বাংলাদেশ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) স্বাক্ষরকারী প্রথম দেশ হওয়া সত্ত্বেও এফসিটিসির বিভিন্ন আর্টিকেল সম্পর্কে সাধারণ জনগনের মাঝে কোন ধারনাই নেই, যার ফলে ধূর্ত তামাক কোম্পানী খুব সহজেই মানুষকে বোকা বানাতে সক্ষম হচ্ছে। তাই এই এফসিটিসির আর্টিকেলসমূহ সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরার উদ্যোগ গ্রহন করেছে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাষ্ট ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্স সেল (টিসিআরসি)। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ জানুয়ারী ২০১৬ ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাষ্ট ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্স সেল (টিসিআরসি) যৌথভাবে এফসিটিসির আর্টিকেল ৫.৩ বাস্তবায়নে যুব সমাজের ভুমিকা শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করেন। সেমিনারটিতে প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় আমিনুল ইসলাম সুজন বলেন, এফসিটিসি হল বিশ্বব্যাপী তামাক নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক চুক্তি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)। জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে এফসিটিসিই পৃথিবীর প্রথম আন্তর্জাতিক চুক্তি; যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে চূড়ান্ত হয়। ২০০৪ সালের ২৯ নভেম্বর ৪০টি দেশ অনুস্বাক্ষর (র্যা টিফাই) করার ৯০ দিন পর, ২০০৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে এফসিটিসি আন্তর্জাতিক চুক্তি হিসেবে কার্যকর হয়। বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে প্রথম। ২০০৩ সালে এফটিসি যখন বাস্তবায়ন হয় তখন এটি প্রথম স্বাক্ষর করেছিল বাংলাদেশ পরবর্তী সময়ে ২০০৪ সালে এ চুক্তি অনুস্বাক্ষর বা র্যা টিফাইও করে বাংলাদেশ। এফসিটিসির আলোকে সরকার ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস করেছে। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে বিধিমালা প্রণয়ন করে, ২০১৩ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধিত পাস হয় এবং সর্বশেষ ২০১৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বিধিমালা পাস হয়।
আবু নাসের খান বলেন, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশের অধিক যুবক- তরুণরা। আর এই তরুণ সমাজই ধূর্ত তামাক কোম্পানীর প্রধান লক্ষ্য। বাংলাদেশ সরকার তামাক ও তামাক কোম্পানির কার্যক্রম প্রতিহত করতে আইন করেছে, কিন্তু যতদিন না যুব সমাজ এ ব্যাপাওে সোচ্চার হবে, ততদিন এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে পুরোপুরি সফলতা সম্ভব নয়। তাই তামাক কোম্পানির প্রতারণামূলক কর্মকান্ড কঠোরভাবে প্রতিরোধ করার জন্য যুব সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে, সোচ্চার হতে হবে, সক্রিয় ভুমিকা পালন করতে হবে।
ডা. হাসান শাহরিয়ার কল্লোল বলেন, তামাক গ্রহণের ফলে যেসকল রোগ যেমন: ক্যান্সার, হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, স্ট্রোক, হার্ট এটাক, ডায়বেটিস, হাঁপানি/এজমাসহ ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে ৬০ লক্ষাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করে। এর মধ্যে ৬ লক্ষ মানুষ রয়েছে; যারা মূলত পরোক্ষ ধূমপানের কারণে মারা যায়। বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়ায় নিকোটিন; টার; কার্বন মনোক্সাইড; মিথানল; আর্সেনিক; ডিডিটিসহ ৪০০০ এর বেশি ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান রয়েছে; যার মধ্যে ৪৩টি সরাসরি মানবদেহে ক্যান্সার সৃষ্টি করে। তাই তামাক ও ধূমপানকে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয় । তাই বাংলাদেশের তরুন সমাজকে এই আইন এবং এফসিটিসরি আর্টিকেল ৫.৩ বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।
সৈয়দা অনন্যা রহমান বলেন, বাংলাদেশে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কারণে প্রতিবছর ৯৫ হাজারের অধিক মানুয় মারা যায়। অথচ বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো দেশের তরুণ সমাজকে নেশায় ধাবিত করতে বিভিন্ন অপকৌশল অবলম্বন করে। সিএসআর ফান্ড, স্পন্সরশিপ, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, চাকুরির লোভনীয় অফারের নামে তরুণ সমাজকে প্রলোভন দেখিয়ে নেশায় আকৃষ্ট করছে এই সব তামাক কোম্পানিগুলো। অথচ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন, বিধিমালা এবং এফসিটিসি সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকলে যুব সমাজ তাদেও প্রলোভনে আকৃষ্ট না হয়ে বরং প্রতিবাদে সোচ্চার হতো, দেশের অনেক তরুন নেশায় বুজে না থেকে বরং দেশ উন্নয়নে বিশেষ ভুমিকা রাখতে পারতো।
মো: বজলুর রহমান বলেন, এফসিটিসির চুক্তি স্বাক্ষরকারী প্রথমদেশ বাংলাদেশ হওয়া স্বত্বেও বিড়ি-সিগারেটসহ তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ছবিসহ সতর্কবাণী প্রদানে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। যা আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে। মূলত বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো দেশের তরুণ সমাজকে নেশায় ধাবিত করতে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদানের বিষয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তামাক কোম্পানির প্রতারণামূলক কার্যক্রম ও ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে যুব সমাজকে এবার সক্রিয় হতে হবে। কোম্পানি গুলোর অবৈধ বিজ্ঞাপনসহ অন্যান্য অবৈধ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে সমাজের কাছে তুলে ধরার এবং সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য তিনি যুবক তরুনদের আহ্বান জানান।
ডা. শহিদুল কাদির পাটোয়ারী বলেন, তামাক কোম্পানী তাদের স্বার্থ রক্ষার্থে অবৈধ কর্মকান্ড করার মাধ্যমে তরুণ সমাজকে নেশায় ধাবিত করছে। কিন্তু আমাদেরকে ও নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে তামাক কোম্পানির অপকর্মকে সমাজের কাছে তুলে ধরতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের কাছে জনগণের স্বাস্থ্য উন্নয়ননীতিই প্রধান। তাই জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে তামাক কোম্পানি ও এর দোসরদের সঙ্গে পরিচালিত সব আলোচনা প্রকাশ্যে করতে হবে। কোনভাবেই তামাক কোম্পানিকে কোনরকম সহযোগিতা সরকার করতে পারবে না। এফসিটিসির আর্টিকেল ৫.৩ মূলত এই বিষয়গুলোকেই তুলে ধরেছে। তাই এই ধারাটি জানা এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে এ ধারা অনুযায়ী কাজ করা রাষ্ট্রের দাযিত্বের মধ্যেই পরে। তিনি এ ব্যাপারে ছাত্র-ছাত্রী সহ সকল যুব সমাজকে এগিয়ে আসতে অনুরোধ করেন।