যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত ঢাকা যানবাহন সমন্বয় বোর্ড কর্তৃক প্রণীত “প্রস্তাবিত খসড়া সড়ক পরিবহন ও চলাচল আইন, ২০১২” এর উপর ওয়েবসাইটে মতামত চেয়ে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল। আইনটি সারাদেশে সড়ক পরিবহন ও চলাচলের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য প্রযোজ্য হবে এবং মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর পরিবর্তে কার্যকর হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং এই আইন চূড়ান্তকরণের পূর্বে দেশের প্রতিটি জেলায় সব শ্রেণীর মানুষের সরাসরি মতামত ও সুপারিশ গ্রহণ করতে হবে। কারণ এখন পর্যন্ত দেশের অধিকাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহারে অভ্যস্ত নয়। প্রস্তাবিত আইনে পথচারী এবং বাই-সাইকেল চলাচলের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা আরোপ করা হয়েছে যা পরিবর্তনের জন্য একটি প্রস্তাবপত্র তুলে ধরা হয়। আজ দুপুর ১২ টায় ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর উদ্যোগে ধানমন্ডিস্থ নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর পরিচালক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম এবং সঞ্চালনা করেন সংগঠনের প্রকল্প সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম সুজন। এতে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দালন (বাপা) এর নির্বাহী সদস্য এবং বাপা যাতায়াত উপ-কমিটির সদস্য সচিব মহিদুল হক খান। সভায় আইনের বিভিন্ন ধারা পরিবর্তনের প্রস্তাব তুলে ধরেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর ন্যাশনাল এডভোকেসী অফিসার মারুফ রহমান। এছাড়া বক্তব্য রাখেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর কর্মসূচি কর্মকর্তা সাবিনা নাঈম, বিআইসিডি’র নির্বাহী পরিচালক নাজমূল হুদা নয়ন, বউকস এর নির্বাহী পরিচালক হাসিনুর রহমান প্রমূখ।
বক্তারা বলেন, হাঁটা ও বাই-সাইকেলে চলাচল কার্বণ নির্গমন-জ্বালানী নির্ভরতা-যাতায়াত খরচ হ্রাস ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে বিধায় মানুষকে উৎসাহ প্রদানের জন্য বাই-সাইকেলকে উক্ত ধারায় উল্লেখিত বিধান এর আওতামুক্ত রাখা প্রয়োজন। কিন্তু প্রস্তাবিত আইনে পথচারী এবং বাই-সাইকেলের উপর অযাচিত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে যান্ত্রিক যানবাহনের প্রাধান্য লক্ষ্য করা গেছে। পথচারী কর্তৃক সড়ক ব্যবহারের সময় সংকেত প্রদানকারী যন্ত্র, বাতি/ল্যাম্প ও রিফ্লেক্টর ব্যবহার, রাস্তায় পথচারী ক্রসিং এর জায়গা না থাকলে পথচারীদের যানবাহনকে রাস্তা ছেড়ে দেওয়াসহ অনেকগুলি ধারা মানুষের হাঁটার ক্ষেত্রে আইনগত বাধা তৈরি করবে। কারণ নগরের রাস্তা কিংবা মহাসড়কে পথচারী ক্রসিং নাই বললেই চলে, এ আইন প্রণীত হলে যানবাহনের চালকরা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে এবং দর্ঘটনা বাড়বে। এমনিতেই বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালনা এবং দূর্ঘটনা নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই পরিবেশবান্ধব, সাশ্রয়ী ও নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করার জন্য প্রস্তাবিত আইনকে সংশোধন করতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, আইনে উল্লেখিত বাই-সাইকেলের রেজিস্ট্রেশন এবং বাইসাইকেল চালকের লাইসেন্স বিধান পরিবর্তন করতে হবে। কারণ, বাই-সাইকেল কার্বণ নির্গমন-জ্বালানী নির্ভরতা-যাতায়াত খরচ হ্রাস ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে বিধায় মানুষকে উৎসাহ প্রদানের জন্য বাই-সাইকেলকে উক্ত ধারায় উল্লেখিত বিধান এর আওতামুক্ত রাখা প্রয়োজন। বাই-সাইকেলের জন্য রেজিস্ট্রেশন ও চালকের লাইসেন্স গ্রহণের বাধ্যবাধকতা বাই-সাইকেলের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করবে। ইউরোপে বাই-সাইকেলের প্রচলন বেশি বিশেষ করে নেদারল্যান্ড, ডেনমার্ক, জার্মানী ইত্যাদি দেশে। নেদারল্যান্ডে বাই-সাইকেলে সারাদেশে ২৭% এবং নগরভিত্তিক যাতায়াত ব্যবস্থায় ৫৯% চলাচল হয়। অথচ সেখানে বাই-সাইকেলের চালকের লাইসেন্সের প্রয়োজন হয় না এবং রেজিস্ট্রেশনের বাধ্যবাধকতা নেই।
আইনটি প্রণয়নের উদ্দেশ্য পথচারীদের অধিকার নিশ্চিত, চালকদের আইন পালণে উৎসাহী করা, পাবলিক পরিবহন ব্যবস্থাকে উৎসাহী ও ব্যক্তিগত পরিবহন নিরুৎসাহিত করা, গাড়ীর বেপরোয়া চলাচল বন্ধ করা, পরিবহন চালনার সাথে জড়িতদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত, সর্বোপরি যাতায়াত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। গাড়ির গতি এবং যান্ত্রিক পরিবহন ব্যবস্থাকে প্রধান্য দিয়ে আইন প্রণয়ন করা হলে জনগণ এ আইনের সুফল পাবে না এবং আইন সংশোধনের লক্ষ্য অর্জন ব্যহত হবে।