English | Bangla
হেঁটে স্কুলে যাতায়াতের পরিবেশ তৈরিতে অঙ্কন ও প্রদর্শন কর্মসূচি
শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে শিশুরা নানা রকম রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পাশাপাশি শিশুদের মধ্যে নেতিবাচক মানসকিতারও বহি:প্রকাশ ঘটছে। গবেষণায় দেখা গেছে বর্তমানে শিশুরা তাদের মা-বাবার শারীরিক সুস্থতা বা সামর্থ্য বিবেচনায় প্রায় ১৫ শতাংশ কম শক্তি বা সামর্থ্য ধারণ করছে। প্রতিদিন স্কুলে হেঁটে যাতায়াতের মাধ্যমে শিশুদের শারীরিক পরিশ্রমের অভাব পূরণ করা সম্ভব। এজন্য শিক্ষার্থীদের স্কুলে নিয়মিত হেঁটে যাতায়াতে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি হেঁটে যাতায়াতের পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন। বর্তমানে হাঁটার পরিবেশ ভালো না হওয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুর্বিষহ কষ্টে পড়তে হচ্ছে। অপর দিকে একটি শিশুর জন্য একটি গাড়ি ব্যবহারের ফলে যানজট যেমন সৃষ্টি হচ্ছে পাশাপাশি হেঁটে চলাচলকারী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদেরও সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। কাজেই হেঁটে স্কুলে যাতায়াত করা হলে শিশুর স্বাস্থ্য যেমন ভালো থাকবে তেমনি কমবে পরিবেশ দূষণ, যানজট হ্রাস এবং সর্বপরি যাতায়াত খরচও সাশ্রয় হবে। সম্প্রতি সরকারের প্রত্যেক স্কুলে ৪০ শতাংশ কোটা চালুর গৃহিত পদক্ষেপের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দময় হাঁটার পরিবেশ তৈরির কোন বিকল্প নেই। 
 
৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় রায়ের বাজার এলাকার তিনটি বিদ্যালয়- আলী হোসেন বালিকা বিদ্যালয়, ধানমন্ডি কচিকন্ঠ হাইস্কুল এবং ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে ‘নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দে হেঁটে স্কুলে যাতায়াতের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে “আমার বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথ” অঙ্কন ও প্রদর্শন’ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা উপরোক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন মহিদুল হক খান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের বিদ্যালয়ে হেঁটে যাওয়ার পথটি ছবির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলে। পরবর্তীতে বিকাল ৪.০০ টায় রায়েরবাজার বৈশাখী খেলার মাঠে ছবিগুলো নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।  
 
কর্মসূচি পূর্ববর্তী সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্বে বক্তারা বলেন, ঢাকা শহরে স্কুলে হেঁটে ৩০ শতাংশ যাতায়াত হয়। অভিভাবকদের পছন্দানুযায়ী স্কুলে সন্তানদের পড়ানোর জন্য দূরত্ব বেশি হওয়ার কারণে গাড়ির উপর নির্ভরশীলতা দেখা যায়। এমনকি অনেক সময় সামাজিক মর্যাদা বাড়ানোর ভ্রান্ত ধারনা থেকে অনেকেই অল্প দুরত্বেও সন্তানদের গাড়ি করে আনা নেওয়া করে থাকেন। তবে হাঁটার পরিবেশ উন্নত না হওয়ার কারণেও অনেকেই গাড়ি অথবা রিকশার উপর নির্ভরশীল। 
 
তারা আরো বলেন, রায়েরবাজার এলাকায় অধিকাংশ শিশুরা নিকটবর্তী স্কুলে পড়ালেখা করে থাকে। এখানে তিনটি স্কুলে জরিপের মাধ্যমে দেখা যায়, ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী ১ কিমি দুরত্বের মধ্যে বাস করে এবং প্রায় ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী হেঁটে যাতায়াত করে। এখানে নিরাপদে ও স্বচ্ছন্দে হাঁটার পরিবেশ তৈরি করা গেলে একটি উদাহরণ সৃষ্টি হবে। এজন্য স্থানীয় অধিবাসীদের এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। বক্তারা শিশুদের নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দে হেঁটে যাতায়াতের জন্য রায়েরবাজার বৈশাখী খেলার মাঠ থেকে ধানমিন্ড শংকর বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত গলি রাস্তায় গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ, হর্ণ না বাজানো, রাস্তায় মার্কিং করা, শিক্ষার্থী-অভিভাবক-স্থানীয়দের সচেতন করার সুপারিশ করেন।
 
ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রজেক্ট অফিসার জিয়াউর রহমান লিটু’র সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন  ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার, মারুফ হোসেন, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল’র অধ্যক্ষ এম.এ মান্নান মনির, ধানমন্ডি কচিকন্ঠ হাই স্কুল’র প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম, আলী হোসেন বালিকা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার সৈয়দা অনন্যা রহমান, ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার, নাজনীন কবীরসহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ ও , আলী হোসেন বালিকা বিদ্যালয়, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল এবং ধানমন্ডি কচিকন্ঠ হাই স্কুল এর শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকবৃন্দ।