‘বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগ মৃত্যুর হার বেড়ে চলছে। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যভাস, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও তামাক ব্যবহারজনিত কারণে এই ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তামাক কোম্পানীসহ অস্বাস্থ্যকর খাবার ও পানীয় উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর বানিজ্যিক তৎপরতার কারণে অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় এসব বহুজাতিক কোম্পানির আগ্রাসন প্রতিহত করা আবশ্যক।’ ৪ জানুয়ারী ২০১৬ সকাল ৯টায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টসহ ১২টি সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন বাংলাদেশ কেআইবি ভবনে খামার বাড়ি, ফার্মগেট,ঢাকায় “তামাক নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা সম্মেলন” শীর্ষক দিনব্যাপী সম্মেলনের ঘোষণায় এ বক্তব্য উঠে আসে।
সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্য মন্ত্রী মো. কামরুল ইসলাম এমপি বলেন, তামাক কোম্পানীগুলো শক্তিশালী হলেও বর্তমান সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আপোষহীনভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে। তামাকজাতদ্রব্য সকল পণ্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ চলমান থাকবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয়, জাঙ্ক ফুড থেকে শিশুদের রক্ষায় সরকারের পাশাপাশি পরিবারের অভিভাবকদের এগিয়ে আসতে হবে। ছেলেমেয়েদের খেলাধুলার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, সরকার জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে যুগান্তকারী নিরাপদ খাদ্য আইন পাস করেছে। এই আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন হলে খাদ্যজনিত রোগের ঝুঁকি ৯০ভাগ কমে আসবে।
বিশিষ্ট রাজনীতিক ও জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতি (নাটাব) এর সহ-সভাপতি মোজাফফর হোসেন পল্টু বলেন, তামাক কোম্পানীগুলো বিভিন্নভাবে মোড়কে ছবিসহ সর্তকবাণী প্রদানে ষড়যন্ত্র করছে। মহান সংসদে পাশ হওয়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রতি বর্তমান সরকার অঙ্গিকারবদ্ধ। তাই কোম্পানীগুলোর আগ্রাসন প্রতিহত করতে হবে। জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে আইনের আলোকে নিদিষ্ট সময়ের মধ্যেই ছবিসহ সর্তকবাণী প্রদান করতে হবে।
এড. ফজিলাতুন নেসা এমপি বলেন, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক কোম্পানীর আগ্রাসন রুখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। ১৬ কোটি মানুষ হবার পরও সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের জন্য খাদ্য নিরাপত্তায় আমরা সফল। সরকার এই অর্জন ধারাবাহিকতা রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করতে অস্বাস্থ্যকর ও ক্ষতিকর খাদ্য নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে হবে। তামাক ও তামাজাতদ্রব্য পাশাপাশি স্বাস্থ্যরক্ষায় ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড, হাই প্রসেস ফুড নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহন করা জরুরী।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার অধ্যাপক ডা. মোস্তফা জামান বলেন, দেশে সুনিদিষ্ট বিজ্ঞাপন নীতিমালা না থাকায় কোম্পানীগুলো বিভিন্ন ভ্রান্তকর বিজ্ঞাপন প্রচার করে শিশুদের নানা প্রকার ক্ষতিকর খাবারে অভ্যস্ত করা হচ্ছে। কোম্পানী এইসব বিভ্রান্তকর ও ক্ষতিকর প্রচারনার বিপক্ষে রাষ্ট্রের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহনে জনগণকে উদ্ভুদ্ধ করতে হবে। শাক-সবজি-ফলমূল উৎপাদনে কৃষকদের সহযোগিতা প্রদান করতে হবে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক সংগঠন দি ইউনিয়ন এর কারিগরি পরামর্শক এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের মূখপত্র সমস্বর এর নির্বাহী সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সুজন।
সম্মেলনে দিনব্যাপী সমন্বিত উন্নয়ন, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, স্বাস্থ্য উন্নয়নে টেকসই অর্থায়ন ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশÑএ চারটি সেশনে বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞবৃন্দ আলোচনা করেন। সারাদেশের প্রায় দেড় শতাধিক সংস্থার প্রতিনিধি এতে অংশ নেন। এর আগে সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রোকসানা কাদের, বাংলাদেশ ইউনিভাসির্টি অব হেলথ সাইন্স-এর উপাচার্য অধ্যাপক লিয়াকত আলী বক্তব্য রাখেন।
অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, তামাক সেবনের কারণে ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ নানাবিধ অসংক্রামক রোগ হয়। তামাকের বহুমাতিক ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে আরও বেগবান করতে হবে। পাশাপাশি তামাকের মত ক্ষতিকর অন্যান্য উপাদান, যেমন কোমল পানীয়, ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তিনি মোবাইল রেডিয়েশনের ক্ষতিকর দিকও তার বক্তব্যে তুলে ধরেন। সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বিক্ষিপ্ত ভাবে আমাদের কাজ করলে হবে না। আমাদের জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে।
জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল, এশিয়ান ইউনিভাসিটি ফর উইমেন, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স, বাংলাদেশ ইউনিভাসিটি অব হেলথ সাইন্স, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভাসিটি, হেলথব্রিজ-কানাডা, জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতি (নাটাব), জাতীয় বাতজ্বর ও হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন, দি পিপলস ইউনিভাসিটি অব বাংলাদেশ সহ আয়োজক সংস্তার প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন।