তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ০৭ এপ্রিল ২০১৫ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে নগর ভবনের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত ঘোষণা দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এর প্রশাসক শওকত মোস্তফা। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এর যৌথ উদ্যোগে ‘স্বাস্থ্য রক্ষায় তামাকের বিপণন নিয়ন্ত্রণে লাইসেন্সের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: মাহবুবুর রহমান।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মো. আনসার আলী খান। সম্মানিত আলোচক হিসাবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল এর সমন্বয়কারী আমিন উল আহসান, জনস্বাস্থ্য বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন দি ইউনিয়ন এর টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম। এতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট গাউস পিয়ারী মুক্তি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মীর মুস্তাফিজুর রহমান এর সঞ্চালনায় সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার সৈয়দা অনন্যা রহমান।
সৈয়দা অনন্যা রহমান বলেন, ঢাকায় যত্রতত্র বিড়ি-সিগারেটের দোকান লক্ষ্য করা যায়। এসব দোকান তামাক কোম্পানিগুলো তাদের মরণঘাতী সিগারেটের প্রচারণা চালাচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে তামাকজাত দ্রব্যের দোকান তরুণ প্রজন্মকে নেশার দিকে ধাবিত করছে। এছাড়া বখাটে তরুণরা সিগারেটের দোকানে আড্ডা দেয় এবং মেয়েদের উত্যক্ত করে। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে বিড়ি-সিগারেটের দোকান উচ্ছেদ করা দরকার। সিটি করপোরেশন নিজ ক্ষমতাবলে এটা করতে পারে।
শওকত মোস্তফা আরও বলেন, সিটি করপোরেশন এর নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছে। এসব ম্যাজিস্ট্রেট ও স্যানেটারি ইনস্পেক্টর এর মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় কেউ যেন আইন লঙ্গণ করতে না পারে, সেটা আমরা লক্ষ্য রাখব।
আনসার আলী খান বলেন, পশ্চিমা বিশ্ব থেকে ভাল বিষয়ের পাশাপাশি অনেক খারাপ জিনিস আমাদের মধ্যে চলে এসেছে। তামাক, ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড, কোমল পানীয় এর মত স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিষয়গুলো উন্নত দেশগুলো থেকে এসেছে। উন্নত দেশগুলো এখন ক্ষতিকর এসব চর্চা থেকে সরে আসছে। আমাদেরও সরে আসতে হবে। পাশাপাশি জনগণের মধ্যেও ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। যত্রতত্র ময়লা ফেলার অভ্যাস পরিহার করতে হবে। সুস্থ্য থাকার জন্য প্রত্যেককেই ধূমপানসহ সব রকম নেশা থেকে সরে আসতে হবে।
এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, তামাক বিক্রি করতে লাইসেন্স প্রথা চালু করা দরকার। এতে একদিকে যত্রতত্র বিড়ি-সিগারেটের দোকান স্থাপন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। অন্যদিকে সিটি করপোরেশন লাইসেন্স ফি গ্রহণের মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে। এছাড়া সিটি করপোরেশন এলাকায় মানুষের শরীর চর্চার জন্য পার্ক, খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত স্থান সংরক্ষণ করতে হবে।
আমিন উল আহসান বলেন, তামাক জনস্বাস্থ্যের জন্য প্রধান হুমকি। তামাকজাত দ্রব্য সেবনে দেশে ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোক, উচ্চরক্তচাপ ইত্যাদি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে লক্ষাধিক মানুষ মারা যায়। এছাড়া তামাকজনিত রোগে আক্রান্তদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা অপচয় হয়। এসব বিবেচনায় সরকার জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন ও সরকারের স্বাস্থ্য ব্যয় কমিয়ে আনতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করেছে।
গাউস পিয়ারী বলেন, আইনে তামাকজাত দ্রব্যের সবরকম বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু তামাক কোম্পানিগুলো আইন লঙ্ঘন করে বিজ্ঞাপন চালাচ্ছে। আইন বাস্তবায়নে সিটি করপোরেশন নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট এর মাধ্যমে উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।
এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর উদ্যোগে নগর ভবনের সামনে থেকে এক বর্ণাঢ্য র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। র্যালিতে প্রত্যাশা, অরুণোদয়ের তরুণ দল, জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতি (নাটাব), সিরাক বাংলাদেশ, স্পন্দন, মাধবিকা, ইপসা, একলাব, মাস্তুল ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, গ্রীণ মাইন্ড সোসাইটি, উবিনীগ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি অংশ নেন।