চিকিৎসা করাতে গিয়ে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৬.৪ মিলিয়ন মানুষ দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে। যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করছে। রোগ প্রতিরোধ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গঠন জরুরী। ৯ অক্টোবর২০১৫ সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে জাতীয় তামাক মুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের আয়োজিত তামাক নিয়ন্ত্রণ, অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষায় “হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন চাই শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তরা এই দাবী করেন।
তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতি (নাটাব) এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোজাফফর হোসেন পল্টু, প্রত্যাশ মাদক বিরোধী সংগঠনের সেক্রেটারি হেলাল আহমেদ, মানবিকের উপদেষ্টা রফিকুল ইসলাম মিলন,। ইবনুল সাঈদ রানার উপস্থাপনায় সভায় মূল প্রবদ্ধ উপস্থাপন করেন দি ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক সৈয়দ মাহবুবুল আলম।
মূলপ্রবন্ধে সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, রাষ্ট্রীয় হাসপাতালগুলোর বহিবিভাগে ১৩কোটি ৮২ লক্ষ ৮১ হাজার ১১৫ জনকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে। দেশে প্রতিমাসে প্রতিটি পরিবারের আয়ের ৮.৮% চিকিৎসা ব্যয় হচ্ছে। অসুস্থ্যদের ৬০ ভাগ ব্যয় ব্যক্তির পকেট থেকে যায়। চিকিৎসা করাতে গিয়ে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৬.৪মিলিয়ন মানুষ দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে। আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ দেশে প্রায় ২কোটি ১৪ লক্ষ মানুষ ক্যান্সারের ঝুঁকিতে পড়বে। রোগ প্রতিরোধে দিকে গুরুত্ব না দিলে প্রকৃত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন সম্ভব নয়। তামাক নিয়ন্ত্রণের মতো রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার অর্থায়ন ও কারিগরি সহযোগিতা নিশ্চিত করাই হবে হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশনের মূল লক্ষ্য।
মোজাফফর হোসেন পল্টু বলেন, পৃথিবীর উন্নত জাতির অন্যতম শক্তি তাদের স্বাস্থ্য। এই স্বাস্থ্য রক্ষায় রাষ্ট্রের গুরুত্বপূণ ভূমিকা রয়েছে। বর্তমানে দেশে পরিবেশ দূষণ, অস্বাস্থ্যকর খাবার, তামাক ব্যবহার , কায়িক পরিশ্রম কমে যাওয়াতে প্রায় ৯৮.৭% মানুষ একটি অসংক্রামক রোগের (হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়েবেটিস) ঝুঁকি রয়েছে। শুধু চিকিৎসার দিয়ে নয়, এই অবস্থা নিয়ন্ত্রণে রোগ প্রতিরোধের দিকে নজর দিতে হবে।
সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় মানুষের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ অসংক্রামক রোগ। প্রতি বছর এ অঞ্চলে ৭৯ লক্ষ মানুষ অসংক্রামক রোগে মারা যায়। প্রকৃত পক্ষে ৮০% অপরিণত হৃদরোগ, স্ট্রোক ও ডায়াবেটিস এবং ৪০ ভাগ ক্যান্সার প্রতিরোধযোগ্য। কিন্তু বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অনেকটাই চিকিৎসা নির্ভর। রোগ প্রতিরোধের বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না। তামাক ব্যবহার বন্ধ, কায়িক পরিশ্রম বৃদ্ধি, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য অভ্যাস পরিবর্তন করার মাধ্যমেই এই রোগগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এ জন্য আইন ও নীতি প্রনয়ণ, অবকাঠামো তৈরি, মানসম্মত খাদ্য নিশ্চিত, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য নিষিদ্ধ এবং জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন এক্ষেত্রে গুরুত্বপূণ ভূমিকা রাখবে।
হেলাল আহমেদ বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে তামাকজাত দ্রব্যের উপর ১% সারচার্জ আরোপ করে, যা রোগ প্রতিরোধের অর্থায়নে বিশাল সুযোগ। পরিবেশ দূষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর কর আরোপ করা দরকার। এছাড়া কোমল পানীয়, ফাস্টফুড, অন্যান্য অস্বাস্থ্যকর খাবার, প্রাইভেট কার, বোতলজাত পানি, ংঁমধৎ-ংবিবঃবহবফ নবাবৎধমবং উপর কর আরোপ মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধে অর্থ জোগারে সুযোগ রয়েছে। এ অর্থ সরকারী স্বায়ত্বশাসিত হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশনের গঠনের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ব্যয় করতে হবে।
রফিকুল ইসলাম মিলন বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অর্জন রয়েছে। সরকারের এই তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। তবে তামাক কোম্পানীগুলো বিভিন্ন ভাবে রাষ্ট্রের আইন ও নীতি ভঙ্গ করে তামাকজাত দ্রব্রের প্রচারনা চালাচ্ছে। জনস্বাস্থ্যরক্ষায় তামাক কোম্পানীর এই অপপ্রচেষ্টা রুখতে হবে এবং অধিক হারে কর আরোপ করতে হবে।
হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গঠনের দাবীতে ও জাতীয় তামাক মুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এছাড়া সারাদেশ ব্যাপী জোটের বিভিন্ন সংগঠন নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই দিবস উদযাপন করছে।