হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়বেটিসের মতো রোগগুলো বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৬০%। বাংলাদেশের ৯৭% লোক এ রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থাকে প্রাধান্য না দিলে দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণ, অপর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্য বর্জনের মাধ্যমে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণে তামাকজাত দ্রব্যের উপর আরোপিত ১% সারচার্জ এর অর্থ দিয়ে হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গঠন জরুরী। ০৩ নভেম্বর সকাল ১১ টায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সাইন্স এর অডিটরিয়ামে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সাইন্স (বিইউএইচএস) এর যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় এই আহ্বান জানানো হয়।
সভায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সাইন্স এর উপাচার্য অধ্যাপক লিয়াকত আলীর সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন হেলথ ব্রিজের আঞ্চলিক পরিচালক দেবরা ইফরইমসন এবং বক্তব্য রাখেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ, দি ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, সমাজকর্ম বিভাগের প্রধান মো. হাবিবুর রহমান, হেলথ প্রমোশন এবং হেলথ এডুকেশন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক খুরশিদা খানম, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ক্যান্সার ইপিডেমিওলজি বিভাগের প্রধান ডা: মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন ।
সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, তামাকজাত দ্রব্য থেকে আদায়কৃত সারচার্জের সম্পূর্ণ অর্থ শুধুমাত্র তামাক নিয়ন্ত্রণ বা চিকিৎসাকেন্দ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ব্যয় না করে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদারকরণে ব্যয় করার সুযোগ রয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণের সাথে সাথে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের অন্যান্য ঝুঁকিগুলো হ্রাসেও এগিয়ে আসতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দিষ্টভাবে কিছু টাকা রেখে বাকী অর্থ দিয়ে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জোরদার করতে হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী।
এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, প্রকৃতপক্ষে শতকরা ৮০% অপরিণত হৃদরোগ, স্ট্রোক ও ডায়াবেটিস এবং ৪০ ভাগ ক্যান্সার প্রতিরোধযোগ্য। বিদ্যমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রাধান্য পাচ্ছে না। অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় জাতীয় সংসদ ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে সকল তামাকজাত দ্রব্যের উপর ১% স্বাস্থ্য উন্নয়ন কর আরোপ করেছে। যার পরিমান কয়েকশত কোটি টাকা। অর্থ বিল অনুসারে এ অর্থ স্বাস্থ্য উন্নয়নে ব্যয়ের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
মো. হাবিবুর রহমান বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ তামাকজাত দ্রব্যের উপর করারোপের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধে হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছে। বিভিন্ন দেশে প্রতিষ্ঠিত হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা আমাদের দেশের জন্য সহায়ক ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করতে পারি। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশই তরুণ। ২০৬১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা পাঁচ গুণ পর্যন্ত বেড়ে আনুমানিক ৫ কোটি ৫৭ লাখ হবে। হেলথ প্রমোশনের কার্যক্রমের মাধ্যমে বর্তমান যুবদের অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে সচেতন করতে পারলে আগামীতে দিনের প্রবীনদের মাঝে এ রোগ কমে আসবে ।
অধ্যাপক খুরশিদা খানম বলেন, জনস্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশে হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা দরকার। এ জন্য সমন্বিত উদ্যোগ এবং সংশ্লিষ্ট সেক্টরগুলোকে নিয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন।
ডা: মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, দেশে চিকিৎসাকেন্দ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চেয়ে রোগ প্রতিরোধ নিশ্চিতকরণে হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গঠনের প্রয়োজনীতা অধিক। প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দিয়ে দেশের জনগণকে সুস্থ রাখতে যথাযথ পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।
অধ্যাপক লিয়াকত আলী বলেন, বর্তমানে সংক্রামক রোগের তুলনায় অসংক্রামক রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বাস্থ্য একটি ব্যাপক বিষয় এটি উপলব্দি করার সময় এসেছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর চিকিৎসা করাতে গিয়ে ৬.৪ মিলিয়ন বা ৪ শতাংশ মানুষ দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে। ফলে শুধুমাত্র স্বাস্থ্য নয় এর পাশাপাশি পরিবেশ, অর্থনৈতিক, সামাজিক উন্নয়ন ব্যহত হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তোরণে প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রতি জোরদারকরণে হেলথ প্রমোশনে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন ।