শহরের একটি প্রচলিত ধারনা হচ্ছে উচু দালান আর প্রাইভেট কার থাকতেই হবে। এর বিপরীতে যদি এমনটি হয় যে, একুশ শতকের শহরগুলি হবে প্রাইভেট কারমুক্ত যেখানে উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থা থাকবে। মানুষ তার বাসা অথবা কর্মস্থল থেকে পাঁচ মিনিটের হাঁটা দূরত্বে গণপরিবহন পেয়ে যাবে। শহরে পর্যাপ্ত উন্মূক্ত স্থান ও গণপরিসর থাকবে যেখানে সামাজিকীকরণের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। শিশুরা নিরাপদে ও নির্বিঘেœ খেলাধূলা করতে পারবে। এটি কল্পনা নয়। পশ্চিম ইউরোপের অনেক শহর প্রাইভেট কারমুক্ত করা হয়েছে অথবা প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ইটালি, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ড, স্পেন, পর্তূগাল, সুইজারল্যান্ড এর অনেক শহর রয়েছে। বাংলাদেশেও অনেক শহরে প্রাইভেট কার ছাড়াই যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। ঢাকা শহরেও প্রাইভেট কারে মাত্র চার শতাংশ যাতায়াত হয়ে থাকে। ভবিষ্যতে ঢাকার আশেপাশের এলাকা এবং দেশের অন্যান্য ছোট ও মাঝারী শহর উন্নয়নের ক্ষেত্রে যেন প্রাইভেট কার এর প্রয়োজন না পরে সেভাবে গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরী। কারণ প্রাইভেট কারের অধিক্য যানজট, দূষণ, জ্বালানী অপচয়, ভূমির অপচয়, দূর্ঘটনা, স্বাস্থ্যহানি ও নানা সামাজিক সমস্যার জন্ম দেয়।
গত ১৩ আগস্ট ২০১৫ সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিটে ইনিস্টিটিউট অব ওয়েলবিঙ্গ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব প্ল্যাানার্স (বিআইপি), পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সমন্বিত উদ্যোগে ধানমন্ডির ছায়ানট সাংস্কৃতিক সেন্টার এর রামেস চন্দ্র দত্ত স্মৃতি মিলনায়তনে জলবায়ৃ পরিবর্তনের প্রভাব এবং করণীয় বিষয়ে“জোয়েল ক্রফোর্ড” পরিচালিত “ জবপড়াবৎরহম ভৎড়স উরংৎঁঢ়ঃরড়হ” শীর্ষক প্রামাণ্য চিত্রের উদ্বোধনী প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
প্রদর্শনীর পূর্বে সংক্ষিপ্ত আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দেবরা ইফরইমসন, আঞ্চলিক পরিচালক, হেলথ ব্রীজ, কানাডা, আবু নাসের খান, চেয়ারম্যান, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), মিহির বিশ্বাস, বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), খোন্দকার এম আনসার হোসেন, নির্বাহী সদস্য বাংলাদেশ ইনিস্টিটিউট অব প্লাানার্স (বিআইপি)। অনুষ্ঠানটি সঞ্চলনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার মারুফ হোসেন।
বক্তারা বলেন, যান্ত্রিক যানবাহন থেকে নির্গিত ধোয়া আমাদের পরিবেশে কার্বণের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে করে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সে দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থা খুবই শোচনীয়। এখন আমাদের চুপ থাকলে হবে না। সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। তারা বলেন, গাড়িমুক্ত শহর আমাদের স্বপ্ন। এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে অনেকগুলি ধাপ পার হতে হবে। আমরা যদি পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যাই তাহলে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারবো। পশ্চিমা বিশ্বের চেয়ে আমাদের অনেক ভালো জিনিস আছে এগলোকে সামনে রেখে আমাদের এগুতে হবে। যাতায়াত ব্যবস্থার সাথে স্বাস্থ্যেরও সম্পর্ক রয়েছে। কাজেই আমাদের হাঁটা, সাইকেল এর ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। বাজার অর্থনীতিতে অনেক কিছুর চাহিদা তৈরি করলেও সেখান থেকে ভ্রান্ত বিষয়গুলোকে বাদ দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন করতে হবে। আমরা কার ফ্রি জোন তৈরি করতে পারি। এখনই যেমন কার সম্পূর্ণ বন্ধ করা সম্ভব নয় আবার বর্তমানের পরিবহন ব্যবস্থাও কাম্য নয়। কাজেই এখনই সময় আমাদের পাবলিক পরিবহন বৃদ্ধি করে প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণে যেতে হবে। তারা বলেন, আমাদের নগরায়ন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন উপজেলাগুলো শহরগুলোতেও যানজট দেখা দিচ্ছে। শহরে আমরা অপরিকল্পিভাবে কারখানা, বাসা-বাড়ি তৈরি করছি। এতে করে শহরগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে গেছে। আমাদের দেশে অনেক ভালো ভালো পরিকল্পনাবীদ আছেন তাদের নিয়ে পরিবেশ বান্ধব পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।