যাতায়াত নৈরাজ্য বন্ধে প্রাইভেটকার নয় গণপরিবহনের প্রাধান্য দাও ভাড়া ও যাত্রী দুর্ভোগ কমাও
পরিবহন পরিকল্পনায় গণ-পরিবহনের প্রতি অবহেলা, নানা অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনায় যাত্রী হয়রানি চরম আকার ধারণ করেছে। গণপরিবহনের অপ্রতুলতা ও নিয়ন্ত্রণহীন ভাড়া আদায় এবং রাস্তায় প্রাইভেটকার চলাচলে প্রাধান্য পাওয়ায় মানুষ প্রাইভেটকারের দিকে ঝুঁকছে। পরিণামে রাস্তায় অসহনীয় যানজটে ঘন্টার পর ঘন্টা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় যাতায়াত নৈরাজ্য বন্ধে উন্নত ও পর্যাপ্ত গণপরিবহন প্রাধান্য যাতায়াত ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী। আজ ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫, শনিবার, সকাল ১১টায় শাহবাগস্থ চারুকলা অনুষদের সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট, অরুণোদয়ের তরুণ দল এবং মাস্তুল ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে মানববন্ধন থেকে উক্ত দাবী জানানো হয়।
বক্তারা বলেন, নগরীর পরিবহন ব্যবস্থায় চলছে চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কোন যানবাহন পাওয়া যায় না। যান পেলেও যানজটে মহামূল্যবান সময়ের অপচয় হচ্ছে। মহিলা যাত্রীদের পক্ষে ভদ্রোচিতভাবে যাতায়াত কঠিন হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি গণপরিবহনের ভাড়া নিয়ন্ত্রীনহীনভাবে বাড়ছে। যত্রতত্র প্রাইভেট গাড়ি পার্কিং করায় ফুটপাত দিয়ে হেঁটে চলাচলও কঠিন হয়ে পড়েছে, বেড়ে গেছে দূর্ঘটনা। এর অন্যতম কারণ ঢাকা শহরে বেশিরভাগ মানুষ যে মাধ্যমগুলিতে যাতায়াত করে থাকে যেমন- পাবলিক বাস, রেল, রিকশা, সাইকেল, হাঁটা এই মাধ্যমগুলির প্রতি অবহেলা ও চলাচলের পরিবেশ উন্নত না করা। ঢাকায় শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে পায়ে হেঁটে, বাসে বা রিক্সায়। মাত্র ৫ ভাগ মানুষ প্রাইভেট গাড়ী ব্যবহার করে। অথচ তাদেরকেই প্রাধান্য দিয়েই সকল পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে। তাছাড়া ফুটপাতগুলো নোংরা, নিরাপত্তাহীন ও সরু হওয়ায় হাঁটার কোন পরিবেশ নেই। বিভিন্ন রোড় থেকে ক্রমান্বয়ে রিক্সা তুলে দেওয়ায় শিশু, মহিলা, বয়স্ক, বৃদ্ধ কিংবা কিছু মালামালসহ সাধারণ মানুষের চলাচলে মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সেই সাথে সিএনজি, ট্যাক্সি, স্কুটার কম থাকায় চালকরা স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুন কখনও তিনগুণ ভাড়া আদায় করছে। বাসেও একই অবস্থা। বাসগুলোতে গাদাগাদি করে যেতে হচ্ছে। বিকল্প কোন বাস না থাকায় যাত্রীদের কাছ থেকে ইচ্ছামত অধিক ভাড়া আদায় করছে।
পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পবার সমন্বয়কারী আতিক মোরশেদ, বাংলাদেশ পীস মুভমেন্টের সভাপতি অধ্যাপক কামাল আতাউর রহমান, ডাব্লিউবিবির প্রকল্প কর্মকর্তা মো: আতিকুর রহমান, মাস্তুল ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী আরিফ, অরুণোদয়ের তরুণ দলের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবু, ইয়ুথ সানের সভাপতি মো: মাকিবুল হাসান বাপ্পি, পবার নির্বাহী সদস্য আশরাফ আফরোজ, মো: আকবর, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি আমিনুল হক প্রমুখ।
মানববন্ধন থেকে নিন্মোক্ত দাবীসমূহ জানানো হয় ঃ-
১. পথচারী ও গণপরিবহনকে প্রাধান্য দিয়ে পরিবহন ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে।
২. চাহিদানুযায়ী বড় বড় বাসের ব্যবস্থা করা। বাস রুটে ইজারা প্রদানকৃত বাস কোম্পানীগুলোকে পর্যাপ্ত পরিমাণ বাস চালু রাখতে বাধ্য করা এবং বাস রুটের পুণ:বিন্যাস করে সব এলাকায় যাওয়ার ব্যবস্থা রাখা।
৩. সব সড়কে প্রাইভেটকারের পরিবর্তে গণপরিবহনে চলাচলকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
৪. নিরাপদে ও স্বচ্ছন্দে হেঁটে চলাচলের জন্য সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা।
৫. বাস স্ট্যান্ড ও রেল ষ্টেশনে আসা যাওয়ার জন্য হেঁটে, সাইকেল ও রিক্সায় যাতায়াতের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা।
৬. প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ যেমন পার্কিং চার্জ বৃদ্ধি করা, প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রাইভেটকারে ব্যবহারের জন্য গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা।