English | Bangla
সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৫ ও সড়ক পরিবহন আইন-২০১৫ অনুমোদনের পূর্বে সংশোধনের দাবি
নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলা আজ বিশ্ববাসীর নিকট একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে বিশ্বে বছরে প্রায় ১২.৫ লক্ষ মানুষ প্রাণ বিসর্জন দেন এবং বিশ্ব জিডিপি এর ৩ শতাংশের সমপরিমাণ সম্পদের ক্ষতি হয়। সরকারও বিষয়টি উপলব্ধি সাপেক্ষে “বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৫(মন্ত্রী পরিষদে অনুমোদিত)” এবং “সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৫” নামে দুটি পৃথক আইন (খসড়া) প্রণয়ন করেছে। কিন্তু আইনের মধ্যে অনেক দুর্বলতা এবং সামঞ্জস্যহীনতা রয়েছে। নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব সড়ক পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষকে দুর্ঘটনা সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ এবং তা মূল্যায়ণ সাপেক্ষে কর্ম নির্ধারণ করতে হবে। পথচারী , অযান্ত্রিক যানবাহন সম্পর্কে কার্যাবলী নির্দেশ করতে হবে। প্রাইভেটকারের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতার বিষয়ে আইনে উল্লেখ থাকতে হবে। এ ছাড়া আইন দুটিতে অনেক সংযোজন, বিয়োজন এবং সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে। আজ সকাল ১১.০০ টায় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর পরিবহন বিষয়ক উপ-কমিটির আয়োজনে এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বি.আই. প) ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট’র সহযোগীতায় জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে “নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব সড়ক পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রনীত আইনের (খসড়া) উপর মতামত’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো অভিমত ব্যক্ত করেন। 
 
মতবিনিয়ম সভার শুরুতেই মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার এবং সদস্য সচিব, পরিবহন বিষয়ক উপ-কমিটি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মারুফ হোসেন। মোটরযান অধ্যাদেশ মূলত যান্ত্রিক যান সম্পর্কিত। এর পরিবর্তে সড়ক পরিবহন আইন তৈরি হচ্ছে জেনে আমরা আশান্বিত হয়েছিলাম। কারণ সড়কে পথচারী, অযান্ত্রিক যানসহ স্থানীয়ভাবে তৈরিকৃত নানা ধরনের যানবাহন চলাচল করে থাকে। কিন্তু উক্ত আইনে এ বিষয়গুলোকে সম্পূর্ন অনুপস্থিত। বর্তমান অবস্থায় রেখে এ আইন দুটি পাস করা হলে এর মাধ্যমে নিরাপদ সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা অসম্ভব ব্যাপার। তাই আইনগুলিকে কার্যকর আইন হিসেবে প্রণয়নের জন্য পর্যালোচনার কোন বিকল্প নেই। 
 
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সহ-সভাপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, আমাদের দেশে আইনের অভাব নেই। কিন্তু বিশেষজ্ঞ, সৎ এবং নিরপেক্ষ কর্তৃপক্ষের অভাবে আইন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। সরকার তড়িঘড়ি করে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ আইন (মন্ত্রিপরিষদ অনুমোদিত)-২০১৫ ও সড়ক পরিবহন আইন (খসড়া)-২০১৫’র প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। এই আইন প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামতের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তা না হলে উক্ত আইনের বিরুদ্ধে আদালতে রিট করা হবে। পরিশেষে তিনি বলেন প্রয়োজনে আরো সময় নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকল মহলের সাথে আলোচনা করে পথচারী ও জনবান্ধব আইন করতে হবে।
 
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হাবিব বলেন, নিরাপদ সড়ক গড়ে তুলতে প্রণীত আইন দুটিতে সংযোজন, বিয়োজন এবং সংশোধন প্রয়োজন। মহাসড়ক আইনে কোন সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ নেই। ফলে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে সকল কার্যক্রম চলছে। এ সময় নিয়মিত গবেষণা, পর্যবেক্ষণ এবং জনমানুষের সাথে আলোচনা করেই নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন মহাসড়কের আইন দিয়ে আঞ্চলিক সড়ক বা নগরের সড়কগুলোকে নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব করা সম্ভব নয়। 
 
মতবিনিময় সভার সভাপতি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স(বি. আই. পি) সাধারন সম্পাদক ও আহ্বায়ক পরিবহন বিষয়ক উপ-কমিটি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ড. আকতার মাহমুদ বলেন, নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব সড়ক গড়ে তুলতে আইন প্রয়োগ জরুরি। কাজেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এবং আরো সময় নিয়ে সকলের গ্রহনযোগ্য মতামতের ভিত্তিতে এই আইনটি পাস করবেন। যা বাংলাদেশে নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। শুধু মাত্র আইন তৈরী নয়, এর প্রয়োগ যাতে সঠিক ভাবে কার্যকরহ হয় তাও নিশ্চিত করতে হবে।  
 
অ্যাকশন রির্সাস ইনিস্টিটিউটের গবেষক ড. মো. মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, আইন প্রনয়ণ করলেই হবে না। আইনকে নিয়ে গবেষণা করতে হবে। অতীতের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করতে হবে।
 
ক্যাবের প্রতিনিধি অধ্যাপ সামশুল আলম বলেন, এই আইন দু’টি মোটেই পথচারী ও জনবান্ধব নয়। এই আইনটি আমরা প্রত্যাখান করছি। তিনি আইন দুটির আমুল সংস্কার করে জনগনের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার কথা বলেন। এছাড়া বক্তব্য রাখেন, ইষ্টান ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন উপাচার্য ড. নুরুল ইসলাম, বাপা’র সহসভাপতি অধ্যাপক এএম মুয়াজ্জাম হুসেইন, বেন অস্ট্রেলিয়ার সমন্বয়ক কামরুল আহসান খান, প্রমুখ।