাল ১১টায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সামনে একটি মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে।
ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের নেটওয়ার্ক কর্মকর্তা শুভ কর্মকারের সঞ্চালনায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী হেলাল আহমেদ, ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর কর্মসূচী ব্যবস্থাপক সৈয়দা অনন্যা রহমান, নাটাব এর ডেপুটি ম্যানেজার আব্দুল আলিম, একলাব এর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর আব্দুল কাদের, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন এর প্রোগাম অফিসার অদুত রহমান ইমন, এইড ফাউন্ডেশনের এডভোকেসী অফিসার কাজী মোঃ হাসিবুল হক, তামাক বিরোধী নারী জোটের সদস্য রোকেয়া বেগম, টিসিআরসি এর গবেষনাসহকারী মহিউদ্দিন রাসেল, বাংলাদেশ দুস্থঃ নারী, শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের সিনিয়র সহসভাপতি ওসমান গণি বেলাল, মানবিকের প্রোগ্রাম অফিসার সুমন শেখ, মাস্তুল ফাউন্ডেশনের জনসংযোগ ব্যবস্থাপক মনির হোসেন নিশাত প্রমূখ। মানববন্ধন শেষে তামাকবিরোধী সংগঠনসমূহের প্রতিনিধি দল মাননীয় অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রেরণের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করে। আগামী বাজেটে তামাকজাত পণ্যে উচ্চহারে করারোপের জন্য স্মারকলিপিতে নিম্নোক্ত দাবিসমূহ তুলে ধরা হয়েছে:
১। অবিলম্বে তামাকের বিদ্যমান শুল্ক-কাঠামোর পরিবর্তে কার্যকর তামাক শুল্কনীতি প্রণয়ন করতে হবে। মাথাপিছু আয়বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে কার্যকর শুল্কারোপের মাধ্যমে প্রতিবছর তামাকপণ্যের দাম বাড়াতে হবে যাতে তামাকপণ্য ক্রমশ: ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়।
২। আগামী বাজেটে (২০১৬-১৭)
ক) সিগারেটের মূল্যস্তরভিত্তিক কর-প্রথা বাতিল করে প্যাকেট প্রতি খুচরা মূল্যের কমপক্ষে ৭০ শতাংশ পরিমাণ স্পেসিফিক এক্সাইজ ট্যাক্স নির্ধারণ করতে হবে।
খ) বিড়ির ট্যারিফ ভ্যালু তুলে দিয়ে প্যাকেট প্রতি খুচরা মূল্যের ৪০ শতাংশ পরিমাণ স্পেসিফিক এক্সাইজ ট্যাক্স নির্ধারণ করতে হবে।
গ) গুল-জর্দার ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ পরিমাণ স্পেসিফিক এক্সাইজ ট্যাক্স নির্ধারণ করতে হবে।
ঘ) তামাকের ওপর আরোপিত স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ১ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ২ শতাংশ নির্ধারণ করতে হবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ৪৩ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৪ কোটি ১৩ লক্ষ (GATS, ২০০৯) প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক সেবন করেন, যার মধ্যে ২৩% (২ কোটি ১৯ লক্ষ) ধূমপানের মাধ্যমে তামাক ব্যবহার করেন এবং ২৭.২% (২ কোটি ৫৯ লক্ষ) ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করেন। বাংলাদেশে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সের প্রায় ৭% (GATS, ২০১৩) কিশোর-কিশোরী তামাকপণ্য ব্যবহার করে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে দেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লক্ষ (IHME, 2013) মানুষ অকাল মৃত্যু বরণ করে। তামাকখাত থেকে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পায় তামাক ব্যবহারের কারণে অসুস্থ রোগীর চিকিৎসায় সরকারকে স্বাস্থ্যখাতে তার দ্বিগুণ ব্যয় করতে হয়। সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন’ শীর্ষক সাউথ এশিয়ান স্পিকার’স সামিট এর সমাপনী অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণ নির্মূল করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই লক্ষ্য অর্জনে তিনি তামাকের উপর বর্তমান শুল্ক-কাঠামো সহজ করে একটি শক্তিশালী তামাক শুল্ক-নীতি গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করেছেন যাতে তামাকজাত পণ্যের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং একইসাথে সরকারের শুল্ক আয় বৃদ্ধি পায়।