তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে আগামী ১৯ মার্চ, ২০১৬ হতে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রদানের আইনী বাধ্যবাধকতাকে বিলম্ব করতে তামাক কোম্পানীগুলো নানা বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা ও অপকৌশলে লিপ্ত হয়েছে। বর্তমান আইন ও বিধিমালা অনুসারে এ ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টির কোন অবকাশ নেই। বাংলাদেশ সরকার আর্ন্তজাতিক অভিজ্ঞতার আলোকে এবং একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে সংশোধিত আইনে তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সর্তকবাণী প্রদাণের বিধান যুক্ত করেছে। তামাক কোম্পানীগুলোর অপকৌশলে রোধে কঠোর ও দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য দেশের তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যরত সংগঠনগুলো সরকারের কাছে অনুরোধ জানায় । ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:০০ টায় ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা), নাটাব, একলাব, এইড, টিসিআরসি এবংওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ দাবী করেন।
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী হেলাল আহমেদ এর সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সৈয়দ মাহবুবুল আলম টেকনিক্যাল এডভাইজার, দি ইউনিয়ন। এতে আরোও বক্তব্য রাখেন ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি প্রেসিডেন্ট, টিসিআরসি, সৈয়দা অনন্যা রহমান, প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট, একেএম খলিল উল্লাহ, প্রকল্প সমন্বয়ক, নাটাব, একলাব’র প্রকল্প সমন্বয়কারী আব্দুল কাদের প্রমূখ।
মূল প্রবন্ধে সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, তামাক কোম্পানীর ব্যবসা সম্প্রসারনের জন্য নয়, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন প্রণয়নের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করা। তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রদান বিশ্বব্যাপি তামাকের আগ্রসান রোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। তামাক নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক চুক্তি এফসিটিসিতেও এ ব্যাপারে দিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। উক্ত চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ তা বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর এবং বর্তমান সরকার এ ব্যাপারে অত্যন্ত ইতিবাচক। আমরা বিশ্বাস করি তামাক কোম্পানীর সকল অপপ্রচেষ্টা রুখে এ বছর ১৯ মার্চের মধ্যেই তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ছবিসহ স্বাস্থ্য সর্তকবাণী আসবে।
আইনজীবি ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, সরকার জনস্বার্থে তামাক নিয়ন্ত্রণে আইন, বিধিমালা প্রণয়ন করেছে। কিন্ত আইনটি প্রণয়নের পর থেকেই তামাক কোম্পানীগুলো এর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ একটি আন্তর্জাতিক চুক্তিতে ইতোমধ্যে স্বাক্ষর করেছে। প্রধানমন্ত্রী তামাকমুক্ত দেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছেন। সর্বোপরি এগুলো অর্জন করতে হলে অবশ্যই যথাসময়ে তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানীর মূদ্রণ নিশ্চিত করতে হবে।
হেলাল আহমেদ বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে আইন অনুসারে সকল তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রদানের প্রধানমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রীর অঙ্গীকারে আমরা আশান্বিত। বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো বিশ্বের অন্যান্য দেশে প্যাকেটের উপরের অংশে ছবিসহ স্বাস্থ্য সর্তকবাণী প্রদানের বিধান মেনে চললেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে গরিমসি করছে বলে গণমাধ্যমগুলোতে তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। মূলত, ধূর্ত তামাক কোম্পানিগুলো ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদানে নানারকম টালবাহানার সংবাদ আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় কোম্পানীগুলোর এসব অপকর্ম রূখতে হবে।
সৈয়দা অনন্যা রহমান বলেন, যুবকরা তামাক কোম্পানীর চটকদারী বিজ্ঞাপন ও মোড়ক দেখে তামাক ব্যবহারে উৎসাহী হয়ে উঠছে।
তামাক কোম্পানিগুলো দেশের বিপুল সংখ্যক তরুণদের ধূমপানের নেশায় আসক্ত করার মাধ্যমে মুনাফা অর্জনের জন্যই তামাকজাত দ্রব্যেও
মোড়কে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদানে টালবাহানা শুরু করেছে। জনগনের তামাকের নেশায় আসক্তির প্রবণতা থেকে রক্ষায় তামাকজাত দ্রব্যের
মোড়কে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর বিকল্পনাই। নেশামুক্ত সমাজ গড়তে ধূমপানসহ তামাক নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, জালালাবাদ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এনাম আহমেদ, গ্রামীণ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক
নজরুল ইসলাম সরকার, এলআরবি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা রাজিয়া, হিমু পরিবহনের মূখপাত্র পারভেজ আহমেদ মূরাদ, স্বপ্নের সিঁড়ি
সমাজ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক উম্মে সালমা, অরুণোদয়ের তরুণ দলের তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সোহেল আহমেদ প্রমূখ।