English | Bangla
যাত্রী হয়রানি এবং গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ কর
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে ঢাকা ও চট্রগ্রাম মহানগরী এবং ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন অথরিটি এলাকায় চলাচলকৃত বাস ও মিনিবাসের যাত্রী প্রতি সর্বোচ্চ ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১০পয়সা বাড়িয়ে যথাক্রমে ১.৭০ টাকা এবং ১.৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সর্বনি¤œ ভাড়া বাসে ৭ টাকা ও মিনিবাসে ৫ টাকা বহাল রাখা হয়। নতুন ভাড়া ০১ অক্টোবর থেকে ঢাকায় এবং  ০৫ অক্টোবর থেকে চট্রগ্রামে কার্যকর হয়। মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী জেলা ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটি (ডি টি সিএ) এর আওতায় হওয়ায় ঢাকার সমান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে পরিবহন মালিক এবং শ্রমিকেরা যাত্রীদের জিম্মি করে রীতিমত জোরপূর্বক সরকার নির্ধারিত বর্ধিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত কয়েক গুণ ভাড়া আদায় করছেন। অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে বাস ও মিনিবাস শ্রমিকদের সাথে যাত্রীদের বাদানুবাদ এমনকি হাতাহাতি, মারামারির ঘটনাও ঘটছে এবং যাত্রীরা হয়রানির স্বীকার হচ্ছে। যাত্রী হয়রানি এবং গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধের দাবীতে আজ ২১ অক্টোবর ২০১৫, বুধবার, সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ), মার্শাল আর্ট ফাউন্ডেশন, আইনের পাঠশালা, পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটি, পল্লীমা গ্রীণ এবং বিসিএইসআরডির যৌথ উদ্যোগে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। 
 
নাসফের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ময়নার সভাপতিত্বে মানবন্ধনে বক্তব্য রাখেন পবার নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো: মারুফ হোসেন, পল্লীমা গ্রীণের সদস্য সচিব আনিসুল হোসেন তারেক, আইনের পাঠশালার সভাপতি এডভোকেট সুব্রত দাস খোকন, পবার কো-অর্ডিনেটর আতিক মোরশেদ, মার্শাল আর্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সদস্য নাইমা, পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি বোরহান উদ্দিন আহমেদ, পুরান ঢাকা উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি নাজিম উদ্দিন, ক্যামেলিয়া চৌধুরী প্রমুখ।
 
বাস ও মিনিবাসে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা নেই। বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানীর পক্ষ থেকে দুরুত্ব বাড়িয়ে ভাড়ার তালিকা টাঙানোরও অভিযোগ রয়েছে। ঢাকা এবং ঢাকার আশেপাশের জেলার প্রত্যেক নাগরিককে মাসে দুরত্বভেদে ৫০০ টাকা থেকে ১,৫০০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হচ্ছে। যার ফলে প্রতিটি পরিবারকে যাতায়াত খাতে অতিরিক্ত ২,০০০ টাকা থেকে ৪,০০০ টাকা ব্যয় করতে করতে হবে। 
 
বক্তারা বলেন, যানবাহনে যাত্রী সেবার লেশ মাত্র নেই। বিশেষ করে লক্করঝক্কর বাস,জানালা ভাঙা, লাইট ও ফ্যান নেই, বৃষ্টির সময় ছাদ থেকে পানি পড়ে, ইঞ্জিনের বিকট শব্দ, হাইড্রোলিক হর্ণের ব্যবহার, ইত্যাদি। রাজধানীসহ সারা দেশে যানজটের অন্যতম একটি কারণ গণপরিবহন শ্রমিকদের স্বেচ্ছাচারিতা। তারা তাদের খেয়াল-খুশি মতো এমনভাবে ক্রসিংয়ে বা মোড়ে বা রাস্তার মাঝখানে বাস থামিয়ে যাত্রী উঠানো-নামানো কওে, যাতে করে পেছনের কোন যানবাহন তাকে অতিক্রম করতে না পারে। ফলে সবুজ সিগনাল থাকা সত্বেও যানবাহনগুলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বাস ষ্ট্যান্ডের জন্য নির্ধারিত স্থানে বাস না থামিয়ে তাদের ইচ্ছা মতো স্থানে থামিয়ে থাকে।
 
