১৪ অক্টোবর বিশ্ব সাদা ছড়ি দিবস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ১ কোটি ৭০ লাখ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, এর মধ্যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ৩৩ লাখ। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা বিশেষ করে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সমাজে নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। বিশেষ করে মেয়ে প্রতিবন্ধীরা নানা রকম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ইতিমধ্যে সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার নিশ্চিত করনের পদক্ষেপ হিসেবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন- ২০১৩ প্রনয়ন করেছেন। আইন বাস্তবায়নে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও কিছু প্রতিবন্ধকতার কারনে আইনের সুফল পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পরিচয়পত্র এবং ক্ষতিপূরন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ন ধারা দুটি বাদ দিয়ে গেজেট প্রকাশ করায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা আইন থেকে সুফল পাচ্ছে না। আজ সকাল ১১.০০ টায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাষ্ট এর আয়োজনে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে “ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ এর ৩১ ও ৩৬ নং ধারা বাস্তবায়ন” শীর্ষক আলোচনা সভা থেকে আলোচকবৃন্দ এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
স্বাগত বক্তব্য হিসেবে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাষ্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, আইনের যে ধারাগুলো আছে তা বাস্তবায়ন এবং গতিশীল করা উচিত। এ ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি দেয়া উচিত। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরও সুবিধা পাওয়া অধিকার। তাদের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। প্রতিবন্ধি ব্যক্তিদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানান।
তালুকদার রিফাত পাশা তার উপস্থাপনায় বলেন, বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন -২০১৩ প্রণয়ন করেছেন। আইনটিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার নিশ্চিত করণে কমিটি গঠন , গণ পরিবহনে আসন সংরক্ষণ এবং সকল গণ স্থাপনায় প্রবেশগম্যতার বিষয়গুলো স্থান পেয়েছে। তিনি বলেন , আইনটির মধ্যকার ধারা ৩১ ও ৩৬ এর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পরিচয় পত্র এবং বৈষম্য দূরীকরণে ক্ষতিপূরনের মতো বিষয়গুলোকে বাদ দিয়ে গেজেট প্রকাশ করায় আইনটি থেকে সুফল পাওয়া সম্ভব হবে না। তিনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ বাস্তবায়নে ধারা ৩১ ও ৩৬ কে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকি, উপাচার্য্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বলেন, প্রতিবন্ধী বলে কাউকে সীমাবদ্ধ করা উচিত নয়। প্রতিবন্ধীত্ব আমাদের সবার মাঝে আছে। অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিই ভীষণ প্রতিভাবান। তারা অনেক বেশি সংবেদনশীল। সমাজের নানা ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমস্যার সমাধান করা আমাদের দায়িত্ব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রমের সাথে আমরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে। তিনি বেসরকারি সংগঠনগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষা, প্রবশগম্যতা এবং অধিকার সুরক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
এডভোকেট মোশারফ হোসেন মজুমদার বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যাত অন্যান্য সাধারন মানুষের মত সমাজে চলাচলা করতে পারে সেক্ষেত্রে আইনটি একটি যুগপোযোগী আইন। কিন্তু এই আইনের ২ টি ধারা স্থগিত রাখা হয়েছে। আমরা আশা করবো সরকার এ ব্যাপারে দ্রুত কাজ করবে। প্রতিŸন্ধী ব্যক্তিরা যাতে নির্বিঘেœ স্বাধীনভাবে পথ চলতে পারে সেজন্য ট্রাফিক পুলিশদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। অধ্যাপক ড. শারমিন হক, শিক্ষা ও গবেষনা ইনিস্টিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বলেন, সরকার এই আইন বাস্তবায়নে দ্রুত বিধিমালা প্রণয়ন করবেন এবং প্রচারে আরো বেশি অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন। তিনি বলেন, পরিবার থেকে শুরু করে সমাজিক সকল পর্যায়ে মেয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। কাজেই মেয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে জোর দিতে বলেন। কামরুল আহসান খান, সমন্বায়ক, বাংলাদেশ ইনভাইরমেন্ট নেটওয়ার্কের অষ্ট্রেলিয়ান চেপ্টার এবং এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, আঞ্চলিক পরিচালক, দ্যা ইউএন বলেন, অন্যান্য আইনের মতো যেন এই আইন হারিয়ে না যায়। আইন বাস্তবায়নে অনেক পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। সচেতনা, বাজেট, অবকাঠামো নির্মান, প্রয়োগ, প্রশিক্ষণ, সমন্বয়ন এই বিষয়গুলো আইন বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখে। কিন্তু আমাদের দেশে আইন প্রণয়ন করা হয় ঠিকই কিন্তু তা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণ না করায় অধিকাংশ আইন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।
সভাপতির বক্তব্যে সাইফুদ্দিন আহমেদ, পরিচালক, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাষ্ট বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমস্যা সমাধানে সকলকে আরো বেশি সোচ্চার হতে হবে। একটু সহযোগীতা পেলেই তারা সাফল্য লাভ করতে পারে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ব্যাপারে সবার দৃষ্টিভঙ্গীর উন্নয়ন ঘটাতে হবে। এছাড়াও আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, জয়ন্ত কুমার শাহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ইবনুল সাইদ রানা, পিএনএসপি এর রফিক জামান প্রমুখ।