ধূমপানসহ ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহারে ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোক, হাঁপানি, ডায়বেটিসহ নানাবিধ প্রাণঘাতী রোগের সৃষ্টি হয়। তামাকজনিত ভয়াবহতা কমিয়ে আনতে সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস করেছে। আইন বাস্তবায়নসহ তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে গতি আনতে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে।
পাশাপাশি তামাকের মত ক্ষতিকর কোমল পানীয়, মোড়কজাত কেমিকেল জুস, এনার্জি ড্রিংক্স, জাঙ্কফুড (চিপস ও ফ্রোজেন খাবার ইত্যাদি) ফাস্টফুড, পরিবেশ দূষণকারী প্লাস্টিকের বোতলজাত পানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে এসব ক্ষতিকর পণ্যের উপর স্বাস্থ্যকর আরোপ জরুরি। এনজিও বিষয়ক ব্যুরো এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫ সকাল ১১টায় এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় সভায় বক্তরা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
তামাক নিয়ন্ত্রণ ও হেলথ প্রমোশন বিষয়ক এই মতবিনিময় সভাপতিত্ব করেন এনজিও বিষয়ক ব্যুরো’র ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক (যুগ্ম-সচিব) কে এম আব্দুস সালাম। এতে আলোচনা করেন ফ্রান্সভিত্তিক জনস্বাস্থ্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন দি ইউনিয়নের কারিগরি উপদেষ্টা এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর পরিচালক মেজবাহ উদ্দিন, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী প্রমুখ। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রজেক্ট অফিসার শারমিন আক্তার রিনি’র সঞ্চালনায় সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন সংস্থার কর্মসূচি ব্যবস্থাপক সৈয়দা অনন্যা রহমান।
কে এম আব্দুস সালাম বলেন, মানুষ সুস্থ্য থাকলে ব্যক্তিগত উৎপাদনে ভূমিকা রাখতে পারবে, যা জাতীয় উৎপাদনেও ভূমিকা রাখবে। তাই মানুষকে সুস্থ্য রাখতে তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে জনগণকে রক্ষা করার স্বার্থে প্রতিটি এনজিও অফিসে তামাকমুক্ত সাইন স্থাপন করার জন্য এনজিও ব্যুরোর পক্ষ থেকে নিদেশনা প্রদান করা হবে। পাশাপাশি এনজিও বিষয়ক ব্যুরো যখন পরিদর্শন করে, তখন সংস্থাসমূহকে তামাক বিরোধ কার্যক্রম পরিচালনায় উদ্বুদ্ধ করা হবে।
গোলাম মেজবাহ উদ্দিন বলেন, জনগণের স্বার্থে সরকারী বেসরকারী সংগঠনকে এক সাথে কাজ করতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে স্থায়ী উন্নয়নসহ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দিতে এবং তামাকের মত ক্ষতিকারক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপ। সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসাবে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো সরকারের চলমান তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে বদ্ধ পরিকর।
এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল ও দীর্ঘমেয়াদী। প্রাণঘাতী এসব রোগের সুস্থ হবার সম্ভাবনা কম। তাই এসব রোগ প্রতিরোধকে গুরুত্ব দিয়েই সরকার জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি প্রণয়ন করেছে । জাতীয় স্বাস্থ্য নীতির বাস্তবায়ন, বৈশ্বিক পরিমন্ডলে রোগ প্রতিরোধে বাংলাদেশের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়নকে প্রাধান্য দিতে ‘হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন’ গঠন জরুরি। তামাকজাত দ্রব্য থেকে অর্জিত ১% সারর্চাজের টাকা এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধে ব্যয় করা হয়। তবে তা জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে ভূমিকা রাখাবে। পাশাপাশি অন্যান্য স্বাস্থ্যহানীকর পণ্য কোমল পানীয়, চিপস, ফাস্ট ফুডসহ অতিরিক্ত কর আরোপ করে তা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় ব্যয় করতে হবে।
গাউস পিয়ারী বলেন, র্দীঘদিন যাবৎ জনস্বাস্থ ও পরিবেশ রক্ষায় জাতীয় এবং তৃণমূলে কাজ করেছে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট। তামাক নিয়ন্ত্রণে তৃণমূলের সংগঠনের সঙ্গে সরকারী, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট দেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ আন্দোলনকে বহুলাংশে গতিশীল করেছে।
সভায় এনজিও বিষয়ক ব্যুরো’র বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, জাতীয যক্ষা নিরোধ সমিতি (নাটাব), বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।