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ তুচ্ছ অজুহাতে যখন-তখন বিনা নোটিশে পরিবহন ধর্মঘট ডেকে সৃষ্ট নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে জনগণকে অবর্ণনীয় র্দুভোগের শিকার হতে হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও বাসে ভাড়ার তালিকা না থাকায় বিআরটিএ-র ভ্রাম্যমান আদালত চালকের সহকারীকে এক মাসের কারাদন্ড প্রদান এবং গাড়ির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় ৫,০০০ টাকা জরিমানা করেন। এর জের ধরে বাস বন্ধ করে শ্রমিকদের প্রতিবাদের নামে রাজধানীতে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটের মতো অবস্থার সৃষ্ঠি করে। এতে রাজধানীতে গণপরিবহনের তীব্র সঙ্কট নেমে আসে। রাজধানীবাসীকে চরম র্দুভোগ পোহাতে হয়। যাত্রীদের জিম্মি করে অধিকার আদায়ের অপকৌশল বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় এর পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। 
রাজধানীতে প্রায় ২৫০টি যাত্রীছাউনি রয়েছে। যাত্রীছাউনিগুলোতে ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় অবৈধভাবে ভোগদখল করে এক শ্রেণীর ব্যসায়ীরা দিনের পর দিন ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। যাত্রী ছাউনিগুলো অপরাধীদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। 
প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান বলেন, গণপরিবহন পরিচালনার ক্ষেত্রে যে আইন রয়েছে তা অত্যন্ত দুর্বল। দুর্বল এ আইন বাস্তবায়নেও নেই কোন কার্যকর উদ্যোগ। হঠাৎ করে কখনো আইন প্রয়োগের উদ্যোগ নেয়া হলে মালিক এবং শ্রমিকেরা রাস্তা অবরোধ বা ধর্মঘট ডেকে গোটা দেশ ও জনগণকে জিম্মি করে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং তাদের অযৌক্তিক দাবী আদায় করে থাকে। গণপরিবহনের  মালিক এবং শ্রমিকদের আইন অমান্য করে তাদের খেয়াল খুশি মতো যানবাহন পরিচালনার প্রবণতা রোধে তাদের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সরকারকে এখনই সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় এ সেক্টরে ভবিষ্যতে যে ভয়াবহ নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে তা জনজীবনে দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিবে ও অর্থনীতিতে বিরুপ প্রভাব ফেলবে।
 
করণীয়
-গণপরিবহনে যাত্রী হয়রানি এবং নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে সরকারকে আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
-গণপরিবহনে এবং বাস ষ্ট্যান্ডে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষরিত সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা টাঙ্গিয়ে দিতে হবে। 
-গণপরিবহন পরিচালনার ক্ষেত্রে যে আইন রয়েছে তা বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা। 
-সড়কপথে যাতায়াত নিরাপদ ও সুশৃংখল করার লক্ষ্যে কোন রকম রাজনৈতিক বিবেচনা ছাড়াই বিদ্যমান আইন প্রয়োগে সরকারের প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
-অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, ফিটনেসবিহীন যানবাহন পরিচালনা, বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং হাইড্রোলিক হর্ণ ব্যবহার বন্ধে সারা দেশে নিয়মিতভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা। 
-ভাড়া অরাজকতা বন্ধে সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
-পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের অযৌক্তিক ও হটকারী আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে জনস্বার্থে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া এবং প্রয়োজনবোধে লাইসেন্স বাতিল করা।
-যাত্রী হয়রানি এবং নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে যাত্রীসহ পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সচেতন করতে হবে।
-অটোরিক্সার ভাড়া নিয়ে মালিক ও চালকেরা যাতে কোন প্রকার নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে সে লক্ষ্যে ০১ নভেম্বর থেকেই বিআরটিএকে আইনানুগ কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
-অটোরিক্সাগুলো যাতে মিটারে চলে এবং মিটারে যাতে কোন রকম কারচুপি না হয় তা ০১ নভেম্বর থেকেই মনিটরিং করতে হবে।
-ক্রসিংয়ে বা মোড়ে বা রাস্তার মাঝখানে কোন অবস্থাতেই যাত্রী উঠানো-নামানো যাবে না।
-বাস ষ্ট্যান্ডের স্থান নির্ধারণ করে দেয়া এবং শুধুমাত্র বাস ষ্ট্যান্ডেই যাত্রী উঠানো-নামানো করতে হবে।
-বাস ষ্ট্যান্ডে যাত্রীছাউনি নির্মাণ করা এবং বিদ্যমান যাত্রীছাউনিগুলো দখলমুক্ত করে যাত্রীদের ব্যবহারোপযোগী করা।
-মালিক ও শ্রমিকদের সাথে নিয়মতভাবে বৈঠক এবং শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।