জলাভূমি আমাদের জীবনে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছে ঠিক তেমনি অর্থনেতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখছে। জলাভূমি আমাদের পানি পরিশোধন ও চাহিদা পূরণ, খাদ্য উৎপাদন, মৎস সম্পদ, জীববৈচিত্র্য রক্ষা, বন্যানিয়ন্ত্রণ, ভূগর্ভস্থ ও ভূপৃষ্ঠে পানি সংরক্ষণ, নদীভাঙন রোধ, ভূমিক্ষয়রোধ, দূষণরোধ, জলবায়ু পরিবর্তনরোধসহ বহুমাত্রিক সুবিধা প্রদান করে থাকে। কিন্ত সকল পরিকল্পনায় জলাভূমি রক্ষা করার কথা বলা হলেও কার্যত এর প্রতিফলন হচ্ছে না। 2 ফেব্রুয়ারি সকাল ১১ টায় বিশ্ব জলাভূমি দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, সম্মিলিত জলাধার রক্ষা আন্দোলন, গ্রীণ মাইন্ড সোসাইটি এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে চারুকলা অনুষদ এর সামনে আয়োজিত “ভবিষ্যত প্রজন্ম এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে জলাভূমি সংরক্ষণ করা হোক” শীর্ষক মানববন্ধন থেকে এই অভিমত ব্যক্ত করেন। এছাড়া মানববন্ধন শেষে বেইলি রোডে হাবিবুল্লা বাহার কলেজের পিছনের ঐতিহ্যবাহী নওরতœ পুকুর পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনে দেখা যায় পুকুরের সীমানা দেয়াল ভেঙ্গে অবৈধভাবে ভরাট করে কলেজের ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। পরিদর্শন দলের পক্ষ থেকে উক্ত পুকুর ভরাট বন্ধে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
মানববন্ধনে শুভেচ্ছা বক্তব্যে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, প্রতি বছর পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং জনসংখ্যার চাপে জলাভূমি ও এর জীববৈচিত্র্যের প্রতি হুমকি বৃদ্ধির প্রতি মনোযোগ আকর্ষণে বিশ্ব 'জলাভূমি দিবস' পালিত হয়। এবছর ভবিষ্যত প্রজন্ম ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে জলাভূমি সংরক্ষণের বিষয়টি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। কাজেই ভবিষ্যত প্রজন্ম এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য আমাদের জলাশয়গুলো রক্ষা করতে হবে।
জল বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট এর চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ম এনামূল হক বলেন, জলাভূমি কমে যাওয়ায় ভূগর্ভে পানি স্তর ক্রমেই নিচে চলে যাচ্ছে। যে কারণে সবার দৈনন্দিন পানির চাহিদা মেটানোর জন্য সংকট বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস বলেন, অপরিকল্পিত গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন, সড়ক আর শিল্প-কারখানা ফলে ক্রমেই ভরাট হয়ে যাচ্ছে জলাভূমি ও নিম্নাঞ্চল। একের পর এক পরিকল্পনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দখল ও ধ্বংস করা হয়েছে বিভিন্ন জলাধার।
নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম এর সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না বলেন, বিভিন্ন আইনে জলাধার সংরক্ষণের কথা বলে হলেও মাঠ পর্যায়ে এর কোনে প্রতিফলন নেই। ফলে ১৯৭৮ সালে ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় জলাভূমির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৯৫২ হেক্টর এবং ২০১৪ সালে ঢাকা ও আশপাশে জলাভূমি কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৩৫ হেক্টর। নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান ইবনুর সাইদ রানা বলেন, খালগুলোকে সংকুচিত করে নির্মাণ করা হয়েছে বক্স কালভার্ট। এতে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে রাজধানী ও আশপাশের খাল-বিল ও জলাভূমি। জলাভূমি বৃষ্টির পানি ধারণ, পানি-বাতাস ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ঘটায়।
মানববন্ধনের সভাপতির বক্তব্যে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন পবা’র নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান বলেন, জলাভূমির আয়তন প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে আশংকাজনকহারে। ফলে জলের অভাবে সংকটাপন্ন জলাভূমি ও তার জীববৈচিত্র্য, ব্যাহত হচ্ছে কৃষি উৎপাদন। কাজেই সীমিত সম্পদকে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জলাশয়গুলোকে সংরক্ষণ করতে হবে। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রকল্প কর্মকর্তা আতিকুর রহমান এর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর যুগ্ম সম্পাদক শাহজাহান মৃধা বেনু, গ্রীণ মাইন্ড সোসাইটির সভাপতি আমির হাসান, সুন্দর বন রক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. মুজাহিদুল ইসলাম, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হোসেন এবং মডার্ন ক্লাবের আবুল হাসনাত প্রমুখ।