সারা বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের নারীরা সৃষ্টিশীল কাজে নিজেদের দক্ষতা, যোগ্যতা আর গ্রহণযোগতার প্রমাণ রেখে চলেছেন। এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নারীর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও তাদের স্বাবলম্বী করতে দেশের উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় নারীদের সম্পৃক্ত করতে হবে। ৭ মার্চ ২০১৬ সকাল ১১.০০ টায় ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর কৈবর্ত সভাকক্ষে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট কর্তৃক আয়োজিত ৮ই মার্চ বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষ্যে অলোচনা সভায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
নাজনীন কবির বলেন, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর এক গবেষণায় দেখা যায়, নারীরা গৃহে প্রতিদিন ৪৫ রকমের কাজ করেন। ২৪ ঘন্টার মধ্যে গড়ে ১৬ঘন্টা সময়ই গৃহস্থালনির্ভর বিভিন্নরকম কাজে ব্যয় করেন। ২০১২ সালের আদম শুমারি অনুযায়ী ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী নারীদের গৃহস্থালি কাজে যে অবদান রাখছে তার আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় বা ২২৭.৯৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার (১৮২৩৪.৮১ বিলিয়ন টাকা বা আঠার লক্ষ তেইশ হাজার চারশত একাশি কোটি টাকা) থেকে ২৫৮.৮২ বিলিয়ন ইউএস ডলার (২০,৭০,৫.৬ বিলিয়ন টাকা বা বিশ লক্ষ সত্তর হাজার পাঁচশত ষাট কোটি টাকা)। যা বাংলাদেশের জিডিপির দ্বিগুণেরও বেশি। উল্লেখ্য, ২০১২ সালের জিডিপি’র পরিমাণ ছিল ১১৮.৭ বিলিয়ন ডলার । সারাদেশে নারীদের অবদানকে ২০১৩ সালে বিদ্যমান মাঝারি মানের সরকারি কর্মকর্তার বেতনের সঙ্গে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তবে ১৬ঘন্টার সময়কে ৮ঘন্টার অর্থমূল্যে হিসাব করা হয়েছে। নারীদের যথাযোগ্য মর্যাদা প্রদানের পাশাপাশি তাঁদের অধিকার ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হলে, নারীর প্রতি প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হবে।
দেবরা ইফরইমসন বলেন, নারীর ক্ষমতা আনায়নে এবং অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে সকলকে সম্বনিতভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। নারী দিবসে পুরুষদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। অর্থনীতিতে সমাজের সবার যেমন অবদান রয়েছে, তেমনি সবার নিয়ন্ত্রণও প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। এছাড়া জাতীয় অর্থনীতিতে যেসব অদৃশ্য অবদান রয়েছে, যেসব অবদানের কোন আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি নেইÑ সেইসব অবদানও জাতীয় অর্থনীতি তথা ডিজিপিতে অন্তর্ভূক্ত করা জরুরি। এতে কয়েকরকম সুবিধা হবে: এক. স্বেচ্ছাশ্রমের অদৃশ্য অবদানগুলো দৃশ্যমান হয়ে উঠবে, দুই. অদৃশ্য অবদানের আর্থিক মূল্যায়নও জানা যাবেÑযা জাতীয় অর্থনীতিতে অন্তর্ভূক্ত করা যাবে, তিন. এতে জাতীয় অর্থনীতির পরিধি বাড়বে। পাশাপাশি যারা যেরকম অবদান রাখতে তাদের অবদানের আনুপাতিক হার অনুযায়ী উন্নয়ন-বরাদ্দ রাখা যাবে।
নিখিল ভদ্র বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে নারীর গৃহস্থালি কাজের মূল্যায়ন করা জরুরি। জিডিপিতে নারীর অবদান অন্তর্ভূক্ত করার মাধ্যমে স্বীকৃতি প্রদান করা হলে নারীর প্রতি পরিবার-সমাজ ও রাষ্ট্রের যে চিরন্তন ধারণা ‘নারী কিছুই করে না’Ñতার পরিবর্তন সম্ভবপর হবে। এবং নারীর প্রতি নেতিবাচক এ ধারণার পরিবর্তন হলেই পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্রে নারীকে পরিবার ও সমাজে গুরুত্বপুর্ণ বলে গণ্য করা হবে। এতে নারীর প্রতি সহিংসতা কমে আসবে। আগামী দিনের আইন ও নীতিসমূহ নারীবান্ধব করা সম্ভব হবে।
সামগ্রিকভাবে গৃহস্থালি কাজে নারীর কাজের অবদান জিডিপির চাইতেও বেশি। অথচ নারীর নীরব ও স্বেচ্ছাশ্রমের এই বিশাল অবদান অদৃশ্য থেকে যায়। তাই নারীর অবদানকে দৃশ্যমান করতে জিডিপিতে অন্তর্ভূক্ত করা জরুরি। এতে নারীর অবদানের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিও মিলবে।
শাকিলা রুমা বলেন, দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান সকল উৎপাদনে বাংলাদেশের উন্নয়নের নারীরাই মূল চাবিকাটি। তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দিতে হবে। নারীর অর্থনৈতিক মুক্তির মাধ্যমে নারী-পুরুষ সমতা প্রতিষ্ঠায় সকলকে এক যোগে কাজ করে যেতে হবে। সমাজ ব্যবস্থায় নারীর সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক সকল প্রকার উন্নয়নকে টেকসই রূপদান করা সম্ভব।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্টের সহকারি এডভোকেসি অফিসার তানজিলা চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন, হেল্থব্রীজের আঞ্চলিক পরিচালক দেবরা ইফরইমসন, কালের কন্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার নিখিল ভদ্র, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্টের ডেপুটি কর্মসূচি ব্যবস্থাপক নাজনীন কবির, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার রিপোর্টার জয়শ্রী জামান, নিউজগার্ডেনবিট ডটকম এর রিপোর্টার শাকিলা রুমা, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারি, প্রকল্প কর্মকর্তা আতিকুর রহমান প্রমুখ।